কিশোরগঞ্জে বোরো আবাদের ধুম

কিশোরগঞ্জে একটি ভূমিদস্যু চক্রের আগ্রাসন থেকে রক্ষা পেল প্রায় দেড়শ’ একর তিন ফসলি জমি ও দুটি গভীর নলকূপসহ কোটি টাকার সেচ প্রকল্প। এ নিয়ে দৈনিক সংবাদে একাধিক সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের পর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বিএডিসি’র কর্মকর্তাগণ এলাকায় গিয়ে সরেজমিন তদন্তশেষে এই অশুভ তৎপরতার বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করাসহ বিভিন্ন দাপ্তরির উদ্যোগ গ্রহণ করেন। শেষ পর্যন্ত অশুভ চক্রটি পিছু হটলে এখন এসব জমিতে চলছে কৃষকদের বোরো আবাদের ধুম। জমিতে নেমেছে কলের লাঙ্গল। বিএডিসির গভীর নলকূপে সেচ দিয়ে এখন পুরো ফসলি মাঠে পাওয়ার টিলার নামিয়ে চলছে আবাদ। চারা রোপণ করা হচ্ছে অনেক জমিতে। এলাকার কৃষকরা শীতের ঠা-া উপেক্ষা করে এখন কোমড় বেঁধে নেমেছেন বোরো আবাদে। আবারো পুরো মাঠ ঢেকে যাবে সবুজে সবুজে। প্রকৃতি উদ্ভাসিত হবে পাকা ধানের শীষের সোনালী আভায়। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার দানাপাটুলি ইউনিয়নের গাগলাইল মাঠে প্রায় ৬০ একর তিন ফসলি জমি খনন করে ফিসারি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল একটি চক্র। এতে যেমন এসব ফসলি জমি চিরতরে বিলীন হয়ে যেত, আবার গাগলাইল মাঠে বিএডিসির প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ভূগর্ভস্থ পাইপলাইনসহ গভীর নলকূপের সেচপ্রকল্প বিনষ্ট হয়ে যেত। ফিসারিটি নির্মিত হলে পার্শ্ববর্তী রহিমপুর মাঠের ১০০ একর তিন ফসলি জমিতে জলবদ্ধতা তৈরি হয়ে সেগুলিও সারা বছর অনাবাদী পড়ে থাকতো। এমনকি রহিমপুর মাঠের বিআরডিবির প্রায় অর্ধকোটি টাকার গভীর নলকূপের সেচ প্রকল্পও বিলীন হয়ে যেত। এ নিয়ে কৃষকসহ এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনা দানা বাঁধতে শুরু করেছিল। বিষয়টি নিয়ে দৈনিক সংবাদে সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম এলাকায় ছুটে যান। সরেজমিন পরিদর্শন করে ঢাকার খামারবড়ির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত প্রতিবেদন পাঠান। বিএডিসির সহকারি প্রকৌশলি আব্দুল গাফফার খানও (ক্ষুদ্রসেচ) এলাকা পরিদর্শন করে উপজেলা সেচ কমিটির কাছে এ সংক্রান্ত লিখিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এমনকি গত ২৮ ডিসেম্বর পল্লী বিদ্যুতের মহাব্যবস্থাপকের কাছে গাগলাইল মাঠের গভীর নলকূপে প্রিপেইড মিটার স্থাপন ও বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের লিখিত আবেদনও জানিয়েছেন। পরদিন ২৯ ডিসেম্বর উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ফরিদুজ্জামান দানাপাটুলি ইউপি চেয়ারম্যানক এক চিঠিতে বিএডিসির সেচ প্রকল্প এলাকায় যেন কেউ পুকুর খনন করতে না পারে, সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন। পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ মিটার ও বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা নিলে এলাকার কৃষকদের মাঝে নেমে আসে স্বস্তি। এখন কৃষকরা কোমর বেঁধে নেমেছেন বোরো আবাদে।গাগলাইল মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, পার্শ্ববর্তী মাথিয়া গ্রামের কৃষক আলী আকবর খোকনের এক একর ৪০ শতাংশ জমিতে কলের লাঙ্গলে চাষ দিয়ে চারা রোপনের কাজ চলছে। দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরিতে ৯ জন শ্রমিক লাগিয়ে জমিতে ব্রিধান-২৯ জাতের চারা রোপন করছেন। তিনি জানান, এই মাঠের কৃষকরা এখানে ফিসারি তৈরির বিরুদ্ধে থাকলেও কতিপয় ব্যক্তি এসব জমি খনন করে ফিসারি নির্মাণের চেষ্টা করছিল। শেষ পর্যন্ত ফিসারি নির্মাণের উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ায় কৃষকরা খুশি। গাগলাইল গ্রামের কৃষক আব্দুল কাইয়ুম জানান, তার জমিতে অনুমতি ছাড়াই ওই চক্রটি এস্কেভেটর লাগিয়ে ফিসারির জন্য মাটি খনন শুরু করে দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ফিসারি নির্মাণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার জমিটি রক্ষা পেয়েছে। এলাকার মুক্তিযোদ্ধা নূরুল হক ভূঁইয়াসহ অরো অনেক কৃষকই ফিসারির হাত থেকে তাদের তিন ফসলি জমিগুলো রক্ষা পাওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।