এগিয়ে যাচ্ছে প্লাস্টিক শিল্প

বাংলাদেশের প্লস্টিক খাত ক্রমে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে ইতোমধ্যে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে এটি। প্লাস্টিক রপ্তানিতে গত অর্থবছরে এসেছে ৭০০ কোটি টাকার বেশি। এমনকি চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের প্রবৃদ্ধিও স্বস্তিদায়ক। উদ্যোক্তারা বলছেন, সরকারের সহযোগিতা পেলে রপ্তানি বাজারকে আরও বিস্তৃত করা সম্ভব।
গবেষক ও বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন আন্তর্জাতিক পোশাক ক্রেতারা কিছু কিছু প্লাস্টিক পণ্যও কিনছেন। তারা যখন পুরোদমে প্লাস্টিক পণ্য কিনবেন, তখন তাদের কাছে কমপ্লায়েন্স ইস্যু বড় হয়ে দাঁড়াবে। তাই এখনই কমপ্লায়েন্স ইস্যুকে সামনে রেখে উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্টদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এ ছাড়াও টেস্টিং ল্যাবরেটরি ও দক্ষ মানবসম্পদ ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন হলে এ খাত আরও গতিশীল হবে বলে মনে করেন এই গবেষকরা। এ ছাড়া যেসব ছোট কারখানা বিদেশি বিনিয়োগ পাচ্ছে না, সেসব প্রতিষ্ঠানের দিকে সরকারের বিশেষ নজর দেয়ার পরামর্শ দেন তারা।
জানা যায়, দেশে ছোট বড় প্রায় পাঁচ হাজারেরও বেশি কারখানা রয়েছে। যার ৬৫ শতাংশ ঢাকার মধ্যে ২০ শতাংশ চট্টগ্রাম, ১০ শতাংশ নারায়ণগঞ্জ ও বাকি পাঁচ শতাংশ অন্য বিভাগে রয়েছে। সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কারখানাগুলোতে ১৫টি ক্যাটাগরিতে পণ্য উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে পোশাক খাতের জন্য পলিব্যাগ, হ্যাঙ্গার, প্লাস্টিক ক্লিপ, বোতাম, খেলনাসামগ্রীর মধ্যে পুতুল, বল, ইয়ো-ইয়ো, ঘরে ব্যবহারের জন্য চেয়ার, টেবিল, ডাইনিং টেবিল, বিভিন্ন ধরনের রেক, ঝুড়ি, বাথটাব, জগ, মগ, ঝুড়ি, অফিসে ব্যবহারের জন্য পেপারওয়েট, স্কেল, টেবিল, বলপেন, ফাইল কভার ইত্যাদি অন্যতম।
কৃষিখাতের জন্য পাইপ, সাইকেলের যন্ত্রাংশের মধ্যে বাম্পার, হাতলের কভার, ব্যাক লাইট, স্পোক লাইট, মাছ ও ডিম রাখার ঝুড়ি, ভিডিও ও অডিও ক্যাসেট, কম্পিউটারের উপকরণসহ বিভিন্ন প্লাস্টিকসামগ্রী তৈরি হচ্ছে।
উৎপাদিত পণ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশ ও এশিয়ার চীন, ভারত, নেপালসহ অন্যান্য দেশে রপ্তানি করছে। বিশ্ববাজারে এসব পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ আয় করেছে বিপুলসংখ্যক বৈদেশিক মুদ্রা।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে অর্থাৎ জুলাই থেকে ডিসেম্বরে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতে ৪৫ দশমিক ০৮ শতাংশ আয় বেড়েছে। এ সময় দেশ থেকে মোট ছয় কোটি ৪৩ লাখ ৩০ হাজার ডলারের প্লাস্টিক রপ্তানি হয়েছে যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৬ শতাংশেরও বেশি।
সূত্র মতে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের এই সময় আয় হয়েছিল চার কোটি ৪৩ লাখ ৪০ হাজার ডলার এবং চলতি অর্থবছরের একই সময়ের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় চার কোটি ৩৮ লাখ ৯০ হাজার ডলার। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয় ছয় কোটি ৪৩ লাখ ৩০ হাজার ডলার।
গত বছর প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতে ভাটা পড়লেও এই বছরের প্রথমার্ধেই আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৫ শতাংশের বেশি আয় হওয়ায় কেটে গেছে শঙ্কা।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্লাস্টিক পণ্য থেকে মোট রপ্তানি আয় আসে আট কোটি ৮৯ লাখ ৯৫ হাজার ডলার, যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরের চেয়ে সাড়ে ১১ শতাংশ কম। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছিল ১০ কোটি ৫ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার।
কয়েকজন উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশেই যদি কাঁচামাল উৎপাদন করা যায়, তবে একদিকে আমদানি ব্যয় হ্রাস পাবে, পাশাপাশি উৎপাদন ব্যয় কমবে। ফলে পরনির্ভরতা কমবে। ফলে রপ্তানির বাজার বিস্তৃত হবে। উপরন্তু কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। জানা যায়, এখন পর্যন্ত এ শিল্পে কর্মসংস্থান হয়েছে ১২ লাখেরও বেশি মানুষের।
জানা যায়, দেশে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার শতকরা ২০ ভাগ বেড়েছে। তবে এতে পরিবেশের প্রভাব শঙ্কা নিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা কৌশলের (ইএমএস) যথাযথ বাস্তবায়ন হলে প্লাস্টিক ক্ষতিকর নয় বরং প্লাস্টিকের কৌশলগত রিসাইক্লিং করতে পারলে বিপুল অর্থ সাশ্রয় হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুধু ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় বর্তমানে প্রতিদিন ১৩০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হচ্ছে এবং এর ৭০ শতাংশ (প্রায় ৯০ টন) রিসাইকেল হয়ে নতুন পণ্য হিসেবে বাজারে ফিরে আসছে। জানা গেছে, পুরনো প্লাস্টিক যেমন, পাইপ, ওয়েস্টেজ প্লাস্টিকসামগ্রী এবং খালি প্লাস্টিকের বোতল রিসাইক্লিং করে পাইপসহ নানা পণ্য তৈরি হচ্ছে এবং প্লাস্টিকের গুঁড়া রপ্তানি করা হচ্ছে বিদেশে। বাংলাদেশ প্যাট ফ্লেকস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএফএমইএ) জানায়, এসব গুঁড়ো প্লাস্টিকের বড় অংশেরই গন্তব্যস্থল চীন। এ ছাড়া আছে কোরিয়া, ভিয়েতনামসহ আরও কয়েকটি দেশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানিকৃত এসব গুঁড়া দিয়ে উন্নতমানের প্লাস্টিকের সুতা তৈরি করা হয়। আর এই প্লাস্টিক গুঁড়া করতে গিয়ে দেশে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট প্রায় দুই হাজার প্রতিষ্ঠান। তবে মাত্র ৫০-৬০টি প্রতিষ্ঠান সরাসরি রপ্তানির সঙ্গে জড়িত।