জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে বনগ্রাম আনন্দকিশোর উচ্চ বিদ্যালয়

একসময় কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম ছিলো বনগ্রাম। এই গ্রামেই ১৯১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো বনগ্রাম আনন্দকিশোর উচ্চ বিদ্যালয়। এলাকার জমিদার ও শিক্ষানুরাগী আনন্দকিশোর রায় বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। তার নামেই বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়। বিদ্যালয়ের ভূমির পরিমাণ প্রায় আট একর। বিদ্যালয়ের আয়ের উত্স হিসেবে রয়েছে চারটি বড় পুকুর এবং একটি মার্কেট। যেখানে বিদ্যালয়ের নামে ১০টি দোকান ভাড়া দেয়া হয়। রয়েছে দুটি বিশাল বড় খেলার মাঠ। এরমধ্যে একটি ছেলেদের এবং একটি মেয়েদের জন্য। সরকারি সাহায্য-সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে বিদ্যালয়ের বর্তমান একাডেমিক ভবন। ২০১৫ সালে প্রাচীন এ বিদ্যাপীঠে কলেজ শাখা খোলার অনুমোদন দেয়া হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ রয়েছে ১২টি, অফিসকক্ষ তিনটি, কম্পিউটার রুম একটি, লাইব্রেরী একটি ও একটি স্টোররুম রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১৪শ’। শিক্ষক রয়েছেন ৩১ জন। তারমধ্যে এমপিওভুক্ত শিক্ষকের সংখ্যা মাত্র নয়জন। বাকি ২২ জন প্যারা-শিক্ষককে বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে বেতন দেয়া হয়। খণ্ডকালীন শিক্ষকরা কেউ কেউ পাঁচ থেকে দশ বছর যাবত্ সামান্য বেতনে পাঠদান করে যাচ্ছেন। চাকরি স্থায়ীকরণ ও এমপিওভুক্তির আশায় তারা দিন গুনছেন। তাছাড়াও রয়েছেন একজন লাইব্রেরিয়ান, একজন অফিস সহকারী ও ছয় জন ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী। রয়েছে পাঁচ হাজার বইসম্বলিত একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার।

ফুটবল খেলায় এ বিদ্যালয়ের ছাত্রদের সুনাম রয়েছে। প্রায় বছরই আন্তঃস্কুল ও মাদ্রাসা ফুটবলে জেলা এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বিদ্যালয়টি। ফুটবল দলের স্বনামধন্য খেলোয়াড় বর্তমানে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের অধিনায়ক মো. আতিকুর রহমান মিশু ২০০৪ সালে এ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছেন। একাত্তর সালে এ বিদ্যালয়ের ৪৪ জন সাবেক ছাত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এদের মধ্যে মো. মঞ্জিল পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন। বিদ্যালয়ের উল্লেখ্যযোগ্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে আছেন: নীরোদ সি চৌধুরী, বিশিষ্ট রাজনীতিক কমরেড অজয় রায়, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. পরিমল চন্দ্র রায়, ড. ক্ষিতীশ চন্দ্র রায়, ড. কেসি রায়, প্রমথ নাথ রায়, সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য মো. সুরুজ মিয়া, মো. মোস্তাফিজুর রহমান চুন্নু মিয়া, মো. আনিসুজ্জামান খান, মেজর(অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন, সাবেক সচিব সৈয়দ জামাল, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অতিরিক্ত ডিআইজি আব্দুল কাহার আকন্দ, রিমোট কন্ট্রোল হেলিকপ্টারের আবিষ্কারক আমেরিকা প্রবাসী বিজ্ঞানি মো. হুমায়ূন কবীর, ব্যারিস্টার তুষার কান্তি সাহা, অধ্যক্ষ বিপ্লব নারায়ণ চৌধুরী, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক মো. বজলুল হাসান চন্দন প্রমুখ।

বিদ্যালয়ের প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন যতীন্দ্র চন্দ্র চক্রবর্তী। বর্তমান প্রধান শিক্ষক এবিএম নূরুল ইসলাম ২৪তম প্রধান শিক্ষক। তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জানান, বিদ্যালয়ের সুনাম ও ঐতিহ্য জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে। ভবিষ্যতেও বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালয়ের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখবে বলে তিনি আশাবাদী। বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি খুরশিদউদ্দিন আহমদ শ্রেণি সংকটের কথা উল্লেখ করে অবিলম্বে বিদ্যালয়ে একটি বহুতল ভবন নির্মাণ, দুই শিফট চালু ও সরকারিকরণের দাবি জানান।