চট্টগ্রামের রাউজানের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে টিফিন বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে গতকাল। কার্যক্রমের উদ্বোধনের পর স্টেশন মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে টিফিন তুলে দেওয়া হয় l প্রথম আলোবিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সাজানো হয়েছে রঙিন বেলুন দিয়ে। শ্রেণিকক্ষ ও ছোট মিলনায়তনটিও বেলুন ও ফুলে শোভিত। মিলনায়তনে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীদের চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক। কারণ এখন থেকে তাদের আর খিদে নিয়ে ক্লাস করতে হবে না। প্রতিদিন মধ্যাহ্ন বিরতিতে তারা পাবে বিনা মূল্যে টিফিন।
গতকাল বুধবার চট্টগ্রামের রাউজান স্টেশন মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় এ চিত্র। গতকাল থেকে রাউজান উপজেলার ১৮২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই টিফিন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রথম পর্যায়ে তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীকে দুপুরে টিফিন দেওয়া হবে। পরে বিদ্যালয়গুলোর প্রায় ৩৩ হাজার শিক্ষার্থীকে এই কার্যক্রমের আওতায় আনা হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মো. মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের সামনে আয়োজিতঅনুষ্ঠানে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এতে প্রধান বক্তা ছিলেন কার্যক্রমের প্রধান পৃষ্ঠপোষক স্থানীয় সাংসদ এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের হাতে মন্ত্রী প্লাস্টিকের বাক্সভর্তি টিফিন তুলে দেন। পরে মন্ত্রীসহ অতিথিরা স্টেশন মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে টিফিন তুলে দেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। সাংসদ যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়বে।’
প্রথম দিন টিফিন হিসেবে শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় একটি করে বনরুটি। টিফিন পেয়ে মহাখুশি স্টেশন মডেল বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আরমান হোসেন বলল, ‘প্রতিদিন ক্লাস শেষ হয় বিকেলে। সে পর্যন্ত না খেয়ে থাকতে হতো। এখন আর সমস্যা হবে না। স্কুলেও আসব প্রতিদিন।’
এ ধরনের উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। পশ্চিম ডাবুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক অর্পিতা দাশ বলেন, ‘অনেক সময় শিক্ষার্থীরা আমাদের বলে “আপা খিদে লাগে”। এখন আর এই সমস্যা হবে না। বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার আরও বাড়বে।’
স্থানীয় সাংসদের উদ্যোগে চালু হওয়া এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। স্থানীয় কিছু বিত্তবান ও প্রতিষ্ঠান এই কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করবে। জানতে চাইলে এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের রাউজানের কিছু বিত্তবান, আমি নিজে এবং বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে টাকা নিয়ে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম চালু করেছি। আশা করি এটি অব্যাহত থাকবে।’
এই কার্যক্রম চালানোর জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। স্কুল ফিডিং কার্যক্রম পরিচালনা কমিটি নামের ওই কমিটির সভাপতি করা হয়েছে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার চৌধুরীকে। সদস্যসচিব করা হয়েছে ইউএনও মো. শামীম হোসেনকে। ইউএনও মো. শামীম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, যেসব ক্লাসের মধ্যাহ্ন বিরতি আছে, প্রথম পর্যায়ে সেসব ক্লাসের ২০ হাজার শিক্ষার্থীকে টিফিন দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে অন্যদেরও এর আওতায় আনা হবে।
মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দপ্তর থেকেও মাসে আড়াই লাখ টাকা করে ওই তহবিলে দেওয়া হবে বলে জানান এহসানুল হায়দার চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এমপি সাহেব বড় বড় শিল্পপতির কাছে সাহায্য চেয়েছেন। তাঁরাও রাজি হয়েছেন। আমিও মন্ত্রণালয়ে লিখেছি। যদি অনুমতি পাই, তাহলে আড়াই লাখ টাকা করে দেব।’
টিফিন হিসেবে কোনো দিন দেওয়া হবে বনরুটি, কোনো দিন থাকবে বিস্কুট। এ ছাড়া অন্যান্য খাবারও দেওয়া হবে। টিফিন পৌঁছানোর জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও পরিচালনা কমিটির সদস্যরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। স্টেশন মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি আ ন ম ওয়াহিদ দুলাল বলেন, ‘এই কার্যক্রম একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। এটি খুব ভালো উদ্যোগ।’
দাশপাড়া অখিল মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আদিত্য দাশের মা চুমকি দাশ বলেন, ‘আমাদের বাচ্চারা দুপুরে স্কুলে খিদেয় কষ্ট পায়। এখন থেকে আর এই সমস্যা থাকবে না। টিফিনের কারণে স্কুলে যেতে তাদের আগ্রহ বাড়বে বলে মনে করি।’
এই কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শেখ আতাহার আলী, বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরের উপপরিচালক মাহবুবুর রহমান বিল্লাহ ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা।