বরেন্দ্র অঞ্চলে ফুল চাষে বিপ্লব ঘটেছে। কৃষকরা ধান, গমের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে গ্লাডিওলাস, চন্দ্রমল্লিকা, জারবেলা, গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্যাদাসহ বিভিন্ন নামীয় ফুল চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। এতে করে এ অঞ্চলে প্রতি বছর ফুল চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফুল চাষিরা জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলে চাষকৃত ফুল রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, বগুড়া, নাটোরের বাজারে বিক্রি ছাড়া জাপানেও যাচ্ছে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কাদিপুর গ্রামের প্রান্তিক চাষি কাইউম আলী তিন বছর ধরে ফুল চাষ করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। চলতি বছর ১ বিঘা জমিতে গ্লাডিওলাস ফুল চাষে খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছে। আরও ১ লাখ ২০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি হবে। ফুল চাষি আব্দুল কাইউম বলেন, ধান, গম, শাক-সবজি চাষ করে খুব একটা লাভবান হতে পারেনি।
স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলামের পরামর্শে রবি ফসল হিসেবে প্রথমে ১৫ কাঠা জমিতে গ্লাডিওলাস, গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা ও রজনীগন্ধা ফুলের চাষ করে। প্রথম বছরে ফুল চাষ করে ৭০ হাজার টাকা লাভ হওয়ায় প্রতি বছর ধান, গমের পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করে আসছে। ফুলের পাইকারিরা জমি থেকেই তার উত্পাদিত ফুল ক্রয় করে নিয়ে যায়। সোনাদীঘি গ্রামের মোশারফ হোসেন ১৫ কাঠা জমিতে ফুল চাষ করে গত বছর ১ লাখ ১০ হাজার লাভ করে। আর বগদামারী গ্রামের সেখ ফরিদ ৫ কাঠা জমিতে ফুল চাষ করে সাফল্য পাওয়ায় আগামী বছর আরও বেশি জমিতে ফুল চাষ করবেন।
বিদিরপুর ব্লকে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, এ অঞ্চলের কৃষকেরা ধান, গম ছাড়া অন্য ফসল চাষে আগ্রহী ছিল না। কিন্তু কিছু আগ্রহী কৃষককে অর্থকরী ফসল চাষের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ফুল চাষের জন্য কয়েকজন চাষিকে যশোরের ঝিকরগাছায় ফুল চাষ পরিদর্শন করানো হয়। এরপর মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা কারিগরি সহায়তায় এ অঞ্চলের কৃষকেরাও ফুলসহ অর্থকরী ফসল চাষ করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন।
উপজেলার বাউটিয়া গ্রামের আফজাল হোসেন কৃষিতে ডিপ্লোমা করার পর সরকারি চাকরি না পেয়ে কৃষি কাজে নেমে পড়েন। চলতি রবি মৌসুমে ১৫ কাঠা জমিতে গ্লাডিওলাস ও জারবেলা ফুলের চাষ করে অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে। আগামী বছর আরও বেশি জমিতে ফুল চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন অর্থকরী ফসল চাষের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন এই কৃষক। বাউটিয়া গ্রামে গত ৩ বছর ধরে জাপানের একটি সংস্থা স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে জারবেলা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা ও দেশি গ্যাদা ফুলের চাষ করছে আধুনিক প্রযুক্তিতে।
বাউটিয়া গ্রামের কৃষক মুখলেসুর রহমান মুকুল বলেন, এই গ্রামে উত্পাদিত ফুল রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাজারে সরবরাহের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণে ফুল জাপানে রপ্তানি হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে গোদাগাড়ী কৃষি কর্মকর্তা তৌফিকুর রহমান বলেন, ফুল চাষের জন্য এ অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া অত্যন্ত উপযোগী। উঁচু জমিতে ফুল চাষ ভালো হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকেরা ফুল চাষে ঝুঁকছে। আগ্রহী কৃষকদের ফুল চাষের উপর প্রশিক্ষণ দিচ্ছে কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর।