জননেত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম ১৬২ মিলিয়ন মানুষের দেশের নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন অত্যন্ত শক্ত হাতে, দৃঢ় ও সতর্ক পদক্ষেপে। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগের কারণে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষার প্রতিটি ক্ষেত্রে কার্যকর মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য পুত্র তথা বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের তত্ত্বাবধানে আইসিটি সেক্টরে অসামান্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ফলে রাজধানী থেকে শুরু করে প্রান্তিক জনপদ পর্যন্ত আইসিটি সেবার আওতাভুক্ত করা হয়েছে। সব মিলে উন্নয়নের প্রশ্নে বাংলাদেশের আর পেছন ফেরার অবকাশ নেই। এখন শুধু সামনে চলা। বাংলাদেশ এখন শুধু সাফল্যের গল্প।
ড. রাশিদ আসকারী
উন্নয়নে দ্রুত, নিশ্চিত ও সফল নেতৃত্বদানের জন্য মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদকে আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি বলা হয়ে থাকে। ঠিক একই কারণে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আধুনিক, দ্রুত উন্নয়নশীল ডিজিটাল বাংলাদেশের স্থপতি বলতে দ্বিধার কোনো অবকাশ থাকার কারণ নেই। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মাহাথির মোহাম্মদ যেমন ১৯৮১ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২২ বছরে তার ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বে বিশ্বকে উপহার দিয়েছেন এক আধুনিক-উন্নয় মালয়েশিয়া_ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাও তেমনি তার তিনবারের প্রধানমন্ত্রিত্ব কৌশল, গতিশীল এবং ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বে মাহাথির মোহাম্মদের চেয়ে কম সময়ে বাংলাদেশকে তুলে নিয়ে চলেছেন এক অভূতপূর্ব উচ্চতায়। মজার ব্যাপার হলো_ সাবেক মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিজেও শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মতৎপরতার ব্যাপারে ওয়াকিবহাল আছেন এবং তার আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের কারণে উন্নত দেশগুলো নানাবিধ চ্যালেঞ্জের মুখেও বাংলাদেশের বিনিয়োগ করে চলেছেন বলে অবহিত করেছেন। মাহাথির আরও সতর্ক করে দিয়েছেন যে বাংলাদেশের একটি বিভ্রান্ত বিপথগামী অংশ সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে, এবং শেখ হাসিনার উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নস্যাৎ করার অপচেষ্টা করছে। বাংলাশের বিপুল জনসংখ্যা এবং অন্যান্য সমস্যা সংকটের কারণে উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন মালয়েশিয়ার তুলনায় অধিকতর চ্যালেঞ্জিং বলে মাহাথির জানিয়েছেন। তা শেখ হাসিনার দৃঢ় সাহসী উন্নয়ন পদক্ষেপ অব্যাহত থাকলে সম্ভব বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
শেখ হাসিনার উন্নয়নের রোড ম্যাপটি আসলে কী? এবং তা বাস্তবায়নে তার সরকারের সাফল্য কতটুকু এসব প্রশ্ন এখন দেশ-বিদেশে ঘুরপাক খাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অতিস্তাবকদের উচ্চশিত স্তাবকতার উষ্ণতা পোহাবার যেমন সুযোগ নেই, তেমনি আবার ঈর্ষাকাতর নিন্দুক এবং বিলাসী সমালোচকদের প্রচারণায় বিচলিত হওয়ারও কোনো কারণ নেই। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে উন্নীত করার যে রূপকল্প শেখ হাসিনার সরকার গ্রহণ করেছে তা বাস্তবায়নের পথে যে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে এবং সে অগ্রযাত্রা যে দৃশ্যমান এবং স্পর্শযোগ্য তা বোধকরি সরকারের চরম নিন্দুকেরাও অস্বীকার করতে পারবে না।
শেখ হাসিনা মাহাথিরের মতো এখনো ২২ বছর প্রধানমন্ত্রিত্ব করেননি। প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মের দশ বছর এবং তৃতীয় টার্মের তিন বছর সব মিলে একযুগ এর বেশি তার প্রধানমন্ত্রিত্বের কাল তাও আবার নিরবচ্ছিন্নভাবে নয়। ১৯৯৬-২০০১-এর অর্জন এবং উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো সরকার বদলের কারণে ধারাবাহিকতা এবং কাঙ্ক্ষিত পরিণতি পায়নি। শেখ হাসিনার সরকারের সুপরিকল্পিত, সুসমন্বিত এবং ধারাবাহিক উন্নয়ন কর্মসূচিগুলো মূলত শুরু হয় ২০০৯ সাল থেকে। এর মধ্যে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা এসেছে। দেশে নৈরাজ্য, অরাজকতা, অগি্নসন্ত্রাস, জঙ্গিবাদী তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করা হয়েছে। বিদেশিদের হত্যা করে বিনিয়োগের রাস্তা বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানানোর পাঁয়তারা করা হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মসূচি এবং তার বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা এক মুহূর্তের জন্যও থমকে থাকেনি। আর তাই বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য হিসেবে গণ্য করা বিধেয় হবে_ বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা। আর যে কোনো উন্নয়নের ক্ষেত্রে সেটাই বড় কথা। উন্নয়ন বলতে বোঝানো উচিত টেকসই উন্নয়ন।
২০০৯ থেকে বর্তমান পর্যন্ত শেখ হাসিনার সরকারের সফলতম পদক্ষেপগুলোর মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারটিকে আমি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে চাই। একাত্তরে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ কিংবা মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রত্যক্ষ শিকার যারা হয়েছেন কেবল তারাই সম্যক উপলব্ধি করতে পেরেছেন_ এ বিচার এবং বিচারের রায় কার্যকর হওয়া তাদের জন্য কতটুকু কাঙ্ক্ষিত ছিল আর মুক্তিযুদ্ধপন্থী সবার জন্য জাতীয় কলঙ্ক/দায় মোচনের এই আয়োজন ছিল স্বস্তিদায়ক। মানবতাবিরোধীদের বিচারের এই আয়োজন অব্যাহত থাকুক এটা সবারই প্রত্যাশা।
সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ধর্মীয়, অগ্রবাদ, প্রভৃতি অমানবিক সামাজিক ব্যাধি মোকাবেলায় সরকারের সাহসী পদক্ষেপ প্রশংসার দাবিদার। যে দক্ষতা ও ক্ষিপ্রতায় গুলশান হলি আর্টিজান এবং শোলাকিয়া ঈদগাহ জঙ্গিদের দমন করা হয়েছে, সংগঠিত নাশকতা-পরিকল্পনাকারী জঙ্গিদের দমন করা হয়েছে, জঙ্গিবাদের সহিংস পথ পরিহার করে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ফিরে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে, সর্বোপরি জঙ্গিবাদী মানস সৃষ্টির সম্ভাবনা বন্ধ করার জন্য সামাজিক সাংস্কতিক আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়।
তারপরও বিচ্ছিন্নভাবে সংঘটিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে একটি সার্বিক অসাম্প্রদায়িক বাতাবরণ সৃষ্টির জন্য আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
হাসিনা সরকারের সাফল্য মুকুটের একটি বড় পালক হলো নারীর ক্ষমতায়ন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশি নারীর ক্ষমতায়নের এমন দৃষ্টান্ত আর খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। নোবেল বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তার নিজের দেশ ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের এই চিত্র দেখে গভীর সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। একটি সম্পূর্ণ পুরুষতান্ত্রিক সমাজ হওয়া সত্ত্বেও, সমাজে ধর্মান্ধতা, কূপম-ূকতা কুসংস্কার থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের নারীরা যে শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং আর্তনির্ভরশীলতার পথ ধরে ক্রমাগত ক্ষমতায়িত হচ্ছে তাতে সরকারের ভূমিকাও কম নয়।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে জিডিপি গ্রোথ দাঁড়িয়েছে ৭.২ শতাংশ যা কিনা চলতি বছরেই ৭.৫ শতাংশে স্থিরকৃত করা হয়েছে। এই প্রত্যয়ে যে বৃদ্ধির এই মাত্রা অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যে মাথাপিছু আয় ১৪৬৬ ইউএস ডলারে উন্নীত হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার অনুসঙ্গী হিসেবে ২০১৬ সালের জুনেই বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আর এসব গবেষণা পরিসংখ্যানের দিকেই বা তাকাতে হবে কেন। সাদা চোখে তাকালেও গ্রামে-গঞ্জে পাড়ায়-মহল্লায় যখন ইঞ্জিনচালিত রিকশা কিংবা ভ্যানের বহর দৃশ্যমান হয়, তখন দেশের অর্থনীতির গতি অাঁচ করতে খুব একটা অসুবিধা হয় না। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা দায়িত্ব গ্রহণের সময় যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল মাত্র ৪.৯৪২ মেগাওয়াট এবং প্রকৃত বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৩২৬৮ মেগাওয়াট, তা বর্তমানে ১৪.৫৩৯ মেগাওয়াট উন্নীত হয়েছে। এবং দেশের প্রায় ৭৬ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। শুধু তাই নয়_ সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ২৪,০০০ মেগাওয়াট এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা অর্জনের মধ দিয়ে দেশকে বিদ্যুৎ স্বাবলম্বী করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে।
উন্নয়নের প্রশ্নে শেখ হাসিনা নিজেকে স্বপ্নের চেয়ে বড় প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। বাংলাদেশের দীর্ঘ ললিত স্বপ্ন পদ্মা বহুমুখী সেতু এখন মূর্তিমান বাস্তবতা। প্রমত্তা পদ্মাকে সেতুবন্ধনে আবদ্ধ করার মাধ্যমে একদিকে যেমন রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার কানেকটিভিটি সৃষ্টি করার, অন্যদিকে তেমনি দেশের জিডিপি গ্রোথ বছরপ্রতি ১.২% বাড়াতে সাহায্য করবে। দেশের বৃহত্তম এই ভৌত অবকাঠামো আমাদের আত্মনির্ভরশীলতা ও আভিজাত্যের প্রতীকে পরিণত হবে। আর এই অর্থনির্ভরতা একজন স্বপ্নময় প্রধানমন্ত্রীর একটি বৃহৎ স্বপ্নের বাস্তবায়ন। তারা সরকারের সাফল্য সৌধের বৃহত্তর স্তম্ভ।
জননেত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম ১৬২ মিলিয়ন মানুষের দেশের নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন অত্যন্ত শক্ত হাতে, দৃঢ় ও সতর্ক পদক্ষেপে। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগের কারণে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষার প্রতিটি ক্ষেত্রে কার্যকর মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য পুত্র তথা বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের তত্ত্বাবধানে আইসিটি সেক্টরে অসামান্য সাফল্য অর্জিত হয়েছে। ফলে রাজধানী থেকে শুরু করে প্রান্তিক জনপদ পর্যন্ত আইসিটি সেবার আওতাভুক্ত করা হয়েছে। সব মিলে উন্নয়নের প্রশ্নে বাংলাদেশের আর পেছন ফেরার অবকাশ নেই। এখন শুধু সামনে চলা। বাংলাদেশ এখন শুধু সাফল্যের গল্প।
ড. রাশিদ আসকারী: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক। উপাচার্য ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া