শিক্ষার্থীর উপস্থিতির বার্তা যাবে অভিভাবকের কাছে

বায়োমেট্রিক যন্ত্রে আঙুলের ছাপ দিচ্ছে এক শিক্ষার্থী। উপজেলার এম এ কাশেম রাজা উচ্চবিদ্যালয় থেকে গত বুধবার ছবিটি তোলা l প্রথম আলোচট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের তিন বিদ্যালয়ে বদলে যাচ্ছে শিক্ষার্থী উপস্থিতি গণনাপদ্ধতি। এখন খাতা-কলমের পরিবর্তে বায়োমেট্রিক যন্ত্রে আঙুলের ছাপে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি গ্রহণ করা হবে। ডিজিটাল এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের প্রবেশ ও বের হওয়ার মুহূর্তে খুদে বার্তা চলে যাবে অভিভাবকদের কাছে। এর ফলে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা কমবে। পাশাপাশি জানা যাবে শিক্ষার্থীদের দৈনিক ও সারা বছরের গড় উপস্থিতি।

উপজেলার কুমিরা আবাসিক বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শীতলপুর উচ্চবিদ্যালয় ও এম এ কাসেম রাজা উচ্চবিদ্যালয়ে এই ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য নতুন বছরের শুরুতে বিদ্যালয়গুলোতে বায়োমেট্রিক যন্ত্রও স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের ডেটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। এটি শেষ হলেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে উপস্থিতি গণনা শুরু হবে বলে বিদ্যালয়গুলোর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, এই পদ্ধতি ব্যবহারে শ্রেণিশিক্ষকের কাজ কমে যাবে। শিক্ষার্থীদের হাজিরা ডাকতে (রোল কল) হবে না। তাই শ্রেণিতে প্রথম পিরিয়ডে পাঠের কার্যক্রমের সময় বেড়ে যাবে।

আবদুল্লাহ আল মামুন আরও বলেন, এতে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়বে। এ ছাড়া কোনো শিক্ষার্থী ১০ দিন অনুপস্থিত থাকলে তা সফটওয়্যারের মাধ্যমে খুব সহজেই শনাক্ত করা যাবে। এরপর অভিভাবকদেরও খুদে বার্তার মাধ্যমে তা জানিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। এতে অভিভাবকেরা সন্তানের প্রতি আরও সতর্ক দৃষ্টি দিতে পারবেন। এ ছাড়া উপবৃত্তির জন্য প্রয়োজনীয় উপস্থিতিও বের করা সহজ হবে, যা খাতা দেখে বের করা কঠিন ও সময়সাপেক্ষ।

শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, বায়োমেট্রিক ডিভাইস স্থাপনে বিদ্যালয় থেকে ব্যয় করতে হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। প্রতি শিক্ষার্থীর অভিভাবককে দৈনিক দুটি করে খুদে বার্তা পাঠানো হবে। মাসিক গড়ে ২০ দিন শ্রেণির কার্যক্রম হলে তাতে খুদে বার্তাসহ খরচ পড়বে ১৫ থেকে ২০ টাকা। এই টাকা কারা বহন করবে, জানতে চাইলে আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতনের সঙ্গে আরও ১৫ টাকা বেশি দিতে হবে। অথবা ভর্তি ফির সঙ্গে ১৮০ টাকা বেশি দিতে হবে। সুবিধার কথা বিবেচনা করলে এ টাকা বেশি নয় বলে দাবি করেন তিনি। তবে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের এ খরচ দিতে হবে না। বিষয়টি ব্যবস্থাপনা কমিটিকে বৈঠকের মাধ্যমে জানানো হবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, এম এ কাসেম রাজা উচ্চবিদ্যালয়ে দুটি যন্ত্র (ডিভাইস) বসানো হয়েছে। নিচতলায় বারান্দায় বসানো ডিভাইসে ছাত্রীদের ও দ্বিতীয় তলার ডিভাইসে ছাত্রদের উপস্থিতি নেওয়া হবে। এ ছাড়া শীতলপুর উচ্চবিদ্যালয়ের নিচতলার শ্রেণিকক্ষের ভেতরে একটি ও কুমিরা আবাসিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের বারান্দায় একটি ডিভাইস বসানো হয়েছে।

কুমিরা আবাসিক বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী নাহিমা আক্তার, এম এ কাসেম রাজা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী খাদিজা আক্তার, শীতলপুর উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ইশতিয়াক হোসাইন রাফি বলে, শিক্ষকদের কাছে তারা শুনেছে, হাতের আঙুল ব্যবহার করে উপস্থিতি নেওয়া হবে।

গত বুধবার এম কাসেম রাজা উচ্চবিদ্যালয়ে কথা হয় বায়োমেট্রিক ডিভাইস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান জেএসএফবিডি সফটওয়্যার ফার্মের প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, তিনটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাঁদের প্রাথমিকভাবে এক বছরের চুক্তি হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী এক বছর ধরে ডিভাইসগুলো দেখভাল করবেন তারা।