সরিষায় তেলের সঙ্গে আসছে মধুও

হেমন্ত ও শীত ঋতুতে আমাদের দেশের মাঠে মাঠে সরিষা চাষ হয়। সরিষা ফুলের হলুদ শোভার দৃশ্য পথচারীদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে। দৃষ্টির সীমানাজুড়ে দূরদিগন্ত যেন সরষে ফুলের হলুদ রঙে অপরূপ হয়ে সাজে। এসব মাঠে দিনভর চলে মৌমাছির ভোঁ ভোঁ শব্দে ওড়াউড়ি। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মধু আহরণের হিড়িক। সরিষা চাষে একদিকে তেল আসছে; অন্যদিকে বাক্সবন্দি মৌচাকের মাধ্যমে তুলে আনা হচ্ছে মানসম্মত মধুও। এতে লাভবান হচ্ছেন এ অঞ্চলের সাধারণ কৃষক আর মৌচাষিরা। সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর, বড়বাড়ী, কুলাঘাট; আদিতমারী উপজেলার ভাদাই; হাতীবান্ধা উপজেলার হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী ও পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে শোভা পাচ্ছে সরিষা ক্ষেত।
এসব মাঠে চলছে ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছির ব্যাপক আনাগোনা। ওরা ফুলে ফুলে বসে মধু সঞ্চয় করে। দিনাজপুর থেকে আসা মৌচাষি আনোয়ার হোসেন ও ফনি ভূষণ রায় জানান, সারা দিন মৌমাছি সরষে ফুলে পরাগায়ণ ঘটায় এবং মধু সংগ্রহ করে। এরা সাধারণত দেড় থেকে ৩ কিলোমিটার দূরের মধু সংগ্রহ করতে পারে। ১ সপ্তাহ পরই প্রতিটি বাক্সে এসব চাক থেকে বিশেষ পদ্ধতিতে বের করা হচ্ছে দেড় থেকে ২ কেজি পর্যন্ত খাঁটি ও স্বাস্থ্যকর মধু। মাঠে বসেই এ মধু বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে। জানুয়ারি মাসজুড়ে চলবে সরষে ক্ষেতে মধু আহরণ। তবে সরষে ফুল শেষ হওয়ার পর ফেব্রুয়ারি মাসে তিল ও জিরা ক্ষেত এবং মার্চের পর লিচুর মুকুল থেকে মধু সংগ্রহের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। মৌচাষিরা জানান, সরকারি সহযোগিতা পেলে মধু সংগ্রহের মাধ্যমে এ অঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব।
চলতি মৌসুমে লালমনিরহাট জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি সরিষার আবাদ হয়েছে। ফলে এ অঞ্চলের কৃষক তেলের চাহিদা মিটিয়ে অর্থনৈতিকভাব লাভবান হবেন বলে জানিয়েছেন। তারা জানান, সরিষা ওঠার পর ওই জমিতে বোরো চাষ করা যাবে। বোরো কাটার পর পাট বা আউশ ধানও চাষ করা যাবে। একই জমিতে বছরে তিনটি ফসল ফলবে। এ কারণে কৃষকের মধ্যে সরিষা চাষে আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলেছে। তারা আরও জানান, সরিষা চাষে খরচ কম; সময়ও লাগে কম। এছাড়া সরিষা তুলে সহজেই ধান চাষ করা যায়। তেলের দাম বেশি হওয়ায় কৃষক ফের সরিষা চাষে ঝুঁকছেন।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ জেলায় এবার সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, কয়েক বছর ধরে এ অঞ্চলে সরিষা চাষ বেড়েছে। এ বছর জেলায় ১ হাজার ৭৬৫ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। আর এ থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ৯২৬ টন। লালমনিরহাটের বড়বাড়ী ও কুলাঘাট সড়কের দুইপাশে বিস্তীর্ণ জনপদজুড়ে শুধু হলুদের সমারোহ পথচারীদের আকৃষ্ট করে তোলে। এ বিষয়ে লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বিধু ভূষণ রায় জানান, আমন ধান কাটার পর মাঠ ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় একটি তাগিদ থেকেই সরিষা চাষ করেন কৃষক। সরিষা তুলে আবার বোরো ধান আবাদ করা যায়। এছাড়া মাত্র ৭০ থেকে ৮০ দিনেই সরিষা চাষ হয়। আবার বাজারে তেলের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা মেটানোর জন্যই কৃষক সরিষা চাষে ঝুঁকছেন।