বিচ কার্নিভাল উত্সবে মেতেছে কুয়াকাটা

কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়। কিন্তু প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাবে এই কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে এখনও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠেনি। তাই এই সৈকতকে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড কক্সবাজারের মতো কুয়াকাটায় তিন দিনব্যাপী মেগা বিচ কার্নিভালের আয়োজন করেছে। পর্যটকদের উপস্থিতি তেমন না থাকলেও কার্নিভালের উত্সবে মেতেছে কুয়াকাটাবাসী।

১৮ কিমি দীর্ঘ এই সমুদ্রসৈকতে রাতের আঁধার চিরে বেরিয়ে আসা নতুনের বার্তা বাহক সূর্যের আগমন এবং দিন শেষে তার সমুদ্রের বক্ষে হারিয়ে যাওয়া পর্যটকদের মুগ্ধ করে। এবার বিচ কার্নিভালের পর পর্যটকরা বেশি বেশি এই মুগ্ধতা উপভোগ করতে আসবেন বলে মনে করছেন এখানকার সাধারণ মানুষ। কিন্তু বিচ কার্নিভাল যেভাবে হওয়ার কথা, সেভাবে হচ্ছে না। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছাড়া আর তেমন কিছুই নেই এই কার্নিভালে। সূচিতে অনেক কিছু থাকলেও তার দেখা মিলছে না। এই নিয়ে কিছুটা ক্ষোভ স্থানীয়দের মধ্যে থাকলেও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তারা বেশ খুশি।

গত দুই দিনে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সমুদ্রসৈকত ফাঁকা থাকলেও বিকেল থেকেই সৈকতের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-মঞ্চের সামনে আসছেন হাজারো মানুষ। এই মানুষগুলোর মধ্যে অর্ধেকই নারী। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে জীবন ধারণ করা এই অঞ্চলের মানুষগুলোর কাছে এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল অনেক আনন্দদায়ক। ব্যান্ডদল এলআরবি, ফোক সংগীত শিল্পী ডলি সায়ন্তনী, গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীরসহ অনেক শিল্পী এখানে এসেছেন। তারা গত দুই দিন সংগীত পরিবেশন করেছেন। এই সংগীত অনুষ্ঠান চলে অনেক রাত পর্যন্ত। পটুয়াখালী জেলা ছাড়াও আশপাশের এবং বরিশাল থেকেও অনেকে এসেছেন এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করতে। মেগা বিচ কার্নিভালের প্রথম দিনে গত শনিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং বিমানমন্ত্রী ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননও অনেক রাত পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

গতকাল সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করতে আসা নসিমন বেগমের সঙ্গে কথা হয়। ৬০ বছরের এই নারী জানালেন, জীবনে কখনও এত বড় অনুষ্ঠান দেখেননি। বাড়ির সবাইকে নিয়েই তিনি এসেছেন। বাউল গান নসিমনের কাছে খুব ভালো লেগেছে। গানের সঙ্গে ছেলে-মেয়েদের নৃত্য পরিবেশনও তার কাছে ভালো লেগেছে বলে এই প্রতিবেদককে জানান।

কুয়াকাটা পৌরসভা চেয়ারম্যান আবদুল বারেক সরকার বিচ কার্নিভাল বিষয়ে গতকাল সকালের খবরকে বলেন, বিচ কার্নিভাল হওয়ায় আমরা খুবই খুশি। সাধারণ মানুষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করছে। পুরো কুয়াকাটার মানুষ এখানে আসছে। কিন্তু আমরা চাই পর্যটক আসুক। সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিলে এখানে পর্যটক বাড়বে এবং এই এলাকার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবে।

কুয়াকাটা বিচ কার্নিভালে প্রধান অনুষঙ্গ এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বেশিরভাগ জুড়েই থাকছে স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনা। রাজশাহীর গম্ভীরা থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম অঞ্চলের গানও পরিবেশন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে পুরো বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রথম দিনের চেয়ে গতকাল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মানুষের উপস্থিতি ছিল বেশি। গতকাল কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে উপস্থিত হাজার হাজার মানুষকে গানে মাতিয়ে তোলেন গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর ও ফোক সংগীত শিল্পী ডলি সায়ন্তনী। আজ শেষ দিনেও থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।