সরকার শিল্প-কারখানার উৎপাদনে ব্যবহূত কেমিক্যাল বা রাসায়নিক পদার্থের জন্য একটি কেমিক্যাল শিল্পনগরী গড়ে তুলতে যাচ্ছে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য এরই মধ্যে এ বিষয়ে জমি অধিগ্রহণসহ প্রাথমিক কিছু কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। গতকাল ঢাকা জেলা প্রশাসন আয়োজিত ‘উন্নয়ন মেলা ২০১৭’-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ তথ্য জানান শিল্পমন্ত্রী।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এবারের উন্নয়ন মেলা আয়োজন করা হয়। মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা জেলা প্রশাসক মো. সালাহ্ উদ্দিন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনসহ ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক। তিন দিনব্যাপী আয়োজিত এবারের মেলায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, আনসার, আধা সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মোট ৮০টি স্টল স্থান পেয়েছে। এসব স্টলে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন কার্যক্রম, জনকল্যাণে বর্তমান সরকারের আমলে বাস্তবায়িত কর্মসূচি, উন্নয়নচিত্র ও সরকারি বিভিন্ন ধরনের সেবা তুলে ধরেন অংশগ্রহণকারীরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, এরই মধ্যে শিল্পনগরীর জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কেমিক্যাল কারখানাগুলো নতুন শিল্পনগরীতে স্থানান্তর করা হবে। এছাড়া ধোলাইখালের হালকা প্রকৌশল, প্রিন্টিং, প্লাস্টিক ও অটোমোবাইল শিল্প খাতের জন্যও পৃথক আরেকটি শিল্পনগরী গড়ে তুলতে যাচ্ছে সরকার।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। গত কয়েক বছরে অভ্যন্তরীণ অপরাজনীতি মোকাবেলা করে আর্থসামাজিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে বিস্ময়কর সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এর স্বীকৃতি হিসেবে এরই মধ্যে ২৭টি আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্তমানে দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৭০ মার্কিন ডলার। একই সঙ্গে ২৯ বিলিয়ন (২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার অতিক্রম করে গেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ।
আমির হোসেন আমু বলেন, পরিকল্পিত শিল্পায়নের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনের পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে জাতীয় আয়ে শিল্প খাতের অবদান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৪২ শতাংশে। জ্ঞানভিত্তিক শিল্পায়নের অভিযাত্রা গতিশীল করার জন্য বর্তমান সরকার জাতীয় শিল্পনীতি-২০১০ ও জাতীয় শিল্পনীতি-২০১৬ প্রণয়ন করেছে। পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের সুবিধার্থে শিল্প প্লট বরাদ্দ নীতিমালা-২০১০, রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার প্রদান নির্দেশনাবলি-২০১৩, ভৌগোলিক নির্দেশক আইন-২০১৩, শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড শিপ রিসাইক্লিং রুলস-২০১১ ও জাতীয় লবণনীতি-২০১১ প্রণয়ন করেছে সরকার। রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোকে লাভের ধারায় ফিরিয়ে আনতে সুগার বিট থেকে চিনি এবং উপজাত থেকে বায়োগ্যাস ও জৈবসার উৎপাদন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
শিল্পমন্ত্রী আরো বলেন, বর্তমান সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ ও নীতিসহায়তার কারণে জনগণের খাদ্যনিরাপত্তা অনেকখানি জোরদার করা সম্ভব হয়েছে। ২০১৪-১৫ সালে হরতাল ও অবরোধের নামে বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াও সত্ত্বেও কৃষক পর্যায়ে নিরবচ্ছিন্ন সার সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। ফলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে খাদ্য রফতানি করছে বাংলাদেশ।
বক্তব্যে সরকারের উন্নয়ন রোডম্যাপ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবার সহায়তা কামনা করেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।