ব্যবহারিক ক্লাসে তিন হাজার দুইশ’ শিক্ষার্থীনূর মোহাম্মদ, কিশোরগঞ্জ: ক্রিকেটে নয়, অস্ট্রেলিয়ার দখলে থাকা অন্য এক ‘বিশ্ব রেকর্ড’ নিজের দখলে নেওয়ার পথে বাংলাদেশ! একই শ্রেণিকক্ষে একসঙ্গে তিন হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীকে বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারিক ক্লাস করানোয় লাল-সবুজের বাংলাদেশের নাম উঠছে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে! আর এমন কীর্তি গড়ল কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর।
গতকাল কুলিয়ারচর উপজেলা সদরের থানা মাঠে একসঙ্গে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের তিন হাজার দুইশ’ শিক্ষার্থীকে বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারিক ক্লাস করানো হয়। পুরো ক্লাস পরিচালনা করেন, জনপ্রিয় লেখক এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। ক্লাস শুরু হয় দুপুর ১২টায়। দেড়ঘণ্টা শিক্ষার্থীরা মন্ত্রের মতো শোনেন এ কিংবদন্তি লেখকের বক্তৃতা। তার কাছ থেকে তারা শিখে নেয়, কীভাবে চুম্বক তৈরি করতে হয়, এর সাহায্যে কীভাবে কাঁটা-কম্পাস বানাতে হয়। তারা জানতে পারে ই-মেইল পাঠানোসহ আধুনিক সব তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের নানা দিক।
গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে অন্তর্ভুক্ত হতে কুলিয়ারচর উপজেলা প্রশাসন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এখন পর্যন্ত স্কুল পর্যায়ে বিজ্ঞান বিষয়ক বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্যবহারিক ক্লাস আয়োজনের কৃতিত্ব অস্ট্রেলিয়ার। গত বছরের ১৬ আগস্ট দেশটির জাতীয় বিজ্ঞান সপ্তাহ উপলক্ষে কুইন্সল্যান্ডে ২ হাজার ৯০০ ছাত্র-ছাত্রীর জন্য বিজ্ঞান বিষয়ক ব্যবহারিক ক্লাসের আয়োজন করে তারা এ রেকর্ড নিজেদের করে নেয়। এবার অস্ট্রেলিয়ার
পরিবর্তে নতুন রেকর্ডের অধিকারী হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ব্যবহা?রিক ক্লা?সে একই সঙ্গে বি?শ্বের সব?চে?য়ে ছোট সনদপত্র তৈ?রির রেকর্ড করা হয়। ক্লা?সে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী?দের এসব সনদপত্র দেওয়া হয়।
সুশৃঙ্খল এ অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ’ শিক্ষার্থী, কুলিয়ারচর উপজেলার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক ও স্থানীয় স্কাউটের সদস্যরা।
এ উপলক্ষে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক আজিমুদ্দিন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বিশেষ অতিথি ছিলেন ভৈরব-কুলিয়ারচর আসনের সাংসদ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট কাউন্সিলের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। ক্লাস শুরুর আগে স্বাগত বক্তৃতা করেন কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ড. উর্মি বিনতে সালাম। বক্তৃতা করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক, কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তি) গোলাম মো. ভূইয়া, কুলিয়ারচর পৌরসভার মেয়র ইমতিয়াজ বিন মুসা জিসান, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. জিল্লুর রহমান প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, কিছুদিন আগে আমরা ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছি। আমরা ক্রিকেটে বিশ্ব জয় করেছি এখন তথ্যপ্রযুক্তিতে বিশ্ব জয় করব। আর এ বিশ্ব জয়ে তোমরাই হবে অগ্রগামী।
তিনি আরও বলেন, জ্ঞানভিত্তিক একটি সমাজ গড়তে হলে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রজন্ম গড়ে তুলতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তিতে প্রশিক্ষিত জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। আর এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শে আইসিটি শিক্ষাকে ক্লাস সিক্স থেকে একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পরে বিজ্ঞান ক্লাসে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা।