আলোকিত মানুষ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে যে প্রতিষ্ঠানটি আজ থেকে শতবর্ষ আগে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল সেই প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে আজকের রংপুর উচ্চ বিদ্যালয়।
মাত্র ছয়জন শিক্ষক ও ১’শ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হয়েছিল বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। বর্তমানে জায়গা বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে এর ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মচারী। এখন বিদ্যালয়ে আছেন ১৭ জন শিক্ষক, ৪’শ ৭৫ জন শিক্ষার্থী ও আটজন কর্মচারী। বিদ্যালয়ে চালু আছে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা (বাণিজ্য) ও মানবিক বিভাগ। বিদ্যালয়ে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগারে বই রয়েছে ৫ হাজার। স্বল্প পরিসরে রয়েছে খেলার মাঠ। বিদ্যালয়ে রয়েছে আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম।
সূত্রমতে, তত্কালীন জমিদার মনিন্দ্র চন্দ্র নন্দি ভুব বাহাদুর রংপুরে বেশকিছু জনহিতকর কাজ করেন। তারই অংশ হিসেবে এ অঞ্চলের ছেলে-মেয়েদের মাঝে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে উদ্যোগ নেন। ১৯১৩ সালের ২০ জানুয়ারি তত্কালীন জমিদার মনিন্দ্র চন্দ্র নন্দি ভুব বাহাদুর মিডিয়াম রংপুর মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত টাউন হল ও ঐতিহাসিক পাবলিক লাইব্রেরির কোল ঘেঁষে মাত্র ৮৭ শতক জায়গার উপর ইংরেজি স্কুল হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯১৫ সালের ১ জানুয়ারি উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে ইংরেজি স্কুল হিসেবে যাত্রা শুরু হয়। সে সময় প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রদের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ানো হতো। সেই থেকে শুরু হয় রংপুরে শিক্ষার এক নতুন দিগন্ত। এরপর ১৯৫২ সালে তত্কালীন সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় আরোপিত কারিকুলাম অনুযায়ী বিদ্যালয়টিকে জুনিয়র হাই স্কুলে রূপান্তর করা হয়। ১৯৬১ সালে বিদ্যালয়টিকে রূপান্তরিত করা হয় উচ্চ বিদ্যালয়ে। সে সময় প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন আব্দুল তোয়াব।
এই বিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা খ্যাতির শীর্ষে রয়েছেন তাদের মধ্যে আছেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, সাবেক সেনাপ্রধান মোস্তাফিজুর রহমান, স্থানীয় সরকার বিভাগের সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শাইক ইমতিয়াজ, রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. ইকবাল শাহ রুমি, রংপুর মহানগর মেট্রো পলিটন চেম্বারের সভাপতি রেজাউল ইসলাম মিলন, রংপুর চেম্বারের সাবেক সভাপতি শাহ নেওয়াজ বাবলু, মুক্তিযোদ্ধা অপিল আহমেদ, সংগীত শিল্পী মাহমুদুজ্জামান বাবু, সাংবাদিক জাভেদ ইকবাল, নজরুল মৃধা প্রমুখ।
২০১৪ সালে রংপুর উচ্চ বিদ্যালয় শতবর্ষে পা রেখেছে। ওই বছরের ৮ মে শতবর্ষ উদযাপনের লোগো উন্মোচন করেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা। ১ একর ৮০ শতক বিদ্যালয়ের নিজস্ব জায়গায় গড়ে উঠেছে একটি একাডেমিক ভবন এবং পুরাতন ভবনের সঙ্গে সম্প্রসারিত করা হয়েছে ১২টি শ্রেণিকক্ষ।
বর্তমানে রংপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন মুহাম্মদ আবুল মুযন আযাদ ও সহকারী প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান। বিদ্যালয়ে রয়েছে স্কাউট দল, রেডক্রিসেন্ট ইউনিট, ডিবেট ক্লাব, ক্রিকেট, ফুটবল ও ভলিবল দলসহ সকল শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে অন্যান্য খেলার ব্যবস্থা। ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে এই বিদ্যালয় অর্জন করে শতভাগ পরীক্ষার্থী পাসের গৌরব।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রংপুর মহানগর মেট্রো পলিটন চেম্বারের সভাপতি রেজাউল ইসলাম মিলন বলেন, ইংরেজ শাসিত সময়ে এ অঞ্চলে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে প্রতিষ্ঠিত হওয়া বিদ্যালয়টির অতীতের গর্ব ও অহংকার আমাদের কাছে যেন শুধু ইতিহাস হয়েই না থাকে। প্রাক্তন ছাত্রসহ রংপুরের সুধি সমাজের প্রত্যাশা সম্মিলিত প্রয়াসে অটুট রাখতে হবে মাইনর ইংলিশ স্কুল অর্থাত্ রংপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সোনালী ঐতিহ্য।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ রংপুর উচ্চ বিদ্যালয়টিকে সরকারিকরণের দাবি জানান।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আবুল মুযন আযাদ বলেন, শতবর্ষের প্রাচীন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩১ বছর শিক্ষকতা করে আসছি। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ অতিদরিদ্র পরিবার থেকে আসলেও ফলাফলে তারা মেধার স্বাক্ষর রেখে চলেছে। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এটি ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করা হলে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষের সমস্যার সমাধান হবে।