আইটি সেক্টরের স্বর্ণযুগ

প্রথমে শুরুর কথাটা বলি। বাংলাদেশে ১৯৬৪ সালে প্রথম কম্পিউটার আসে এবং ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত প্রকৃতপক্ষে কম্পিউটার বিশেষজ্ঞদের হাতেই বন্দি ছিল। বিশেষজ্ঞরাই কেবলমাত্র কম্পিউটার গবেষণা, প্রোগ্রামিং বা কম্পিউটিং করতেন। তবে বলা হয় যে, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে কম্পিউটারের যুক্ত হওয়ার সূচনা ১৯৮৭ সাল থেকে। এরপর ১৯৯৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রায় সব পত্রিকা ও প্রকাশনায় কম্পিউটারের ব্যবহার শুরু হয়ে যায়। সুতরাং এদেশে কম্পিউটারের বিপ্লবের কথা যদি বলি, তাহলে বলতে হবে, ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৩-এর মধ্যে ব্যাপারটা ঘটে যায়। এই সময়ের মধ্যে বেসরকারিভাবে ব্যাপাকভাবে কম্পিউটারের ব্যবহার হতে থাকে।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচিত হওয়ার পর নতুনভাবে কম্পিউটার প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়তে থাকে। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করতে থাকেন। তখন তিনটি বড় ঘটনা ঘটে। প্রথমত, কম্পিউটারের উপর সবপ্রকার ভ্যাট-ট্যাক্স তুলে দেওয়া। দ্বিতীয়ত, মোবাইলের যে মনোপলি বাজার ছিল, তা ভেঙে দেওয়া। তৃতীয়ত যা ছিল, তা হলো অনলাইন-ইন্টারনেটের যুগে স্থায়ীভাবে অবস্থান করা।

১৯৯৬ সালে ভিস্যাট স্থাপন করার অনুমতি অব্যাহত রেখে দেশকে অনলাইন ইন্টারনেটে সংযুক্ত করে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আইসিটি টাস্কফোর্স গঠন করার পর তারই সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়ন করে সেই সরকার পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশকে বিশ্বমানে দাঁড় করায়। সেই সময়ের জেআরসি কমিটির রিপোর্ট আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশের অনন্য একটি দলিল। সেই দলিলের ৪৫টি সুপারিশের মাঝে সেই সরকার ২৮টি বাস্তবায়ন করে। আমি মনে করি, যদি ২০০১ সালে আমরা পরাজিত না হতাম, তবে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তিতে অন্তত ৭ বছর আগে আজকের অবস্থানে পৌঁছাত। ২০০১ সালে বিজয়ী সরকার কেবল যে রাজনৈতিকভাবে দেশটাকেই ছিন্নভিন্ন করে তা-ই নয়, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে গুঁড়িয়ে দেয়। শেখ হাসিনার সরকার যেসব ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেগুলোকে বিনষ্ট করে দেওয়া হয়। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত প্রায় স্থবির হয়ে ছিল তথ্যপ্রযুক্তি খাত। রূপান্তরের শুরুর কথা যদি বলতে হয়, তবে এগুলো হলো রূপান্তরের শুরুর কথা। তবে প্রকৃতঅর্থে তথ্যপ্রযুক্তি যুগে প্রবেশ করা হয় আসলে এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর।

শেখ হাসিনা নিজে তথ্যপ্রযুক্তিবান্ধব হওয়ার কারণে পুরো প্রশাসনকেই এ খাতে মনোযোগী হতে হয়েছে। তিনি যে কাজটি করেছিলেন, তা হলো তৃণমূল পর্যায়ে থেকে তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের কাজটি শুরু করেছিলেন। প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল কেন্দ্র স্থাপন করে দিয়েছিলেন। আরেকটি কাজ তিনি করেছিলেন, সেটা হলো, এসব উদ্যোগের সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত করেছিলেন। কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছিলেন সরকার, কিন্তু এসবের উদ্যোক্তা ছিল জনগণ। অনেক তরুণ এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। এর ফলে গ্রামের মানুষের কাছে তথ্যপ্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যাপারটা পৌঁছায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যার সন্তান বা স্বামী বিদেশে থাকে, তাদের সেই প্রবাসী মানুষটির সঙ্গে অনেক টাকা খরচ করে কথা বলতে হতো। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে অতি সস্তায় সন্তানের সঙ্গে মা কথা বলতে পারছেন, ভিডিওকলের মাধ্যমে দেখতেও পারছেন। এই ব্যাপারগুলো ঘটেছে, প্রযুক্তির এই সহজলভ্যতার কারণে।

ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য যে বিষয়গুলো জরুরি ছিল, তার একটা হলো কানেকটিভিটি। কানেকটিভিটি জরুরি এ কারণে যে, এই সভ্যতা ইন্টারনেটভিত্তিক এবং এটি ছাড়া যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব নয়। ইন্টারনেটের প্রসার যদি না হয়, তাহলে এ সভ্যতাকে ডিজিটাল সভ্যতা বলতে পারব না। সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে আশা করছি, ২০১৮ সাল নাগাদ প্রায় প্রতিটি গ্রামে ফাইবার অপটিকের মাধ্যমে ইন্টারনেট পৌঁছে যাবে। এছাড়া অনেকগুলো হাইটেক পার্ক তৈরি করা হচ্ছে। যা তথ্যপ্রযুক্তি সেবাকে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে। আমরা শিক্ষার ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখছি। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম তৈরি হচ্ছে।

আসলে আইটি সেক্টরে ম্যাজিক্যাল পরিবর্তন হয়েছে। ২০০৮ সালে এ খাতে রপ্তানি ছিল ২৬ মিলিয়ন ডলার, সেখানে আমরা এখন এসে পৌঁছেছি ৭০০ মিলিয়ন ডলারে। আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতাগুলো বেড়েছে। আমাদের দেশের বাজার অনেক বিস্তৃত করতে পেরেছি। একই সঙ্গে বিদেশের বাজারেও নিজেদের সম্প্রসারণ করতে সক্ষম হয়েছি। এ কার্যধারা অব্যাহত থাকলে ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্পষ্ট রূপ দেখতে পাব।