দক্ষিণাঞ্চলের নদনদী, খাল, বাঁওড় থেকে হারিয়ে যাওয়া ও হারাতে বসা মাছের সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দিতে যশোরে গড়ে উঠেছে ‘ফিশ মিউজিয়াম’। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) স্বাদু পানি যশোর উপকেন্দ্রে ১০০ প্রজাতির মাছের প্রদর্শনী গড়ে তোলা হয়েছে। পরবর্তী সময় আরও বড় পরিসরে এর কার্যক্রম করার ইচ্ছা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
বিএফআরআই সূত্রমতে, বাংলাদেশে প্রায় ২৬০ প্রজাতির মাছ রয়েছে। এর মধ্যে বিপদাপন্ন প্রায় ৪০ প্রজাতি। যেগুলোর মধ্যে যশোর অঞ্চলের নদনদী, খাল, বাঁওড় থেকে হারাতে বসেছে ২০ প্রজাতির মাছ। নতুন প্রজন্ম বইয়ের পাতায় এর নাম পড়লেও মাছের স্বাদ তাদের নেয়া হয়নি। তাই প্রাথমিকভাবে অন্তত তাদের চোখে দেখার সুযোগ করে দিতে বিএফআরআই গড়ে তুলছে ফিশ মিউজিয়াম।
মিউজিয়ামে সংরক্ষিত খরশোলা, লাল খলিসা, কাজলী (বাঁশপাতা), মহাশোল, মধু পাবদা, বাইন, বুজুরী ট্যাংড়াসহ রয়েছে নানা প্রজাতি। মহাশোলের নামই শোনেননি যশোর সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া শারমীন। ‘পাবদার পরিচিত হলেও মধু পাবদা বলে কিছু আছে তা জানতাম না’ বলে জানালেন সরকারি মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাজিয়া সুলতানা। যশোর বোর্ড স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী এলিস বলেন, ‘খেতে কেমন পরের কথা, তারা বাইন, বুজুরী ট্যাংড়া দেখতে কেমন তাই তো জানি না’। ফিশ মিউজিয়ামে এমন মাছ সংরক্ষিত আছে জেনে তারা আনন্দিত হন। যশোর এমএম কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে ফিশ মিউজিয়ামে শিক্ষা সফরে এসেছিলেন শিক্ষার্থীরা। মিউজিয়ামে আসা প্রাণিবিদ্যার শিক্ষার্থী এহসান বলেন, স্বাদু পানির যশোর উপকেন্দ্রের এ উদ্যোগ আমাদের মতো নতুন প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয় স্থান বলে মনে করি। ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকা মাছের সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দিতে ক্ষুদ্র পরিসরে গড়ে ওঠা ফিশ মিউজিয়াম সামগ্রিকভাবে সমৃদ্ধ করা গেলে শুধু যশোর নয়, দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাণিবিজ্ঞানের (স্নাতক) শিক্ষার্থীদের জন্য উপকার হবে। বিপদাপন্ন এসব মাছের স্বভাব, বৈচিত্র্য, বৈশিষ্ট্য গবেষণায় নানামুখী কাজ সহজে করতে পারবে। অপর এক শিক্ষার্থী রাসু সরকার বলেন, বইয়ে লেখা নির্ধারিত পাঠ্যে আমরা যা শিখি তা নম্বর পেতে সহায়ক। কিন্তু মিউজিয়ামটি ঘুরে এসে আমাদের যে ব্যবহারিক জ্ঞান হয়েছে তা অনেক। একদিনেই দেখে যা শিখেছি তা অনেকগুলো ক্লাসের সমন্বয়ে শেখা সম্ভব হতো না। তিনি আরও জানান, মিউজিয়ামের বিলুপ্তপ্রায় যে মাছগুলো সংরক্ষণ করা আছে তার নাম এখন বইপত্রেই দেখা যায়। শিক্ষা সফরের দিনই তারা এসব মাছ প্রথম দেখলেন। যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মদন কুমার সাহা জানান, এটাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে পারলে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন গবেষণায় সহযোগী হওয়ার পাশাপাশি দর্শনাগারে পরিণত হবে।
যশোর স্বাদু পানি উপকেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ কে এম শফিকুজ্জোহা জানান, নদনদী, খাল, বাঁওড় থেকে হারাতে বসা ও হারিয়ে যাওয়া মাছের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে তাদের এ আয়োজন। পাশাপাশি তারা গবেষণার কাজও করছেন। তিনি আরও বলেন, মিউজিয়ামে এসে নতুন প্রজন্ম মাছের সঙ্গে পরিচিত হলে বাজার থেকে মাছ কিনতে গিয়ে প্রতারিত হবে না।এরপর পৃষ্ঠা ১১ কলাম ৪