সরকারের তিন বছর : যাদের অবদানে এগোচ্ছে দেশ

আজকে বাংলাদেশের যে উত্তরোত্তর অগ্রগতি ও উন্নয়ন, সেটা এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোগের কারণেই সম্ভব হয়েছে। কাজেই দেখা যাচ্ছে, সরকারের উন্নয়ন উদ্যোগ একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে সম্প্রসারিত হয়েছে।ড. মো. হুমায়ুন কবীর পূর্ণ হলো বর্তমান উন্নয়নের রূপকার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন দেশরত্ন শেখ হাসিনার সরকারের তিন বছর এবং একই দলীয় সরকারের ধারাবাহিকতার আট বছর। এ সময় সরকার দেশে অভাবনীয় উন্নয়ন করেছে যা আজকে শুধু দেশে নয়, বিদেশের জন্য এক অনন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। এক কথায় উন্নয়নের রোল মডেল। সরকারের উন্নয়ন উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত রয়েছে অনেক ছোট ছোট অবদান। আমি আজ এসব ছোট ছোট অবদানের দু-একটির কথাই উল্লেখ করব। তবে সরকার যে সবসময় সব কাজ ভালো করে, তা যেমন ঠিক নয়, আবার অনেক কাজ যে ভালো করে সেটাও কিন্তু সমানভাবে ঠিক। প্রদীপের নিচেও অন্ধকার থাকে। আর ভালো করতে গেলে কিছু যে খারাপ হবে না সেটি কেউই জোর দিয়ে বলতে পারে না। আমি আমার নিজের তাগিদ থেকেই দেশের স্বার্থে, জনগণের জানার স্বার্থে সরকারের ভালো এবং উন্নয়নমূলক কাজগুলোকে তুলে ধরার চেষ্টা করে থাকি। আমার সেরকম কিছু লেখা পড়ে আমাকে প্রত্যক্ষ কিছু কাজ সরাসরি পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশন (বিএনএফ) নামের একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা। আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন সংস্থাটির মাননীয় চেয়ারম্যান এএফএম ইয়াহিয়া চৌধুরী, যিনি ব্যক্তিগতভাবে একজন দক্ষ, সৎ ও অবসরপ্রাপ্ত সিভিল সার্ভেন্ট হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছিলেন। তিনি সক্রিয় চাকরিকালীন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগেরবার ক্ষমতায় থাকাকালে প্রধানমন্ত্রীর একজন একান্ত সচিব হিসেবে তার উন্নয়ন দর্শন খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। যা হোক, প্রথম প্রস্তাবেই আমি সাগ্রহে রাজি হলাম। কারণ আমি নিজেও এসব গ্রামীণ উন্নয়ন কার্যক্রম আনন্দের সঙ্গে পরিদর্শনে আগ্রহী সে জন্য কোনো ধরনের বনিতা না করেই যেতে রাজি হলাম। দিনটি ছিল গত ১১ ডিসেম্বর ২০১৬। পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার চেচুয়া বাজোরে ‘গ্রামীণ উন্নয়ন সংস্থা’ (গাউস) নামের একটি ‘বেসরকারি সংস্থা’ (এনজিও) পরিদর্শন করতে যাওয়ার পথে বিএনএফ কার্যক্রম নিয়ে বিস্তারিত আলাপ হলো সংস্থাটির চেয়ারম্যান হিসেবে গুণী ব্যক্তি ইয়াহিয়া চৌধুরীর সঙ্গে। আমি তার মাধ্যমে নিজেকে অনেক সমৃদ্ধ করার সুযোগ পেয়েছি। পরে সেখানে বিএনএফ এর সহযোগী সংস্থা গাউসের কর্মধারা দেখে আমিসহ সবাই অবিভূত। সেখানে উপস্থিত প্রত্যেকটি মহিলা উপকারভোগী সদস্য সংস্থাটির ক্ষুদ্র অথচ একটি প্রায়োগিক প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে প্রত্যেকের আয় বর্ধন করে দেয়া হয়েছে। সেখানে যার যা প্রয়োজন কিংবা যিনি যে কাজে পারদর্শিতা অর্জনে আগ্রহী তাকে ঠিক সেই কাজে প্রয়োজনীয় কারগরি প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও অনুদান দিয়ে সহযোগিতা করার কারণেই তারা প্রত্যেকেই এগিয়ে যাচ্ছেন, যা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। এই বিএনএফ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় এবং অর্থ বিভাগের ব্যাংকিং অনুবিভাগের আওতায় ২০০৪ সালের ২ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে। ২ ডিসেম্বর শুরু হয়েছে বিধায় প্রতি বছরের এ দিনটিকে বিএনএফ দিবস হিসেবেও পালন করা হয়ে থাকে। এর কর্মএলাকা সমগ্র বাংলাদেশ এবং বর্তমানে এর সহযোগী সংস্থার সংখ্যা ১১২০টি। বর্তমানে কমিউনিটিভিত্তিতে প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর চাহিদাভিত্তিক উন্নয়নের জন্য ত্রিশোর্ধ্ব কর্মসূচির মাধ্যমে প্রায় ১০৮ কোটি টাকার প্রকল্প চলমান রয়েছে। প্রকল্পের সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় এককোটি। তবে সেখানে শতকরা ৬০ ভাগ মহিলা এবং ৪০ ভাগ পুরুষ উপকারভোগী এসব সুবিধা প্রাপ্ত হচ্ছে।
আজকে বাংলাদেশের যে উত্তরোত্তর অগ্রগতি ও উন্নয়ন, সেটা এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোগের কারণেই সম্ভব হয়েছে। কাজেই দেখা যাচ্ছে, সরকারের উন্নয়ন উদ্যোগ একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে সম্প্রসারিত হয়েছে।
আমরা জানি, এ বছর (২০১৬) জাতিসংঘের উদ্যোগে ‘বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন দিবস’ পালন করা হয়েছে বাংলাদেশে। আর এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ছিল এর থিম কান্ট্রি। সে কারণে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় বাংলাদেশে পালনের উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফর করেছেন এবং তিনি বরিশালে নিজের চোখে বাংলাদেশে সরকারের দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলের মিরাকল দেখে গেছেন। আমাদের জন্য একটি গর্বের বিষয় এই যে, বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট এসব দেখে মুগ্ধ হয়ে বলেছেন সেগুলো অন্যান্য দেশেও অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হতে পারে। আর এসবের নেপথ্যে রয়েছে বাংলাদেশে এনজিও ফাউন্ডেশনের মতো আরও কিছু সরকারি উন্নয়ন উদ্যোগ। কথায় আছে ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। এক সময় তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন দেশ-বিদেশের কারো কারো জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত বা রোল মডেল হিসেবে দেখা দিচ্ছে। তাই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফেরামে এখন তা হরহামেশাতেই আলোচনা হতে দেখা যাচ্ছে। বর্তমান আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সরকার যেখানে রূপকল্প-২০২১ অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে মধ্যম আয়ের দেশ থেকে বেরোতে যাচ্ছে। সেখানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বলছে, বাংলাদেশ আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রি (এলডিসি) বা স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে। অবশ্য তারও একটি যৌক্তিকতা রয়েছে, আর সেটি হচ্ছে একটি ধাপে কোন একটি দেশ কতটুকু টেকসই হবে সেটা দেখার জন্য পরবর্তী তিনবছর পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। আর সম্প্রতি এ তথ্যটি একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা (আঙ্কটাড)। আঙ্কটাডের হয়ে সংস্থাটির বার্ষিক প্রতিবেদন-২০১৬ প্রকাশকালে বাংলাদেশের বেসরকারি গবেষণা উন্নয়ন সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, নিয়ম অনুযায়ী মাথাপিছু আয়, মানব উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা- এ তিনটি সূচকের মধ্যে কমপক্ষে দুটি সূচকে নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে হয়। এরপর আরও তিন বছর অর্থাৎ ২০২১ সাল অর্জনগুলোর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। পরে আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে ২০২৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এলডিসি তালিকা থেকে বের হয়ে আসার বিষয়ে অনুমোদন পেতে হবে। ২০১৪ সালে এলডিসি থেকে বের হলেও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এলডিসি হিসেবে যেসব সুবিধা পাওয়া যায়, বাংলাদেশের জন্য আগামী ২০২৭ সাল পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। সিপিডি থেকে আরো জানা যায়, বিশ্বের বহু দেশ এখন এলডিসি থেকে বের হয়ে যেতে চাচ্ছে। এর পেছনে দুটি কারণ রয়েছে। তার একটি হলো_ এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর যে পরিমাণ সহায়তার প্রতিশ্রুতি ছিল, তা পায়নি। এতে তারা হতাশ হয়েছে। অন্যদিকে যেসব দেশ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তাদের মধ্যেও অর্থনৈতিক অবসাদ (ফ্যাটিং) এসেছে। দ্বিতীয়টি হলো- এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে অনেকেই আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে কৃতিত্ব নিতে চাচ্ছে। মাথাপিছু আয়ের হিসাবে বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছে গেছে। এর পরের স্তর হচ্ছে মধ্যম আয়ের দেশ। এই স্তরে পৌঁছাতে হলে বর্তমানের মাথাপিছু আয়কে দ্রুত ৪ হাজার ডলারে নিয়ে যেতে হবে। আঙ্কটাডের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিশ্বের ১৬টি দেশের উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসবের মধ্যে বাংলাাদেশ ছাড়াও রয়েছে আফগানিস্তান, অ্যাঙ্গোলা, ভুটান, জিবুতি, গিনি, কিরিবাতি, লাওস, মিয়ানমার, নেপাল, সাওতুমে, সলেমান দ্বীপপুঞ্জ, পূর্বতিমুর, টুভালু, ভানুয়াতু ও ইয়েমেন প্রভৃতি। এগুলোর মধ্য থেকে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান, জিবুতি, লাওস, মিয়ানমার ও ইয়েমেন ২০২৪ সালে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। অন্যরা আরও আগেই এ মর্যাদা অর্জন করবে বলে মনে করছে তারা। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতার বছরই জাতিসংঘ বিশ্বের দেশগুলোকে উন্নত, উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত_ এ তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকের ভিত্তিতে এ ভাগ করা হয়েছে। সে হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় রয়েছে সর্বমোট ৪৮টি দেশ। প্রতি তিন বছর অন্তর এ তালিকা পর্যালোচনা করে থাকে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) নামের একটি সংস্থা। অথচ ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, সদ্যস্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র মাইনাস ১৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ দিয়ে। এক বছর পরই অর্থাৎ ১৯৭৩ সালে সেই প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছিল ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশে, আর বর্তমানে অর্থাৎ ২০১৬ সালে সেই প্রবৃদ্ধি এখন ৭.১১ শতাংশ। আর সেই সময় ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জাতীয় বাজেট ঘোষিত হয়েছিল মাত্র ৭৮৬ কোটি টাকার, আর ৪৫ বছর পরে এসে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সেই বাজেটের আকার বাড়তে বাড়তে এখন তা ৩ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বর্তমানে বিজয়ের ৪৫ বছর পরে এই জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ১১ শতাংশ, যা বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের চেয়েও বেশি। এখন সামনে তাকালে উন্নয়নের চিত্র চারপাশে খুবই দৃশ্যমান, যা চোখ মেলে তাকালেই যে কেউ দেখতে পাবে সহজেই। সেগুলোর কিছু হলো- মাথাপিছু আয় ১৪৬৬ মার্কিন ডলার, দারিদ্র্যের হার কমে এখন ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ৩১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, রেমিট্যান্স ১৫ বিলিয়ন ডলার, রপ্তানি আয় ৩৪০০ কোটি ডলার, চাল উৎপাদন ৩ কোটি ৮৯ লাখ মে. টন, সাক্ষরতার হার ৭০ শতাংশ, গড় আয়ু ৭০ বছরের উপরে, ২৮৭৯৩ কোটি টাকার পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ ইত্যাদি। শিক্ষাখাতেও বাংলাদেশের অর্জন আজ বিশ্বের কাছে রোল মডেল হয়েছে। এক্ষেত্রে কিছু পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, যেখানে স্বাধীনতা পরবর্তীকালে দেশের প্রায় ৮৫ ভাগ নারীই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল। এখন নারীদের প্রায় ৫৭ ভাগই শিক্ষিত। দেশের নারীর ক্ষমতায়ন বেড়েছে। স্বাধীনতার পর দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৮ হাজার, এখন তা এক লাখ ছাড়িয়ে গেছে। সরকাাির প্রাথমিক বিদ্যালরেয়র পাশাপাশি বেড়েছে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল মাত্র চারটি, আর এখন হয়েছে ৩৮টি। তখন দেশে কোন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না, কিন্তু এখন তা ৯৬টি। স্বাস্থ্য সেবায় ৯৮ ভাগই দেশীয় ওষুধ দিয়ে করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় এখন বাংলাদেশের ওষুধ বিদেশে রপ্তানিও করা হচ্ছে। যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ডিজিটাল প্রযুক্তি ইত্যাদি প্রতিটি সেবা এখন প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের দোড়গোড়ায়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতামত হলো- স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বেরোতে হলে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেগুলো খুবই দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো- মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং আইনের চোখে সবাইকে সমান হিসেবে বিবেচনা করে যথাযথ আইনের প্রয়োগ করে দৃষ্টান্তমূলক বিচারকার্য সম্পন্ন করা এবং সুশাসন নিশ্চিত করা। তারপর অর্থনৈতিক বিষয়ে শৃঙ্খলা আনয়ন করা। তারই অংশ হিসেবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়কে কাজে লাগানো, বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা, আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে রপ্তানি পণ্যের তালিকা দীর্ঘ করা এবং সেগুলোকে আরো বহুমুখী করতে সহায়তা করা। ইউরোপ-আমেরিকাসহ উন্নত বিশ্বে আমাদের দেশীয় পণ্যের কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সেইসঙ্গে তৈরি পোশাক খাতে জিএসপি সুবিধা আদায়ে আরও তৎপর হতে হবে। অপরদিকে ২০০০-১৫ পর্যন্ত জাতিসংঘ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) যে আটটি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয়েছে, ঠিক একইভাবে ২০১৫-২০৩০ পর্যন্ত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ১৭ নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রায় অর্জিত সম্ভব হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞগণ। কারণ বাংলাদেশ ইতিমধ্যে আর্থিক খাতে যে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়ে আশা জাগিয়েছে সেখানে নিরাশ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দেশে অনেক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কাজ করছে ঠিকই, আবার তারা দারিদ্র্য বিমোচনে একটি বিরাট ভূমিকা রাখছে বলেও তাদের দাবি। কিন্তু দিনশেষে এসব ক্ষুদ্রঋণ প্রদান, আদায় ও সুদহার নিয়ে অনেক কথা প্রচলিত আছে। সে জন্য সরকার সরাসরি দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য কাজ করে চলেছে। তারমধ্যে বর্তমান সময়ে সরকারের উন্নয়ন উদ্যোগের সফল কর্মসূচিগুলোর মধ্যে ‘একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প’ এবং ‘বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশন’ অন্যতম। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশন দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, স্যানিটেশন, কৃষি, সুপেয় পানি সরবরাহ, প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ও পুনর্বাসন, নারীর ক্ষমতায়ন, বর্জ্য নিষ্কাশন ও ব্যবস্থাপনা, জৈবসার উৎপাদন ও ব্যবহার, সেলাই ও হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ, মাদক প্রতিরোধ, শিশু ও নারী পাচার প্রতিরোধ, জন্ম নিয়ন্ত্রণ, যৌতুক ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নসহ ৩০টি আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকা-ের মাধ্যমে সর্বোপির তথ্যপ্রযুক্তি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখছে সংস্থাটি। এভাবেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতায় তা আগামীতেও অব্যাহত থাকবেই ইনশাল্লাহ।