দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর সাফল্য

খিয়ংপুক ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। দক্ষিণ কোরিয়ার একটি মর্যাদাবান বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও গবেষকরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অবদান রেখে চলেছেন এক দশক ধরে। এমনই একজন বাংলাদেশি তরুণ বিজ্ঞানী ড. নাজমুল আবেদীন খান। প্রায় এক দশক ধরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িত তিনি। বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন কন্ট্রাক্ট প্রফেসর হিসেবে।
ড. নাজমুল আবেদীন খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করার পর ২০০৮ সালে খিয়ংপুক ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি শুরু করেন। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে মাত্র ২৮ বছর বয়সে তিনি তার পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার পিইচডি গবেষণার বিষয় ছিল ন্যানো পার্টিকেল ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবন। তার পুরো পিএইচডির সময়কালটিই ছিল কৃতিত্বপূর্ণ। বিশেষ করে পরিবেশ দূষণরোধে পরিবেশবান্ধব জীবাশ্ম জ্বালানির প্রক্রিয়াকরণে তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন। তার গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০১০ সালে বি. কে. (ইৎধরহ ড়ভ কড়ৎবধ) পুরস্কার লাভ করেন।
তিনি জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সালফার জাতীয় উপাদান পৃথক করার একটি ফলপ্রসূ, সাশ্রয়ী পদ্ধতির উদ্ভাবন দেখিয়েছেন। সালফার জাতীয় পদার্থগুলো পরিবেশের জন্য ভয়াবহ হুমকি। এ ধরনের উপাদান মানব শরীরের শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত বহু রোগ সৃষ্টি করে। এছাড়া এসিড বৃষ্টির জন্যও এই উপাদানগুলোই প্রধানত দায়ী। এ কারণে সারা বিশ্বেই বিভিন্ন দেশে সালফার দূষণের বিরুদ্ধে কঠোর নীতিমালা তৈরি হচ্ছে। তার এই উদ্ভাবন জ্বালানি থেকে সালফার মুক্ত করার জন্য বিরাট অবদান রাখবে, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। বিভিন্ন খ্যাতিমান বৈজ্ঞানিক জার্নালে এই সময়ের মধ্যে ড. নাজমুল আবেদীন খানের ৫১টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। একই সময়ে তিনি পাঁচটি কাজের প্যাটেন্ট পেয়েছেন। এছাড়া তার গবেষণা নিয়ে বিভিন্ন খ্যাতিমান জার্নালে প্রচ্ছদও করা হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার ১০টিরও অধিক পত্রিকায় তার বিভিন্ন উদ্ভাবনের খবর প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে দেশটির খ্যাতিমান পত্রিকা সিউল শিনমুন এবং ওয়াইটিএন রয়েছে। সর্বশেষ ড. নাজমুল আবেদীন খান গবেষণায় অসামান্য অবদানের জন্য গত বছরের ১৮ই ডিসেম্বর বিসিকে অ্যাওয়ার্ড-২০১৬ লাভ করেন।
নাজমুল আবেদীন খান ১৯৮৩ সালে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থানায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মৃত মো. জয়নাল আবেদীন এবং মা সাবেকা আরজু। দুই ভাইবোনের মধ্যে তিনি প্রথম। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে এসএসসি এবং ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি সমাপ্ত করে তিনি ২০০০-০১ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন বিভাগে ভর্তি হন।