নদীর দেশে ধানের দেশে

‘কীর্তনখোলা’ শব্দটি উচ্চারিত হতেই নীলাভ সবুজ কল্পনা আর রূপসী নারীর মতো এক নদীর দৃশ্য ভেসে ওঠে চোখের আয়নায়। বরিশাল আর কীর্তনখোলা নিয়ে ভাবলেই মনের জানালায় উকি দেয় অনন্ত ভাবনার। সে ভাবনার একমাত্র অনুষঙ্গ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

জীবনানন্দের রূপসী বাংলার রূপালি নদী কীর্তনখোলার তীরঘেঁষে দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলী আর অফুরন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। নদীর কলতানের সঙ্গে দুই সেতুর মাঝখানে সবুজে-সবুজে ঘেরা প্রকৃতির মাঝে দাঁড়িয়ে রয়েছে আমাদের স্বপ্ন। শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর ওপর দাঁড়ালে মনে হবে আকাশের মতো বিশাল সম্ভাবনার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় যেন পটে আঁকা ছবির মতো। মেঠোপথ, খাঁটি সবুজ, প্রকৃতি, ধানক্ষেত, হাঁস-পাখি আর স্থানীয় সহজ-সরল মানুষগুলো যেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের সুখ-দুঃখের সাথী। গোধূলি বেলায় যখন আবিররাঙা সূর্য পশ্চিম আকাশে ডুবতে থাকে মনে হবে তখন সুয্যি মামা হয়তো কীর্তনখোলায় ডুবেই মরবে। কিন্তু না, রাত পোহাতেই আবার কুয়াশার জাল কেটে রক্তিম সূর্য উদ্ভাসিত করে গোটা ক্যাম্পাসকে। কীর্তনখোলার তীরের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিকেলটা বড়ই রোমাঞ্চকর। ক্যাম্পাসের মাঠের আনাচে-কানাচে জমজমাট আড্ডা, নদীতীরের মায়াবি প্রকৃতি যেন সবাইকে নিয়ে যায় কল্পনা বিলাসের কোনো এক স্বপ্নের রাজ্যে। চাঁদনি রাতে ক্যাম্পাসের নয়নাভিরাম রূপ কবিমনা শিক্ষার্থীদের আচ্ছন্ন করে কাব্যের মোহে। এই শীতে, শীতকে পুরোপুরিভাবে অনুভব করতে কিংবা শীতের রহস্য উদ্ঘাটনে আমাদের ক্যাম্পাসের জুড়ি নেই। ভাপা পিঠা থেকে শুরু করে শীতকালীন সব ধরনের পিঠার আয়োজন থাকে ক্যাম্পাস-সংলগ্ন ভোলা সড়কের জিরো পয়েন্টে। নীরবে-নিভৃতে ক্যাম্পাস নিয়ে এটুকু ভাবলেই হাজারো কবির বাংলাদেশ নিয়ে লেখা কবিতা কিংবা উপমার সঙ্গে মিলে যাবে। কনকনে শীতে মাঝরাতের দিকে মন চাইবে ভোলা রাস্তায় গিয়ে একটু চায়ের কাপে চুমুক দিতে। আবারও সকাল হয়, সকালের কাঁচা রোদ উঁকি দেয়। হাজারো পাখির কলতানে ঘুম ভাঙে আবাসিক হলগুলোর ছাত্রছাত্রীদের। জেগে ওঠে নতুন দিন, নতুন স্বপ্ন।

ধান-নদী-খালের দেশে বেরিয়ে পড়ে ভ্রমণপিপাসুরা। দুর্গাসাগরের কাজল কালো জল কিংবা হরিণার পাখিদের কলকাকলি শুনতে। কীর্তনখোলায় পাল তোলা নৌকায় ভেসে বেড়ানো, গুঠিয়া মসজিদের চমৎকার সৌন্দর্য, বঙ্গবন্ধু উদ্যান, মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, ত্রিশ গোডাউন-সংলগ্ন বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ, স্বাধীনতা পার্ক অথবা প্লানেট শিশু পার্কে মন ছুঁয়ে যায় প্রকৃতির শীতলতায়। বিশাল আকার জাহাজের আলোর রোশনাই কীর্তনখোলায় পড়ে ঝিকিমিকি আলোর ঢেউ তোলে। আবার অনেকেই ছুটে যান কড়াপুর মিয়াবাড়ি, কলসকাঠি জমিদারবাড়ি, কীর্তিপাশা জমিদারবাড়ি, ভীমরুলির ভাসমান বাজার, কুড়িয়ানার পেয়ারা বাগান, ধানসিড়ি নদী, গাবখান সেতু, পাদ্রিশিবপুর গির্জা, লাকুটিয়া জমিদারবাড়ি, গৌরনদীর কসবা মসজিদ, মাহিলারা মঠ, চাখারের শেরেবাংলার বাড়ি অথবা দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের ‘আরজ মঞ্জিলে’। সব মিলিয়ে সময় কাটবে মন ভালো লাগার এক না-ভোলা স্মৃতি রচনার সম্ভাবনায়। অনন্ত সম্ভাবনার বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ বরিশালের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে সবাইকে আমন্ত্রণ।