যারা শহরে বসবাস করে অবধারিত ভাবেই সবুজের ছোঁয়া থেকে প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি বঞ্চিত। ইট কাঠ লোহার কারাগারে ধোঁয়ার পথ ধরে শুধু ছুটে চলা। এ দেয়াল থেকে ও দেয়ালে, শুধু ছুটে চলা।
নাগরিকরা ভুলেই গেছে পায়ের তলায় মাটি আর মাথার উপরে আকাশ আছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঋতুতে নান্দনিক ভাবে পরিবর্তন হয় অনিবার্যভাবে। প্রতিক্ষণেই নান্দনিক ভাবে পরিবর্তিত হয় আকাশের ঘর-সংসারের। একই সময়ে আকাশের চারপাশের চিত্র ভিন্ন। অনেকে হয়তো ছবিতেই জানে ফল হয় গাছে। ফুল গাছের ছবিটা অতো প্রচলিত নয় বলেই বাগান বা গাছ নয় ফুল পাওয়া যায় দোকানে। বিভিন্ন চ্যানেলের নাটক দেশি-বিদেশি চলচ্চিত্রের কল্যাণে জানা যায় ফুল দিতে হয় বিশেষ জনকে বিশেষ দিনে।
একটা গাছের সঙ্গে ফুল বা ফলের যে মায়ের মতো নিবিড় মমতার সম্পর্ক সেটা কখনোই গভীর ভাবে অনুধাবন করতে পারে না, জানতে পারে না দেখতে পারে না। এই নগরের বেশির ভাগ নাগরিকই শীতের শিশির ভেজা গোলাপ দেখেছে ছবিতে। দেখা হয়নি কোনো ফলের উন্মেষকাল। সচরাচর যে ফুলগুলো দেখা যায় সেগুলোকেই চিনে।
শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ থেকে বের হয়ে তেমনি এক শীতল গাড়িতে শীতল অফিস কক্ষেই দীর্ঘ সময় যাপন। তীব্র যানজট নাকাল হয়ে যন্ত্রের কাছেই আত্মসমর্পণ নাগরিক জীবন।
অথচ যাদের সুযোগ আছে তারা সহজেই এই সমস্যা থেকে মুক্ত হতে পারে সহজেই। ছাদ-বাগান নাগরিক জীবনে এনে দিতে পারে শুভ কিছু। প্রকৃতি মানুষকে কখনো বিমুখ করে না। গাছ মাটি ও আকাশ মানুষের নিত্য শিক্ষক।
অতি ছোট্ট একটা বীজ থেকে চারা তারপর একটি পরিণত বয়সে পৌঁছে একটি ফুল ফল বীজের সম্ভার দিতে পারে। পছন্দমত দেশি ফুল ফল সবজির সঙ্গে বিদেশি ফল ফুল সবজির চাষও করা যায়। এতে শুধু ঐগুলো সম্পর্কে জ্ঞানলাভই হয় না, সঙ্গে থাকে অপার আনন্দ অমলিন সৌন্দর্য।
যা মানসিক ভাবে শুভচেতনার বিকাশ ঘটায় এবং কখনো কখনো পাওয়া যায় অর্থনৈতিক সাফল্য।
ছাদ বাগান শুধু বাড়ির সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করে না। বাড়ির সদস্যদের মানসিক রুচির ও পরিবেশের ভারসাম্যতা বৃদ্ধি করে। বাগান-বাড়িতে থাকে বিশুদ্ধ অক্সিজেন ভাণ্ডার। ফরমালিন মুক্ত ফল সবজি। এবং এই জটিল কঠিন সময়ে পারিবারিক সম্প্রীতি। পারিবারিক সদস্যদের প্রতিদিন দেখা হয় ছাদে। ফুলেল প্রাকৃতিক পরিবেশ তাদের ওপর প্রভাব ফেলে। জটিল কঠিন জীবনকে প্রকৃতি তার আপন শক্তিতে করে মসৃণ। প্রত্যেক সদস্যের পছন্দের গাছ এক বাগানে এক হয়ে বাস করে শীতল পরিবেশে। বই কিনে যেমন কেউ দেউলিয়া হয় না, তেমনি বাগান করে কেউ নিঃস্ব হয় না।
সামাজিক অস্থির সময় দেশের জন্য ভয়াবহ পীড়াদায়ক-এ থেকেও মুক্তি দিতে পারে ছাদ-বাগান। শিশু- কিশোর সহ পরিবারের সকল সদস্য যদি ছাদ-বাগানে নিত্য নব নব ফুল ফোটাতে ব্যস্ত থাকে তাহলে অন্য কোনো অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়াবার সময় হাতে থাকবে না। আর সবুজ ফুলেল পরিবেশ মানুষকে সজীব করে সুন্দর করে। মাথার উপরে খোলা নীলাকাশ নিরীক্ষণ করার সুযোগ ও সময় তৈরি হয় অনায়াসেই। উদার আকাশের বৈচিত্র্যময় শিক্ষা দেহমনের ওপর বিরাট প্রভাব ফেলে।
সবুজ সুন্দর নির্মল বায়ু ও বসবাসের যোগ্য শহর গড়ার পূর্বশর্ত হলো ছাদ-বাগান। যা এখন কোনো কোনো ভুক্তভোগী নাগরিক বুঝতে পেরেছেন। সঙ্গে নগর কর্তারাও। এই নগরকে ছায়াময় মায়াময় রাখার জন্য ছাদ-বাগান যেমন প্রয়োজন তেমনি সামাজিক সকল অবক্ষয় থেকে মুক্ত থেকে সুখী পারিবারিক জীবন গড়ার জন্যও ছাদ-বাগান প্রয়োজন।