দিনকে দিন বরেন্দ্র অঞ্চলে মসুর ডালের চাষাবাদ বাড়ছে। এর বিপরীতে কমছে গমের আবাদ। কৃষকরা বলছেন, গমের চেয়ে মসুরে উৎপাদন খরচ কম। আবার লাভও বেশি। তাই গম ছেড়ে তারা মসুরে ঝুঁকেছেন। এদিকে কৃষি বিভাগ বলছে, বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর প্রতিনিয়ত নিচের দিকে চলে যাওয়ায় সেচ প্রয়োজন এমন ফসল চাষাবাদে এখানকার কৃষকদের অনুৎসাহিত করা হচ্ছে। গমে তিন থেকে চারটি সেচের প্রয়োজন। ওদিকে মসুর চাষে কোন সেচ লাগে না। ফলে মসুর চাষে সবদিক থেকেই ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে। রাজশাহী কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) আবদুল আউয়াল বলেন, কৃষি বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলার প্রতিটি উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা সেচহীন ফসল চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন। বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চলে যত কম সেচের ফসল চাষ করা যায় ততই ভালো। এ জন্য কৃষকদের বোরো ধান চাষে অনুৎসাহিত করা হচ্ছে। তিনি জানান, বরেন্দ্রর মাঠে মাঠে এখন ডালজাতীয় বিভিন্ন ফসল ও গম চাষ করা হয়েছে। তবে গমে সেচ প্রয়োজন হওয়ায় বরেন্দ্র অঞ্চলের গোদাগাড়ী, তানোর ও নাচোলসহ বিভিন্ন উপজেলায় আগের তুলনায় গমের আবাদ কমে আসছে। তবে দিন দিন বাড়ছে ডালজাতীয় ফসলের চাষাবাদ। বিশেষ করে মসুর ডাল চাষ এ অঞ্চলে খুবই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। বরেন্দ্র এলাকার একটি খরাপ্রবণ এলাকা রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা। এখানেও সেচহীন ফসল বেশি চাষে কৃষকদের তাগাদা দেয়া হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌফিকুর রহমান জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে এখানে দ্বিগুন জমিতে মসুর ডালের চাষাবাদ হয়েছে। এ বছর ৬ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে মসুর ডালের চাষ হয়েছে। গত বছর হয়েছিল তিন হাজার হেক্টর জমিতে। এর আগের বছর হয়েছিল আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে। এদিকে চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে গম রয়েছে। গত বছর চাষ হয়েছিল ৮ হাজার ১০ হেক্টর জমিতে। কৃষি বিভাগের নির্দেশনা মতে কৃষকরা সেচহীন ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ হওয়ায় গমের চাষ কমে মসুর চাষ বাড়ছে। তাছাড়া ডালজাতীয় ফসল চাষের জন্য রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক মাত্র ৪ শতাংশ সুদে কৃষকদের ঋণ দেয়ায় মসুর চাষ বাড়ছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে কৃষকরা জানিয়েছেন, গমের চেয়ে মসুর চাষেই বেশি লাভবান হচ্ছেন তারা। উপজেলার রেলবাজার এলাকার মসুর ডাল চাষি ইমরান আলী (৪০) জানান, প্রতি বিঘা জমি থেকে চার থেকে পাঁচ মণ মসুর ডাল পাওয়া যায়। বাজারে সর্বনিম্ন চার হাজার টাকা মণ দরে মসুর বিক্রি করলেও বিঘায় ১৭ থেকে ১৮ হাজার টাকা লাভ হয়। কেননা মসুর ডাল চাষে শুধু বীজ ছাড়া সেচ-সার কিছুই লাগে না।
বেজোড়া গ্রামের চাষি আবদুল আউয়াল (৪৫) জানান, সেচ-সারের প্রয়োজন হওয়ায় এক বিঘা জমি থেকে সর্বোচ্চ ১১ হাজার টাকা লাভ করা যায়। তবে কোনো কোনো বছর ইদুরের উৎপাত বেশি হলে গমে ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষকরা। ওদিকে মসুর ক্ষেতে ইঁদুরের কোনো উৎপাত নেই। এসব কারণেও বরেন্দ্র অঞ্চলে বাড়ছে মসুর চাষ।
জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালি জানান, গেল অগ্রহায়ন মাসে কৃষকরা মসুর চাষ শুরু করেছেন। চলতি মৌসুমে বরেন্দ্র অঞ্চলে বারীমসুর-৩ ও ৬ জাতের মসুরের চাষ হয়েছে। আগামী ফাল্গুনেই জমি থেকে মসুর ডাল উঠবে। এবার শীতে কুয়াশা কম থাকায় মসুরের ফলন ভালো হবে বলেই আশা করা হচ্ছে।