[কুয়াকাটা সৈকতে ‘বালুর ভাস্কর্য’] মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া: কুয়াকাটার সৈকতে ভ্রমণে আসা পর্যটকরা এত দিন পুব আকাশে ভোরের সূর্যোদয়ের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতেই বেশি আগ্রহী ছিলেন। এখন তাদের আগ্রহের বিষয়ে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বালুর ভাস্কর্য। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের দৃশ্যসহ কুয়াকাটার সৌন্দর্য, ইতিহাস, সাগরপারের মানুষের জীবনযাত্রা বালুর নিপুণ কারুকাজে তুলে ধরা হচ্ছে। চারুশিল্পীদের নিপুণ হাতে সৈকতের বেলাভূমে শূন্য পয়েন্টের পূর্বদিকে ভাস্কর্যগুলো তৈরি করা হয়েছে।
আগামী ১৩, ১৪ ও ১৫ জানুয়ারি কুয়াকাটায় মেগা বিচ কার্নিভাল উদযাপনকে আরও বর্ণাঢ্য করতে এক দল তরুণ মেধাবী চারুশিল্পী নিপুণ হাতে বালুর ভাস্কর্য আর রং-তুলির আঁচড়ে উপস্থাপন করেছেন এমন সব দর্শনীয় দৃশ্য। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে দেশি-বিদেশি পর্যটকের কাছে শৈল্পিকভাবে তুলে ধরাই এ উদ্যোগের উদ্দেশ্য। ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে কুয়াকাটায় আগত পর্যটক-দর্শনার্থীসহ স্থানীয় লোকজন।
দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে অবজারভেশন অব নেচার অ্যান্ড স্টাডি প্রোগ্রামের আওতায় প্রতিবছর পর্যটন মৌসুমে সমুদ্রসৈকত
কুয়াকাটায় এই প্রদর্শনীর ধারা অব্যাহত রাখার প্রত্যাশা ও বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে আরও গতিশীল এবং বিকাশমান করার লক্ষ্যে পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন কুয়াকাটায় আয়োজন করে এই মেগা বিচ কার্নিভাল। উত্সবকে সামনে রেখে দেশি-বিদেশি পর্যটককে আরও বেশি আকৃষ্ট করতে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের (ইউডা) চারুকলা অনুষদের একদল তরুণ শিল্পী কুয়াকাটা সৈকতে বালুভাস্কর্য তৈরি শুরু করেছেন।
কুয়াকাটা খানাবাদ ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. ফরিদউদ্দিন খান জানান, কক্সবাজারকে যেভাবে তুলে ধরা হচ্ছে, পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা সে তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিয়েই কুয়াকাটা পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে। পর্যটনকেন্দ্র এলাকা অথচ সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত উপভোগ ছাড়া এখানে নেই কোনো বিনোদনের মাধ্যম। তাই অবহেলিত কুয়াকাটার দৃশ্যপট তুলে ধরার এ চেষ্টা যাতে অব্যাহত থাকে তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাচ্ছি।
কুয়াকাটায় ভ্রমণে আসা পর্যটক ইমরান, তাওহীদ, উজ্জ্বলা বলেন, এতদিন কুয়াকাটায় এসে শুধু বালুতটে হাঁটা আর সাগরের ঢেউ দেখা ছাড়া কিছুই ছিল না। এবার এসে দেখলাম বালুর ভাস্কর্য নির্মাণ করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের ভাস্কর্যটি সবার মন কেড়েছে। তবে এগুলো সংরক্ষণ করলে পর্যটকদের ভিড় ক্রমে বাড়বে বলে তারা জানান।
চারুশিল্পী সায়মা বলেন, এবারই কুয়াকাটায় প্রথম এসেছি। প্রকৃতি যেন তার সব সৌন্দর্য দিয়ে সাজিয়েছে কুয়াকাটাকে। তাই বিশ্ববাসীর কাছে নৈসর্গিক সে রূপ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের চারুকলা অনুষদের চেয়ারম্যান শিল্পী শাহ্জাহান আহেমদ বিকাশ বলেন, অনুষদের ৪১ জন নবীন শিল্পী গত চার দিন ধরে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কুয়াকাটার সৌন্দর্য ও এখানকার মানুষের জীবনাচরণ নিয়ে কাজ করেছেন। এ কাজ চলবে মেগা বিচ কার্নিভাল শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত।
« পূর্ববর্তী সংবাদ পরবর্তী সংবাদ »