ভোগাই নদীর রাবার বাঁধ কৃষকের আশীর্বাদ

শেরপুরের নকলা উপজেলায় রাবার ড্যাম প্রকল্প কৃষকের আশীর্বাদে পরিণত হয়েছে। উপজেলার উরফা ইউনিয়নের তারাকান্দা এলাকায় ভোগাই নদীতে রাবার বাঁধ নির্মাণ করায় সাড়ে ৩ হাজার একর অনাবাদি জমি সেচের আওতায় এসেছে। এতে কৃষি উৎপাদনে ব্যয় কমার পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা হচ্ছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় এমপি কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর প্রচেষ্টায় ২০১৩ সালে প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জেলার দ্বিতীয় রাবার বাঁধ ও সেতু নির্মাণ করা হয়। এতে শুষ্ক মৌসুমে নদীর উজানের পানি মজুদ করা সম্ভব হচ্ছে। মজুদ পানি চারটি ক্যানেলের মাধ্যমে নকলা, নালিতাবাড়ী, হালুয়াঘাট ও ফুলপুর উপজেলার কিছু অংশের প্রায় ৩০ গ্রামের অনাবাদি জমি সেচের আওতায় আনা হয়েছে। দিন দিন সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানান স্থানীয়রা। রাবার ড্যামের সুবিধা পাওয়ায় বছরে ৯ কোটি টাকার অতিরিক্ত চাল উৎপাদন হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া রাবার ড্যাম ও সেতু নির্মাণ হওয়ায় নদীর দুই পাশের হাজারো জনগণের মধ্যে যোগসূত্র সৃষ্টি হয়েছে। উন্মোচিত হয়েছে অবহেলিত মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম। পাল্টে গেছে উপকারভোগী এলাকার চিত্র। উন্নত হয়েছে মানুষের জীবনমান।
উপকারভোগী কৃষক বলছেন, তারাকান্দা রাবার ড্যাম ও সেতু কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কৃষক নামমাত্র মূল্যে সেচ সুবিধা ভোগ করছেন। তাদের মতে, রাবার ড্যাম প্রকল্পটি যেন এলাকার কৃষকের আশীর্বাদে পরিণত হয়েছে। পানির সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য সব কৃষককে নিয়ে গঠন করা হয়েছে ‘তারাকান্দা রাবার বাঁধ পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি’। কৃষি কর্মকর্তারা অধিক সুবিধা ভোগে কৃষককে নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে শতাধিক কৃষক পরিবারকে রাবার ড্যামের অর্থায়নে কম্পোস্ট তৈরির প্রশিক্ষণ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও ফলদ গাছ দেয়া হয়েছে। তারা জানান, এ রাবার ড্যাম প্রকল্পটি দেশের উন্নয়নে মডেল হতে পারে। তারাকান্দা রাবার ড্যাম নির্মাণের আগে ১৯৯৬ সালে নালিতাবাড়ী উপজেলার জামিরাকান্দা এলাকায় ভোগাই নদীতে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জেলার প্রথমবারের মতো রাবার বাঁধ ও সেতু নির্মাণ করা হয়। ১১টি ক্যানেলের মাধ্যমে পৌরসভাসহ সাতটি ইউনিয়নের ১০ হাজার একর জমি সেচ সুবিধার আওতায় আনা হয়। তাতে ১২ হাজার সুবিধাভোগী কৃষক প্রতি বছর ২০ কোটি টাকার চাল অতিরিক্ত উৎপাদন করছেন। সেখানেও রয়েছে একটি সমবায় সমিতি। ওই দুইটি রাবার বাঁধের সুফল দেখে কৃষিমন্ত্রী জেলায় আর একটি রাবার বাঁধ নির্মাণের প্রচেষ্টা চালান। অবশেষে চলতি বছর নালিতাবাড়ী উপজেলার চেল্লাখালী নদীর ওপর সন্ন্যাসীভিটা এলাকায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জেলার তৃতীয় রাবার বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এতে ছয়টি ইউনিয়নের ৩ হাজার একর অনাবাদি জমি সেচের আওতায় আসে। ফলে ২৫টি গ্রামের প্রায় ৬ হাজার কৃষক পরিবার এর সুবিধা ভোগ করার আওতায় আসে। তাতে প্রতি বছর অতিরিক্ত ৮ কোটি টাকার অতিরিক্ত চাল উৎপাদন হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনায় ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে এলজিইডি। সরেজমিন দেখা যায়, উজানের দুই তীরের কৃষক এলএলপি পাম্প দিয়ে সেচের মাধ্যমে শাকসবজিসহ বোরো আবাদে স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করছেন। পাশাপাশি সেতু হওয়ায় কৃষক উৎপাদিত শাকসবজি ও সব কৃষিপণ্য সহজে বিভিন্ন শহরের হাটবাজারে সরবরাহ করে ন্যায্য দাম পাচ্ছেন। ফলে এ এলাকার এক সময়ের অবহেলিত কৃষকের জীবনমানের আমূল পরিবর্তন ঘটেছে।