পতিত জমিতে নার্সারি

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহরে পড়ে থাকা জমিতে নার্সারি গড়ে তুলে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকে। এসব নার্সারিতে ২০ টাকা থেকে শুরু করে কয়েক হাজার টাকা মূল্যের চারাগাছ বিক্রি হচ্ছে। যাতায়াত সহজ ও পছন্দ অনুসারে বিভিন্ন ধরনের গাছের চারা থাকার কারণে ক্রেতারাও ভিড় করছেন এসব নার্সারিতে। প্রতিদিন এ নার্সারিগুলোয় বিভিন্ন ফুল, ফলদ ও বনজ বৃক্ষের চারাগাছ বিক্রি হচ্ছে। পূর্বাচল উপশহরের ওপর দিয়ে কাঞ্চন-কুড়িল বিশ্বরোড সড়কের পাশে ৩০০ ফুটজুড়ে বালু নদীসংলগ্ন এসব নার্সারির অবস্থান।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাউজক) পূর্বাচল প্রকল্পের জন্য দীর্ঘ ২৩ বছর আগে জমি অধিগ্রহণ শুরু করেন। পরে আদিবাসীরা কিছু কিছু জমিতে সবজি চাষাবাদ করলেও অধিকাংশ জমি পতিত পড়ে থাকে। ২০০৩ সালের দিকে প্রকল্প এলাকায় বালু ভরাট শুরু হলে চাষাবাদের অযোগ্য হয়ে পড়ে। ২ বছর আগে ব্যাপক হারে প্লট বরাদ্দসহ প্রকল্পের সঙ্গে রাজধানীর নিবিড় যোগাযোগের জন্য কাঞ্চন-কুড়িল সড়ক চালু করা হলে রাজধানীর মানুষ পূর্বাচলে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। পূর্বাচলের ১৩ নম্বর সেক্টরের প্রায় ৩০টি বড় প্লটে গড়ে উঠেছে উন্নত মানের নার্সারি। প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে গড়ে ওঠা এসব নার্সারিতে দেশি-বিদেশি জাতের বহু চারাগাছ রয়েছে। এগুলো থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভারত আর চায়না থেকে আমদানি করা হয়েছে। এসব নার্সারিতে রয়েছে গোলাপ, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, বাগানবিলাস, স্নো-বল, ফায়ার বল, পানচিটিয়া, সালবিয়া, গন্ধরাজ, গাধা, টিটুনিয়া, জ্যানথার্স, পেঞ্চুজি, হাসনাহেনা, রঙ্গন, সূর্যমুখীসহ শতাধিক নামের ফুল গাছ। রয়েছে আম, পেয়ারা, জাম, ডালিম, লেবু, কমলা, মাল্টা, গোলাপজাম, জাম্বুরা, চায়না কমলা, কৎবেল, বেল, কামরাঙ্গা, আমড়া, জামরুল, বিলম্বি, কিউই, র‌্যামবোটা, ড্রাগনসহ কয়েকশ’ ধরনের ফলদ বৃক্ষের চারা। এছাড়া আরও রয়েছে মেহগনি, কদম, পাম্বন, নিম, অর্জুন, ছাইতানসহ শতাধিক কাঠ গাছের চারা। নার্সারিগুলোয় পাওয়া যায় মূল্যবান ক্যামিলিয়া ফুলের চারাসহ নাগাচুয়া আর পিচফলের গাছ। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব নার্সারিতে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল, ফলদ ও বনজ বৃক্ষের চারা কিনতে ভিড় জমায় স্থানীয় লোকজনসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে পূর্বাচল উপশহরে ঘুরতে আসা লোকজন। এ ব্যাপারে সুজলা পট প্লান নার্সারি মালিক নর্বাড কুইয়া বলেন, ১৯৯৫ সালে রাজধানীতে তিনি একটি কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যবসা করতেন। তখন হঠাৎ তিনি নার্সারির প্রতি আকৃষ্ট হন। এর ২ বছর পরে তিনি সাভারের আশুলিয়া এলাকায় গোলাপ, রজনীগন্ধাসহ কয়েকটি ফুল উৎপাদনের জন্য একটি প্রজেক্ট করেন। তবে তাকে নিজের অদক্ষতার জন্য লাভের হিসাব না করে আর্থিকভাবে অনেক ক্ষতির হিসাব করতে হয়েছে। এরপর থেকেই তার মনে স্বপ্ন জাগে, নিজে নিজে বিভিন্ন প্রজাতির চারা উৎপাদন করে একটি নার্সারি করবেন। ২০১২ সালে তিনি রাজধানীর গুলশানে বারিধারা এলাকায় তার স্ত্রী সুজলা কুইয়ার নামে একটি নার্সারি গড়ে তোলেন। শহরের মানুষ যাতে সহজে বহন করে নিজ বাড়ির আঙিনা ও ছাদের ওপর রোপণ করতে পারেন, সেজন্য মাটির পটের মধ্যে গাছ উৎপাদন করে তা বিক্রি করতে শুরু করেন। এ নার্সারি থেকে চারা বিক্রি করে বেশ পরিচিতি পেয়েছেন। কিন্তু বছরখানেক আগে হঠাৎ পুলিশ এসে তার স্বপ্নের নার্সারি ভেঙে ফেলে। তারপরও তিনি বসে থাকেননি। ১ বছর আগে তিনি রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহরের কাঞ্চন-কুড়িল বিশ্বরোড সড়কের পাশে বালু নদীর কাছাকাছি ২ বিঘা পতিত জমিতে ‘সুজলা পট প্লান’ নার্সারি গড়ে তোলেন। সে নার্সারিতে পাঁচ কর্মচারী রোপণ করা চারাগুলোর পরিচর্যা করেন। প্রতিদিন নার্সারির মালিক নর্বাড কুইয়া ও তার স্ত্রী সুজলা কুইয়া এসে নার্সারির দেখাশোনা করেন। বর্তমানে নার্সারি করে স্থানীয় এলাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বেশ সুখ্যাতি অর্জন করেছেন। এদিকে নর্বাড কুইয়ার এ নার্সারির সফলতা দেখে সিকান্দার হোসেন, মোঃ জাকির, রাজ্জাক, হানিফ মিয়া, আক্কাস আলীসহ অনেকেই তার এ নার্সারির পাশে পতিত জমিতে নার্সারি করে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছেন। এসব নার্সারিতে যেমন বিভিন্ন প্রজাতির ফুল, ফলদ ও বনজ বৃক্ষের চারা উৎপাদন করে তা বিক্রি করে নার্সারির মালিকরা লাভবান হচ্ছেন, তেমনি সেখানে কাজ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখে আছেন কর্মচারীরা। নার্সারি গাছ কিনতে আসা শামীম ভূইয়া বলেন, আমাদের এ এলাকায় তেমন ভালো কোনো নার্সারি নেই, যার দরুন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে উন্নত জাতের ফুল ও ফলদ গাছ কিনে আনতে হতো। দামও পড়ত অনেক বেশি। বহন করে আনাও ছিল বেশ কঠিন। কিন্তু পূর্বাচলের ভেতরে এমন সুন্দর নার্সারি গড়ে ওঠার কারণে দেশি-বিদেশি অনেক জাতের গাছ এখান থেকে বেশ কম দামে কিনে খুব সহজে বহন করতে পারছি। বাড়িতে ইচ্ছেমতো গড়ে তুলতে পারি শখের বাগান। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুরাদুল হাসান বলেন, পূবার্চল উপশহরের পতিত জমিতে অনেকগুলো নার্সারি গড়ে উঠেছে। নার্সারি একটি লাভজনক ব্যবসা।