সবজি উত্পাদনে প্রশংসনীয় সাফল্য

বিশ্বে চীন ও ভারতের পরেই বাংলাদেশ এখন তৃতীয় সবজি উত্পাদনকারী দেশ। প্রতি বছর বিশ্বের ৫০টি দেশে প্রায় সাত শত কোটি টাকার সবজি রপ্তানি হইতেছে। পাশাপাশি কৃষিনির্ভর উদ্যোক্তার সংখ্যাও ক্রমশ বৃদ্ধি পাইতেছে, যাহা একদিকে যেমন বেকারত্ব হ্রাসে ভূমিকা রাখিতেছে, অন্যদিকে অর্থনীতির চাকাকেও সচল রাখিতেছে। ইহা নিঃসন্দেহে দেশের জন্য বড় একটি অর্জন।
সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিরলস প্রচেষ্টাকে এই অর্জনের অন্যতম অনুঘটক হিসাবে উল্লেখ করা যায়। তথাপি সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, এ দেশের কৃষিতে আরো ব্যাপকভাবে উন্নত প্রযুক্তি এবং পরিবেশ উপযোগী উন্নত বীজের ব্যবহার নিশ্চিত করা হইলে অতিরিক্ত আরো ৩০ শতাংশ সবজি উত্পাদন করা সম্ভব হইবে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৪০ বত্সরে বাংলাদেশে সবজির উত্পাদন পূর্বের তুলনায় পাঁচগুণ বাড়িয়াছে। বিষয়টি আশা জাগানিয়া হইলেও আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটানোর প্রয়োজনে সবজির উত্পাদন আরো বাড়াইতে হইবে। পুষ্টিবিদদের মতে, একজন মানুষের প্রতিদিন ২২০-২২৫ গ্রাম সবজি খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশের লোকজনের খাদ্য তালিকায় এখনো সবজির পরিমাণ মাত্র ৭০-৯০ গ্রাম। সবজি উত্পাদনে অধিকতর সাফল্য অনিবার্যভাবে এই অবস্থার উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখিবে।
দেশের প্রচলিত কৃষি ব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়নকল্পে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে আরো অধিক মনোযোগী হইতে হইবে। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে পর্যাপ্ত পরিমাণ সবজি সংরক্ষণাগার নির্মাণ করিতে হইবে। কেননা সবজির উত্পাদন হইতে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাইতেই প্রতিবত্সর প্রায় শতকরা ৪০ ভাগ সবজি নষ্ট হইয়া যায়। সবজি উত্পাদনকারী কৃষক ন্যায্যমূল্য পাইতেছে কিনা— তাহার তদারকিও আবশ্যক। ন্যায্যমূল্য না পাইলে সবজি চাষে তাহারা নিরুত্সাহিত হইবে, যাহা কৃষি ব্যবস্থায় নেতিবাচক পরিস্থিতির জন্ম দিবে এবং উত্পাদন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করিবে। যুব উন্নয়নসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আওতায় বেকার যুবকদের কৃষিভিত্তিক প্রশিক্ষণ  প্রদান করিতে হইবে। প্রয়োজনে তাহাদের জন্য সহজশর্তে ঋণের ব্যবস্থাও গ্রহণ করিতে হইবে। পাশাপাশি রপ্তানি বাণিজ্যে নিজেদের অবস্থান আরো সুদৃঢ় করিতে সবজির আদর্শমান যাচাইয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করিতে হইবে সরকারি উদ্যোগে। কৃষকদের নিকট উন্নতমানের সার, বীজ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ সরবরাহ যাহাতে নিশ্চিত হয়—এই ব্যাপারেও নজরদারি আবশ্যক। সামগ্রিকভাবে কৃষির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্যই বলা যায়।