তুলা চাষে লাভ দেখে ঝুঁকছেন কৃষক

শেরপুরের নকলায় কার্পাস তুলা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন উপজেলার চন্দ্রকোণা ও চরঅষ্টধর ইউনিয়নের চাষি। তুলা চাষে সংসারে সচ্ছলতা আসায় অন্য ইউনিয়নের চাষিও আগ্রহী হচ্ছেন। অনুর্বর জমি ও কম পুঁজিতে নামেমাত্র শ্রমে সরকারি সহযোগিতা পাওয়ায় দিন দিন উপজেলায় তুলা চাষির সংখ্যা পরিমাণে বাড়ছে। তাদের উৎপাদিত তুলা সরাসরি তুলা উন্নয়ন বোর্ড ন্যায্য দামে কিনে নিচ্ছে।
সরেজমিন জানা যায়, উপজেলায় সরকারি সহযোগিতায় ২০১৫ সালে পরীক্ষামূলকভাবে উন্নত জাতের তুলা চাষ করা হয়। শেরপুরে জেলা ইউনিট কর্মকর্তা মোঃ ইসমাইল হোসেন জানান, প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে সরকারি সহায়তায় ১৮ এবং ব্যক্তি মালিকানায় ১৭ থেকে ২০ কৃষক সিবি-১২ এবং হাইব্রিড প্রজাতির রুপালি-১ জাতের তুলার চাষ করছিলেন। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের আগ্রহ বেড়ে যায়। তবে কিছু কিছু ক্ষেতে এসিট, জেসিট, আমেরিকান বোলওয়ার্ম, স্পটেট বোলওয়ার্ম ও আঁচা পোকার অক্রমণ দেখা দিয়েছিল। এতে তুলা চাষি কীটনাশকের বদলে ফেরোমেন ফাঁদ ও পার্চিং পদ্ধতিতে বেশ উপকার পেয়েছেন। সাব কটন ইউনিট অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ৯০০ শতাংশ জমিতে রুপালি-১ জাতের তুলা চাষ করা হয়েছে। তার মধ্যে সরকারি সহযোগিতায় ৩৯০ শতাংশ জমিতে এবং ৫১০ শতাংশ জমিতে কৃষক নিজ অর্থায়নে চাষ করেছেন। ভালো ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় আগামীতে চাষির সংখ্যা অনেক বাড়বে।
তারা বলেন, এ দেশে আমেরিকান, ইজিপসিয়ান, ইন্ডিয়ান ও পাকিস্তানি জাতের তুলা চাষ হলেও রুপালি-১ জাতের তুলা অধিক ফলনশীল। তাই কৃষক রুপালি-১ জাতের তুলা চাষেই আগ্রহী বেশি। প্রত্যন্ত অঞ্চলে তুলা চাষ ছড়িয়ে দিতে সম্প্রসারিত তুলা চাষ প্রকল্প (ফেজ-১) সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। তুলাচাষি জাংগীড়ার পাড়ের আরিফুজ্জামান রঞ্জু, আসাদ, হাসান ও নজরুল, রামপুরের রহমত উল্লাহ, চন্দ্রকোনার সাজু সাঈদ সিদ্দিকী ও নূরে আলম সিদ্দিকীসহ অনেকেই বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ালে অনেক অনুর্বর ও অনাবাদি জমিতে তুলা চাষ করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব। তাদের মতে, অনুর্বর জমিতে তুলা চাষ করায় একদিকে যেমন জমির সুষ্ঠু ব্যবহার হচ্ছে, অন্যদিকে বেশ টাকাও   আসছে। নকলা সাব কটন ইউনিট কর্মকর্তা শহিদুর রহমান ও প্রেষণে আসা কর্মকর্তা তোফায়েল আলম বলেন, নকলা উপজেলার সব ইউনিয়নে তুলা চাষ করা সম্ভব। তারা জানান, তুলা গ্রীষ্মকালীন ফসল। মে মাসের শেষ ভাগে বা জুনের শুরুতে তুলা বীজ বপন করতে হয়। তুলার ভালো ফলনের জন্য গড়ে ২৩.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং বাৎসরিক গড় বৃষ্টিপাত ৬৩৫ থেকে ১০১৬ মিলিমিটার হওয়া উত্তম। ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার গভীরতায় চাষ করে হেক্টরপ্রতি ২৭৭ কেজি অস্থিচূর্ণ, ৯.৫ টন থেকে ১৩.৮ টন গোবর বা সবুজ সারসহ পরিমিত পরিমাণে ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি সার ব্যবহার করলে ফলন ভালো হয়। আর জাত ভেদে বীজ বুনতে হয় ৭.৫ থেকে ১৮ কেজি। গত বছরের সফল তুলা চাষি মোকসেদ মাস্টার বলেন, ৬ মাস পর ওই ফসল সংগ্রহ করা যায় জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে।
বিঘাপ্রতি উৎপাদন হয় বীজসহ ১০ থেকে ১২ মণ, বীজ ছাড়া ৫ থেকে ৬ মণ। যার খোলা বাজারে মূল্য ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু সরকারি সহযোগিতা নেয়ায় তুলা উন্নয়ন বোর্ড বীজসহ কিনে নেয় ২ হাজার ১০০ টাকা প্রতি মণ হিসেবে। ফলে বিঘাপ্রতি কৃষক দাম পাচ্ছেন ২২ থেকে ২৬ হাজার টাকা। বিঘাপ্রতি সব মিলিয়ে খরচ হয় ১৫ হাজার টাকা। খরচের মধ্যে বিঘাপ্রতি ৬ হাজার টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। ফলে কৃষকের পকেট থেকে ব্যয় মাত্র বিঘাপ্রতি ৯ হাজার টাকা। সে হিসাবে কৃষকের বিঘাপ্রতি লাভ হচ্ছে ১৩ থেকে ২০ হাজার টাকা। এমন জমিতে অন্য কোনো ফসল পাওয়া কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর বলেন, মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার মধ্যে খাদ্যের পরেই বস্ত্রের স্থান। আর এ বস্ত্রের ৭০ ভাগ আসে তুলা থেকে। যেসব এলাকায় পতিত জমি আছে সেসব এলাকার কৃষককে তুলা চাষে আগ্রহী করতে নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন নকলার কৃষি কর্মকর্তারা।