সুদিন ফিরেছে ইলিশের অর্থনীতিতে নতুন আশা

সুদিন ফিরছে রুপালি ইলিশের। এবার রেকর্ড সংখ্যক ইলিশ ধরা পড়ায় দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে নতুন আশার সঞ্চার হচ্ছে। মৎস্য অধিদফতরের তথ্য মতে, কয়েক মাসে প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ ধরা পড়েছে এ অঞ্চলের নদী, সাগরে। বরিশাল ইলিশ মোকামেই দৈনিক প্রায় ৩ কোটি টাকার ইলিশ বিক্রি হয়েছে। এ চিত্র ৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড।
এদিকে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট দাবি করেছে, মা ইলিশ রক্ষায় সফলতার কারণে এবার আগের চেয়ে প্রায় ১০ হাজার কোটি পোনা যুক্ত হয়েছে। যে কারণে নতুন বছরও ইলিশ উৎপাদনে আগের রেকর্ড টপকাতে পারে। বরিশাল মৎস্য অধিদফতরের বিভাগীয় উপপরিচালক বজলুর রশিদ বলেন, অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ায় সরকার ইলিশকে ব্র্যান্ডিং করার উদ্যোগ নিয়েছে। বরিশালের ৬ জেলার মৎস্য অধিদফতরের তথ্য মতে, অক্টোবর ও নভেম্বরে প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। সূত্র মতে, বরিশাল জেলায় চলতি বছর ৪০ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। তবে গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ৩৩ হাজার মেট্রিক টন। বরগুনায় গত বছর ৬২ হাজার ৭২২ মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ হলেও এবার প্রায় ৯৩ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ ধরে বাজারে বিক্রি করেছেন জেলেরা। ভোলায় ১ লাখ ২ হাজার ৫৫৯ মেট্রিক টন রেকর্ড সংখ্যক ইলিশ আহরণ হয়েছে বলে জানান সেখানকার অফিস সহকারী আরিফুল ইসলাম। উপকূলীয় এলাকা পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. আবুল হাসানাত বলেন, গত বছর প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ হয়েছে। এবার তা ছাড়িয়ে ৪২ থেকে ৪৫ মেট্রিক টন পর্যন্ত পৌঁছেছে। পিরোজপুরে এ বছর ৪ হাজার ২০০ মেট্রিক টন, ঝালকাঠীতে ৬ মাসে সাড়ে ৪০০ মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ হয়েছে। বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, রেকর্ড সংখ্যক ইলিশ ধরা পড়ায় মনে হচ্ছে ইলিশের সুদিন ফিরে আসছে। এবার দক্ষিণাঞ্চলে ইলিশের ছড়াছড়িতে সর্বনিম্ন দরে ইলিশ কিনতে পেরেছেন সাধারণ মানুষ। বরিশাল মৎস্য আড়তদার সমিতির সভাপতি অজিত দাস বলেন, এবার এতো বেশি ইলিশ ধরা পড়েছে যে জেলে, আড়তদার, বিক্রেতা সবাই লাভের মুখ দেখেছেন। এমনটা ধরে রাখতে পারলে অর্থনৈতিক অবস্থা পাল্টে যাবে। পিরোজপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, সবার ভাবতে হবে ইলিশের মতো সোনার হাঁস ধ্বংস করা যাবে না। এ বছরের ইলিশ উৎপাদনের পরিমাণ ২/১ বছর ধরে রাখতে পারলে এ অঞ্চলের মৎস্যজীবীদের অর্থনৈতিক অবস্থা পাল্টে যাবে। জাতীয় ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন সিকদার বলেন, এভাবে ইলিশের ব্যাপক উৎপাদন অব্যাহত থাকলে জেলেদের অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে। তবে জাতীয় এ সম্পদ বৃদ্ধির জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ আনিছুর রহমান বলেন, মা ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞাকালে গত বছর প্রায় ২৯ থেকে ৩০ হাজার কোটি ইলিশ পোনা যুক্ত হয়েছে। ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞাকালে তাদের দুইটি টিম ভোলা-চাঁদপুর জোন, হাতিয়া-মনপুরা জোনে অবস্থান করেছে। তাদের গবেষণা মতে, এ বছর ৪০ হাজার কোটি পোনা ইলিশ যুক্ত হতে পেরেছে, যা গত বছরের চেয়ে ১০ হাজার কোটি বেশি। বরিশাল মৎস্য অধিদফতরের মৎস্য কর্মকর্তা (হিলসা) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, এবার নদী-সাগরে পর্যাপ্ত পানি ছিল, বৃষ্টিপাতও হয়েছে বেশ। জাটকা নিধন বন্ধে তাদের অভিযান ছিল ব্যাপক। বরিশাল জেলায়ই এ বছর ৪০ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ৭ হাজার মেট্রিক টন বেশি। বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, এবার ইলিশের আহরণ বিস্ময়কর। ৪ থেকে ৫ বছরের চেয়ে এবার বরিশালের পোর্ট রোড ইলিশ মোকাম ও কলাপাড়ার মহিপুর মৎস্য মোকামে ৭ থেকে ৮ গুণ ইলিশ আমদানি বেড়েছে। তিনি বলেন, সরকারের ইলিশ রক্ষায় নানা প্রচেষ্টা বিশেষ করে জেলেদের সহায়তা, নিষেধাজ্ঞার সময় বাড়ানোর কারণে আমরা প্রচুর ইলিশ পাচ্ছি। তিনি বলেন, এমনটা অব্যাহত থাকলে গোটা বরিশাল বিভাগের অর্থনৈতিক অবস্থা কেবল ইলিশের মাধ্যমেই পাল্টে যাবে।