দ্রুত এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতুর কাজ

পদ্মা সেতুর প্রথম শুরু হওয়া মূল পাইলিংয়ের কাজ এগিয়ে চলছে। ৩ মিটার ব্যাসের ৪০০ ফুট দীর্ঘ পাইলটি ৪০ ফুট ভেতরে প্রবেশ করেছে। অন্যদিকে নদীর মাঝে চলছে ড্রেজিং ও অন্তর অন্তর পিলার পাইলিংয়ের কাজ। চীনের প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, নতুন বছরের জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারি মাসে দুইটি পিলারের ওপর স্প্যান-গার্ডার বসিয়ে দেয়া সম্ভব হবে। এতে পদ্মা নদীর বুকের ওপর সেতু আকৃতি স্পষ্ট হবে। অর্থাৎ বছর শেষ হলেই পিলারের ওপর ভর করে দাঁড়াবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।
এভাবে একটির পর একটি করে পিলারের ওপর ১৫০ মিটার দীর্ঘ ৪১টি স্প্যান (মাওয়া থেকে জাজিরা পর্যন্ত) দিয়ে গড়ে উঠবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা বহুমুখী সেতু। সেতুটির কাজ শেষ হলে ৭৭ হেক্টর এলাকাজুড়ে পর্যটকদের জন্য থাকবে আবাসনের পাশাপাশি আধুনিক সব সুবিধা। পদ্মা সেতুর কর্মযজ্ঞে দুই হাজার দেশি-বিদেশিসহ প্রায় ২০ হাজার কর্মী নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। বিদেশিদের মধ্যে ৫০০ নারী কর্মী রয়েছেন। পালাক্রমে রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছেন তারা। এ ২০ হাজারের বাইরে নিরাপত্তায় রয়েছে সেনাসদস্যরা। এছাড়া পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন তো রয়েছেই। সবার মধ্যেই নতুন উদ্দীপনা কাজ করছে।
সেতুর দুই পিলারের মধ্যে গাড়ি চলাচলের স্থানকেই স্প্যান বলা হয়। মাওয়ার কুমারভোগ-সেতু ইয়ার্ডের সি (নাইন) থেকে বার্জে করে নদীর পাড়ের ট্রাস ফেব্রিকেশন ইয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে মেম্বার ও জয়েন্ট যোগ করে একেকটি স্প্যান তৈরির প্রস্তুতির কাজ চলছে। সেতুর স্প্যান তৈরির কাজ শুরুর পাশাপাশি সেতু এলাকা এখন ভারি ভারি নির্মাণ কাজের যন্ত্রে ছেয়ে গেছে। চারদিকেই কাজ আর কাজ। জাজিরা প্রান্তে মূল সেতুর পাইলিংয়ের কাজও এগোচ্ছে। জাজিরার ৩৭, ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারে প্রথম ধাপের দুইটি স্প্যান বসানো হবে। এদিকে পদ্মা নদীতে পাইল স্থাপনের পাশাপাশি তীরের ভায়াডাক্টের (সংযোগ সেতুর) মূল পাইলও স্থাপন চলছে।
সেই সঙ্গে ৮ আগস্ট মূল পাইল স্থাপন শুরু হয়েছে। জাজিরা প্রান্তের ২২ নম্বর পিলারের একটি পাইল স্থাপন শুরু হয়েছে। সেখানে একযোগে আরও তিনটি পাইল স্থাপনের কাজ চলছে এখন। মাওয়ায় ১ কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ ট্রাস ফেব্রিকেশন ইয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, গেল সপ্তাহে চীন থেকে আনা মেম্বার, জয়েন্টসহ বিভিন্ন অংশ সংযুক্ত করার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। মূল সেতু তৈরির জন্য মাওয়া থেকে জাজিরা পর্যন্ত একের পর এক ৪১টি স্প্যান বসানো হবে। চায়না রেলওয়ে সানহাইগুয়ান ব্রিজ গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডের (সিআরএসবিজি) অধীনে চীনের সিনহোয়াংদাওয়ের কারখানায় স্প্যানের বিভিন্ন অংশ তৈরি হচ্ছে। সিনহোয়ান বন্দর থেকে জাহাজে করে মংলা বন্দর হয়ে পরে বার্জে করে চাঁদপুর হয়ে মাওয়ায় আনা হচ্ছে। প্রথম চালানের প্রথম বার্জটি মাওয়ায় আসে ৮ আগস্ট।
বর্তমানে মাওয়ায় পদ্মাতীরের অদূরে ট্রাস ফেব্রিকেশন ইয়ার্ডে সেতুর উপরিভাগের (স্প্যান) জয়েন্টের কাজ চলছে। তীব্র বায়ুপ্রবাহ ও ভূমিকম্পজনিত ধাক্কা মোকাবিলায় বেছে নেয়া হয়েছে ওয়ারেন ট্রাস ফর্ম। চীন ও বাংলাদেশের শ্রমিকরা যৌথভাবে সেতুর জয়েন্ট, সেকশন, গার্ডার, টপ কর্ড ও বটম কর্ড অংশের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। এগুলোর বেশিরভাগ কাজই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে হচ্ছে। মাওয়া পয়েন্টে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়কে থাকা ব্রিজ, সংযোগ সড়কের পাশের সার্ভিস রোড তৈরি করা হচ্ছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের (মূল সেতু) নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মোঃ আবদুল কাদের জানান, কাজের গতি আরও বাড়াতে চীন থেকে আনা হচ্ছে আরেকটি শক্তিশালী হ্যামার ও ফ্লোটিং ক্রেন। এ মাসের শেষ দিকে মাওয়ায় এসে পৌঁছবে আরেকটি স্প্যান। তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত যে স্প্যান চীন থেকে এসেছে, তা মাওয়া অংশে ওয়ার্কশপে জয়েন্ট দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে একটির কাজ শেষ হয়ে অন্যটির কাজ চলছে। সেতুর নকশা পরিকল্পনা অনুযায়ী, উপরের অংশের সোনালি রঙের দুইটি স্প্যানের মধ্যে ৩৪টি জয়েন্ট হবে। ওয়ার্কশপে এখন পর্যন্ত চারটি জয়েন্টের কাজ শেষ হয়েছে। একেকটি জয়েন্টের ওজন ৪৮ থেকে ৬০ টন।