ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার কৃষক মনে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। এ সার প্রয়োগে ব্যয় কমে বেড়েছে আয়। অন্যদিকে দিন দিন উৎপাদন ক্ষমতা ফিরে পাচ্ছে ফসলি জমি। ফলে একদিকে কৃষক যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, অন্যদিকে রাসায়নিক সারের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পাচ্ছে কৃষি জমি। শুধু তা-ই নয়, প্র্রাকৃতিক লাঙল নামে খ্যাত কেঁচো দিয়ে উৎপাদিত এ জৈব সার প্রয়োগের ফলে ফসলের উৎপাদন বাড়ছে প্রায় দ্বিগুণ।
ভার্মি কম্পোস্ট তৈরিতে মাতৃকেঁচো ও রিং বা পাত্র কেনা ছাড়া নেই বাড়তি কোনো খরচ। বিশেষ করে সবজি চাষে ভার্মি কম্পোস্ট জাদুর মতো কাজ করে। কৃষি গবেষকরা বলছেন, এ সার প্রয়োগে জমির উৎপাদন ক্ষমতা না কমে বরং দিন দিন বাড়ছে। তারা জানান ভার্মি কম্পোস্ট প্রয়োগের ফলে কৃষক বিষমুক্ত শাকসবজি বা যে কোনো ফসল ঘরে তুলতে পারছেন। তাদের উৎপাদিত কেঁচো সার নিজেরা ব্যবহারের পর অবশিষ্ট সার অন্যের কাছে বিক্রি করলে বিদেশ থেকে উচ্চ মূল্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক সার কিনে আনতে হবে না। সার আমদানির কোটি কোটি টাকা বেঁচে যাবে। তাতে কমবে উৎপাদন খরচ, পক্ষান্তরে বাড়বে আয়। কথা হয় নকলা উপজেলার প্রথম ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনকারী বাছুর আলগার জান্নাতুল ইসলাম বাদল, কৃষ্ণপুরের আবদুর রশিদ, সাদির, হাফিজুরসহ বেশকিছু কৃষকের সঙ্গে। তারা জানান, একটি রিং বা চাড়িতে আধা কেজি কেঁচো দিয়ে ২ মাস পর পর ২০ কেজি সার ও আধা কেজি নতুন কেঁচো উৎপাদন করা যায়। ১২ থেকে ১৫ টাকা করে প্রতি কেজি সার ও ১ হাজার ৫০০ টাকা দরে আধা কেজি কেঁচো বিক্রি করা হয়। তাতে একটি মাত্র রিং দিয়ে বছরে কেঁচো থেকে ৮ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা এবং সার বাবদ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা আয় করা যায়। সেই হিসাব অনুযায়ী কোনো কৃষকের ২০টি রিং থাকলে গড়ে তার মাসিক আয় হবে ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা।
কৃষক রশিদ জানান, ৩০০ টাকা দিয়ে একটি রিং, ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে আধা কেজি কেঁচো, কলা গাছের কুচি ও সামান্য শুকনা গোবর ব্যবহার করে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন করছেন। ২ মাসেই খরচের টাকা তুলে ফেলেছেন। এখন প্রতি দুই মাস অন্তর আধা কেজি কেঁচো ও ২০ কেজি করে সার উৎপাদন হচ্ছে। উপজেলার সর্বপ্রথম ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদনকারী জান্নাতুল ইসলাম বাদল বলেন, ২০১৪ সালে ময়মনসিংহ হর্টিকালচার সেন্টার থেকে ভার্মি কম্পোস্টের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। সেখান থেকে প্রাপ্ত বিনামূল্যের আধা কেজি কেঁচো ও প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এ পর্যন্ত ২ হাজার টাকা কেজি হিসেবে কয়েক কেজি কেঁচো ও ১২ থেকে ১৫ টাকা কেজি হিসেবে ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকার ভার্মি কম্পোস্ট বিক্রি করেছেন তিনি। বর্তমানে তিনি ছয়টি রিংয়ের মাধ্যমে ওই সার ও কেঁচো উৎপাদন করছেন।