দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো পদ্মা সেতু প্রকল্পে ৩৭টি পাইল স্থাপন করা হয়েছে। চীন থেকে এসেছে চারটি স্প্যান।
মূল সেতুর আনুষ্ঠানিক পাইলিং শুরুর এক বছর পূর্তি হচ্ছে আজ। এ পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ হয়েছে ৩৮ শতাংশ। এ অবস্থায় আগামী মাসে জাজিরায় সেতুর দুটি স্প্যান বসবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জাজিরায় সেতুর ট্রানজিশন পিলারের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। মূল সেতুর শেষ প্রান্তে ৪২ নম্বর পিলারে চলছে পাইল স্থাপনের কাজ। জাজিরা প্রান্তের পাইলটিই মূল সেতু এবং সংযোগ সেতুর বন্ধন তৈরি করবে। তাই ট্রানজিশন পিলারে ১৬টি পাইল স্থাপন হচ্ছে। জাজিরা প্রান্তে রীতিমতো চলছে কাজের ধুম। পাইল স্থাপন হয়ে যাওয়ায় ৩৭ নম্বর পিলারকে কংক্রিটিং করে পরবর্তী কাজগুলো এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ৩৮ নম্বর পিলারে ছয়টি পাইল ও ৩৯ নম্বর পিলারে বসেছে চারটি পাইল। এ ছাড়া নদীর ভেতরে আরো সাতটি পিলারে তিনটি করে পাইল স্থাপন হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে নদীতে ৩৭টি পাইল স্থাপন হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে পাইল স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। মাঝ নদীর পিলারগুলোতে ছয়টি করে পাইল স্থাপন করা হলেও দুই প্রান্তের পিলারকে তৈরি করা হচ্ছে বেশি মজবুত করে। এ ক্ষেত্রে আধুনিক মেশিনে মাটি খুঁড়ে সরাসরি ৮০ মিটার গভীর এবং তিন মিটার ব্যাসের ১৬টি পাইল স্থাপন করা হবে। সেতুর ৪২টি পিলারের মধ্যে ৪০টি পিলারই পড়বে নদীর মধ্যে। সেগুলোর পাইলের গভীরতা হবে গড়ে প্রায় ১২৮ মিটার।
এদিকে সেতুর সুপারস্ট্রাকচারেরও অগ্রগতি রয়েছে। মাওয়ার কুমারভোগের ওয়ার্কশপে ফিটিং হওয়া প্রথম স্প্যানটির লোড টেস্ট চলছে। ছয় ধাপের লোড টেস্টের এখন চার ধাপ চলছে। ১৪ ডিসেম্বর এই লোড টেস্ট সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে লোড টেস্ট পরিদর্শন করে গেছেন সেতুটির বিশেষজ্ঞ প্যানেলের বাংলাদেশি পাঁচ বিশেষজ্ঞ। অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে তাঁরা প্রকল্প এলাকায় দীর্ঘ সময় অবস্থান করেন। বিশেষজ্ঞ প্যানেল নদীশাসনের বিষয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী তীরে স্লপ ঠিক রাখতে কাজ চলছে। মাওয়া প্রান্তে নদীশাসনের ড্রেজিং চলছে। আর জাজিরা প্রান্তে এই ড্রেজিংয়ের পাশাপাশি বস্তা ফেলা হচ্ছে। মূল নদীশাসনের কাজ করে যাচ্ছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। নদীশাসনের আরেকটি অংশের কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
সূত্র জানিয়েছে, মাওয়া প্রান্তের উজানে জসলদিয়া-কান্দিপাড়া এলাকায় ১ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এলাকায় নদীশাসনের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে সেনাবাহিনী। গর্ত হয়ে থাকা নদীর তলদেশে ২৫০ কেজি বস্তা ফেলে সমতল করার পরই ফেলা হচ্ছে দুই ফুট উচ্চতার ব্লক। এ অংশে ২৫ লাখ ব্লক ফেলার পরিকল্পনা রয়েছে।
শুক্রবার সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সেতু এলাকা পরিদর্শন করেছেন। মন্ত্রী মাওয়ার কুমারভোগ ওয়ার্কশপে লোড টেস্টে থাকা প৩্রথম স্প্যানটি দেখেন এবং কাজের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন।