বাঙালির ঐতিহাসিক ‘মুক্তির সংগ্রাম’-এর প্রকৃত অর্জন বা বিজয় বিবেচনার জন্য বিগত সাড়ে চার দশকে অর্থনৈতিক উন্নয়নে স্বয়ম্ভরতা অর্জনের প্রত্যয় ও প্রতীতির স্বরূপ পর্যালোচনার প্রসঙ্গটি বিজয় দিবসের ভাবনায় এসেই যায়। প্রথমেই আসে সমন্বিত উদ্যোগের প্রেরণার প্রসঙ্গ, যেমনটি মতবাদ হিসেবে করপোরেট কালচার, আধুনিক শিল্প ও বাণিজ্য ব্যবস্থাপনায় বিশেষ বিবেচনা ও ব্যাপক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে।
পুঁজিবাদী উৎপাদনব্যবস্থায় অংশীদারি হিসেবে শ্রমের মূল্যায়ন সরাসরি স্বীকৃত না হলেও এটি অনিবার্য উপলব্ধিতে পরিণত হয়েছে যে কোনো উৎপাদন ও উন্নয়ন উদ্যোগে ভূমি, শ্রম ও পুঁজি ছাড়াও মালিক-শ্রমিক সব পক্ষের সমন্বিত ও পরিশীলিত প্রয়াস-প্রচেষ্টাই সব সাফল্যের চাবিকাঠি। মানবসম্পদ উন্নয়ন কার্যক্রমের দ্বারা দক্ষতা ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি ছাড়াও সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়াসকে সমাজবিজ্ঞানীরা জাতিগত উন্নয়নে করপোরেট কালচারের প্রেরণা হিসেবে শনাক্ত করেন। স্থান-কাল-পাত্রের পর্যায় ও অবস্থানভেদে উন্নয়ন ও উৎপাদনে সবাইকে একাত্মবোধের মূল্যবোধে উজ্জীবিত করার প্রেরণা হিসেবে শিল্পোন্নত বিশ্বে করপোরেট কালচারকে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশ্নে গোটা দেশবাসীকে ভাববন্ধনে আবদ্ধকরণে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করে সমাজে কিংবা সংসারে, এমনকি যেকোনো কায়কারবারে সবার সুচিন্তিত মতামত প্রকাশের সুযোগ, কর্তব্য পালনে দৃঢ়চিত্ত মনোভাব পোষণ, উদ্দেশ্য অর্জন তথা অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর ঐকান্তিক প্রয়াসে সমর্পিতচিত্ত ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস যেমন জরুরি মনে করা হয়, তেমনি জাতীয় উন্নয়ন প্রয়াস-প্রচেষ্টায়ও সমন্বিত উদ্যোগের আবশ্যকতা একইভাবে অনস্বীকার্য। জাতীয় সঞ্চয় ও বিনিয়োগে থাকা চাই প্রত্যেক নাগরিকের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অবদান। অপচয়-অপব্যয় রোধ, লাগসই প্রযুক্তি ও কার্যকর ব্যবস্থা অবলম্বনের দ্বারা সীমিত সম্পদের সুষম ব্যবহার নিশ্চিতকরণে সবার মধ্যে অভ্যাস, আগ্রহ ও একাগ্রতার সংস্কৃতি গড়ে ওঠা দরকার। নাগরিক অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা ও উপলব্ধির জাগৃতিতে অনিবার্য হয়ে ওঠে যে নিষ্ঠা ও আকাঙ্ক্ষা, তা অর্জনের জন্য সাধনার প্রয়োজন, প্রয়োজন ত্যাগ স্বীকারের। দায়দায়িত্ব পালন ছাড়া স্বাধীনতার সুফল ভোগের দাবিদার হওয়া বাতুলতা মাত্র। ‘ফেল কড়ি মাখ তেল’ কথাটি এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রযোজ্য এ জন্য যে উৎপাদনে সক্রিয় অংশগ্রহণ না করেই ফসলের ন্যায্য অধিকারপ্রত্যাশী হওয়া স্বাভাবিক বা সংগত নয়। কোনো কিছু অর্জনে বর্জন বা ত্যাগ স্বীকার যেমন জরুরি, তেমনি প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মাঝে বাস্তবতা এ জানান দেয় যে ‘বিনা দুঃখে সুখ লাভ হয় কি মহিতে?’
প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সব প্রয়াস-প্রচেষ্টায় সমন্বয়ের মাধ্যমে সার্বিক উদ্দেশ্য অর্জনের অভিপ্রায়কে অয়োময় প্রত্যয় প্রদান সমাজ উন্নয়নের পূর্বশর্ত। একজন কর্মচারীর পারিতোষিক তার সম্পাদিত কাজের পরিমাণ বা পারদর্শিতা অনুযায়ী না হয়ে কিংবা কাজের সফলতা-ব্যর্থতার দায়দায়িত্ব বিবেচনায় না এনে যদি দিতে হয় অর্থাৎ কাজ না করেও সে যদি বেতন পেতে পারে, তাহলে দক্ষতা অর্জনের প্রত্যাশা আর দায়িত্ববোধের বিকাশভাবনা মাঠে মারা যাবেই। এ ধরনের ব্যর্থতার বজরা ভারী হতে থাকলেই যেকোনো উৎপাদনব্যবস্থা কিংবা উন্নয়ন প্রয়াস ভর্তুকির পরাশ্রয়ে যেতে বাধ্য। দারিদ্র্য-পীড়িত জনবহুল কোনো দেশে পাবলিক সেক্টর বেকার ও অকর্মণ্যদের জন্য যদি অভয়ারণ্য কিংবা কল্যাণ রাষ্ট্রের প্রতিভূ হিসেবে কাজ করে, তাহলে সেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। যদি বিপুল জনগোষ্ঠীকে জনশক্তিতে পরিণত করা না যায় উপযুক্ত কর্মক্ষমতা অর্জন ও প্রয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করে, তাহলে উন্নয়ন কর্মসূচিতে বড় বড় বিনিয়োগও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে। চাকরিকে সোনার হরিণ বানানোর কারণে সে চাকরি পাওয়া এবং রাখার জন্য অস্বাভাবিক দেনদরবার চলাই স্বাভাবিক। দায়দায়িত্বহীন চাকরি পাওয়ার সুযোগের অপেক্ষায় থাকার ফলে নিজ উদ্যোগে স্বনির্ভর হওয়ার আগ্রহেও অনীহা চলে আসে। মানবসম্পদ অপচয়ের এর চেয়ে বড় নজির আর হতে পারে না। দরিদ্রতম পরিবেশে যেখানে শ্রেণি-নির্বিশেষে সবার কঠোর পরিশ্রম, কৃচ্ছ্রসাধন ও আত্মত্যাগ আবশ্যক, সেখানে সহজে ও বিনা ক্লেশে কিভাবে অর্থ উপার্জন সম্ভব সেদিকেই ঝোঁক বেশি হওয়াটা সুস্থতার লক্ষণ নয়। ট্রেড ইউনিয়ন নির্বাচনে প্রার্থীর পরিচয়ে যে অঢেল অর্থব্যয় চলে, তা যেন এমন এক বিনিয়োগ, যা অবৈধভাবে বেশি উসুলের সুযোগ আছে বলেই। শোষক আর পুঁজিবাদী উৎপাদনব্যবস্থায় বঞ্চিত-নিপীড়িত শ্রমিক শ্রেণির স্বার্থ উদ্ধারে নিবেদিতচিত্ত হওয়ার বদলে ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃত্ব নিজেরাই যখন উৎপাদনবিমুখ আর শ্রমিক স্বার্থ উদ্ধারের পরিবর্তে আত্মস্বার্থ উদ্ধারে ব্যতিব্যস্ত হয়ে শোষণের প্রতিভূ বনে যায় তখন দেখা যায় যাদের তারা প্রতিনিধিত্ব করছে, তাদেরই তারা প্রথম ও প্রধান প্রতিপক্ষ। প্রচণ্ড স্ববিরোধী এ পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে উৎপাদন, উন্নয়ন তথা শ্রমিক উন্নয়ন সবই বালখিল্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
যেকোনো অজুহাতে অপচয়-অপব্যয়, তহবিল তছরুপ, আত্মসাৎ যেকোনো সবল অর্থনৈতিক উন্নয়ন ধারাকেও করে দ্বিধান্বিত, বাধাগ্রস্ত। এসব রোধে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই। দেশের অর্থনীতিকে স্বয়ম্ভর করার মন্ত্র মানতে বিয়ের উৎসবে সামাজিকতার দোহাই দিয়ে নানা অনুষ্ঠানের নামে অর্থ অপচয়ে সংযমী হওয়ার যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত কারণ রয়েছে। দিনের বেলায়ও রাস্তার বাতি জ্বালানো, ট্যাপের মুখ খোলা রেখে পানি অপচয়ের মতো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ক্ষতির দিকটি বিদ্যুৎ আর পানি উৎপাদনে ব্যয়ের পরিমাণ বিবেচনায় এনে বুঝতে হবে। বৃক্ষরোপণে শুধু ‘দিবস’ আর ‘উচ্চ মহলের নির্দেশ মতে’ পালনের সীমারেখায় না বেঁধে একে সহজাত বোধ, উপলব্ধি ও কর্তব্য জ্ঞানে আনতে হবে। নিজের সন্তানকে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে তার প্রতিভা বিকাশে সহায়তা করাকে সর্বোচ্চ দায়িত্বজ্ঞান বিবেচনা করে নিজের ছেলেমেয়েকে পড়াশোনায় সহায়তা করে গৃহশিক্ষকতার ওপর নির্ভরশীলতা ও তার ব্যয় হ্রাস করা যেতে পারে। এ দায়িত্ব পালনের চেয়ে অলস অকর্মণ্যতায় কিংবা কোনো কর্মসূচিতে বাড়তি আয়ের পেছনে নিজেকে নিয়োজিত রাখাকে লাভজনক না ভেবে সালতামামি করে দেখা যেতে পারে কোন কর্মকাণ্ড সুদূরপ্রসারী সুফল বয়ে আনবে। উপযুক্ত রূপে সন্তানকে সমাজে সুধী ও দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে প্রেরণের নৈতিক দায়িত্বের কথা কোনো অভিভাবক উপেক্ষা করতে পারে না। অফিসে, ব্যবসায়, সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে যতটা সময় দেওয়া দরকার, তা দিয়ে নিজের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার তদারকিসহ তাদের মানসিক বিকাশবান্ধব কর্মকাণ্ড দেখভাল করা বিশেষ বিবেচনায় আনা জরুরি। প্রত্যেক নাগরিকেরই তার দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ হওয়ার মধ্যেই সুখী ও সমৃদ্ধিশালী সমাজ ও অর্থনীতি পুনর্গঠনের সুযোগ নিহিত। আগেই বলা হয়েছে, মানুষই তার পরিবেশের নিয়ন্তা। তাকে সজ্ঞান সচেতনতায় সিদ্ধান্ত নিতে হবে সাধ্যমতো দায়িত্ব পালনের। সংসার, সমাজ ও দেশের উন্নয়নে তার নিজের অংশগ্রহণকে অর্থবহ করতে ঐকান্তিক নিষ্ঠার দরকার। সংসারে নানা বাদ-প্রতিবাদে মানুষ বেড়ে ওঠে, তার দায়দায়িত্ব তদনুযায়ী নির্ধারিত হয় এবং তা যথাযথভাবে পালনে সংসারের চাকা সচল থাকে নির্দিষ্ট নিয়মে।
বিদ্যমান ব্যবস্থাপনার সংস্কার কিংবা উন্নয়নকামী যেকোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাস্তবায়ন যোগ্যতার এবং বাস্তবায়নের দৃঢ়চিত্ততার বিষয় বিবেচনা অগ্রগণ্য না হলে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আন্তরিক প্রয়াস নিশ্চিত হয় না। সীমাবদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি কিংবা ঠুনকো কার্যকারণকে উপলক্ষ করে নেওয়া পদক্ষেপ দীর্ঘস্থায়ী ফল বয়ে আনে না। শুধু নিজেদের মেয়াদকালে বাস্তবায়নযোগ্য পদক্ষেপ ও কার্যক্রম গ্রহণ করলে পরবর্তীজন পূর্ববর্তীজনের কার্যক্রমকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখার রেওয়াজ শুরু হলে টেকসই উন্নতির সম্ভাবনা সীমিত হয়ে পড়তে বাধ্য। জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য দূরদৃষ্টি রূপকল্প প্রণয়নকারীর প্রগাঢ় প্রতিশ্রুতি ও দৃঢ়প্রত্যয় প্রয়োজন হয়। সমস্যা গোচরে এলে ব্যবস্থা নিতে সব সামর্থ্য ও সীমিত সম্পদ নিঃশেষ হতে দিলে প্রকৃত উন্নয়নের জন্য পুঁজি ও প্রত্যয়ে ঘাটতি তো হবেই। তেল আনতে নুন ফুরায় যে সংসারে, সেখানে সমৃদ্ধির স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। সমস্যারা পরস্পরের মিত্র, একটার সঙ্গে একটার যেন নাড়ির যোগাযোগ। আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে ব্যক্তি নিরাপত্তার, ব্যক্তি নিরাপত্তার সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তার, সামাজিক নিরাপত্তার সঙ্গে আয়-উপার্জনের সব কার্যক্রমের কার্যকারণগত সম্পর্ক রয়েছে। দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে চাই আয়-উপার্জনের সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ। শিক্ষা কর্মদক্ষতাকে, স্বাস্থ্যসেবা কর্মক্ষমতাকে, কর্মদক্ষতা ও কর্মক্ষমতা উৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রসার ঘটবে, এটাই প্রত্যাশা। সর্বত্র সেই পরিবেশের সহায়তা একান্ত অপরিহার্য, যেখানে সীমিত সম্পদের ও সুযোগের সর্বোত্তম ব্যবহার সম্ভব। এটাকে উপেক্ষা মানে যুগপত্ভাবে অন্য অনেক সমস্যাকে ছাড় দেওয়া। সমস্যার উেস গিয়ে সমস্যার সমাধানে ব্রতী হতে হবে। এ কাজ কারো একার নয়, এ কাজ সবার। সমস্যা মোকাবিলায় প্রয়োজন সমাধানের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সমস্যা পরিপোষণের জন্য নয়। যেকোনো সংস্কারমূলক পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য জনমত সৃষ্টিতে, আস্থা আনয়নে ও একাগ্রতা পোষণে গঠনমূলক উদ্যোগ গ্রহণ অপরিহার্য। সংস্কার বাস্তবায়ন কোনোমতেই সহজসাধ্য নয় বলে সর্বত্র দৃঢ়চিত্ততা আবশ্যক। এখানে দ্বিধান্বিত হওয়া, দ্বিমত পোষণ কিংবা প্রথাসিদ্ধবাদী বশংবদ বেনিয়া মুত্সুদ্দি মানসিকতার সঙ্গে আপস করার সুযোগ থাকতে নেই। বিগত ছয় দশকে এ ভূখণ্ডে যতগুলো রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংস্কার কর্মসূচি কিংবা ধ্যানধারণা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাদের কমবেশি ব্যর্থতার পেছনে বিরুদ্ধবাদীদের বিরুদ্ধে দৃঢ়চিত্ত অবস্থান গ্রহণে অপারগতাই মুখ্য কারণ ছিল।
কম্পানি ব্যবস্থাপনার অভীষ্ট লক্ষ্য হিসেবে অনাবশ্যক ব্যয় পরিহার করে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে সমন্বয় সাধনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে পুঁজি, ভূমি ও শ্রমের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে মুনাফা অর্জন বিবেচিত হয়। জাপানে শ্রমিক-মালিকের সম্পর্ক কম্পানিগত প্রাণ। সেখানে শ্রমিক যাতে তার সর্বাধিক মনোযোগ কম্পানির জন্য দিতে পারে সে জন্য স্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে সংসারের যাবতীয় দায়দায়িত্ব বহনের ভার। কম্পানির কাজে সার্বক্ষণিক মনোযোগ দেবে স্বামী। সংসার চালানোর বিষয় নিয়ে অফিস থেকে বাসায় ফোন যাবে না—বাসা থেকে কোনো ফোন আসবে না কম্পানিতে। জাপানে নারীদের চাকরি, ব্যবসা, প্রশাসন, রাজনীতিতে বড় একটা দেখা যায় না। এর কারণ সমাজ তাদের সংসার চালানোর দায়িত্ব দিয়ে পুরুষদের উৎপাদনকর্মে পূর্ণ মনোনিবেশে সহায়তা করার দায়িত্ব দিয়েছে। স্বামীর বেতনের টাকা মাস শেষে পারিবারিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে যায়। স্ত্রী ওই হিসাব অপারেট করে। সংসারের যাবতীয় খরচপাতি স্বামীর সম্মতিতে স্ত্রীর নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়। স্বামী প্রতি সপ্তাহের শুরুর দিনে তার সাপ্তাহিক হাতখরচ বাবদ টাকা পেয়ে থাকে। সেই টাকা দিয়ে পুরো সপ্তাহ তার চলতে হয়। সুতরাং স্বামীর পক্ষে অপব্যয় কিংবা বাড়তি খরচ করার কোনো সুযোগ সেখানে নেই। পারিবারিক সঞ্চয় এভাবে প্রথাগত ব্যবস্থাদির দ্বারা উৎসাহিত হচ্ছে। জাপানের নারীরা বাইরের কাজে তেমন অবদান রাখছে না ঠিকই, কিন্তু গৃহে যে দায়িত্ব তারা পালন করে, এর আর্থিক ও তাৎপর্য মূল্য অনেক বেশি। লাগসই ভাবনা আর টেকসই উন্নতির জন্য এটি একটি ধ্রুপদী প্রয়াস।
বাংলাদেশের বিজয় দিবসের ৪৫তম বার্ষিকীতে দেশ ও সমাজ উন্নয়ন ভাবনা অর্থনৈতিক মুক্তি অভিসারীকরণের তাগিদে, অনুভূতিতে সর্বত্র যথা বিবেচনার আলোকে আলোকিত হোক, এই প্রত্যাশা।
লেখক : সরকারের সাবেক সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান