দারিদ্র্য নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর সংকল্প ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প

বাংলাদেশে দুটো অগ্রগতি খুবই দৃশ্যমান। একটি কৃষি উন্নয়ন। অপরটি দারিদ্র্যের হার হ্রাস। স্বাধীনতার পর গত ৪৪ বছরে প্রতি বছর গড়ে ৩.১ শতাংশ হারে খাদ্যশস্যের উত্পাদন বেড়েছে। তাতে মোট খাদ্য উত্পাদন বেড়েছে প্রায় ৪ গুণ। বেড়েছে জনপ্রতি খাদ্যের প্রাপ্যতা। স্থিতিশীলতা এসেছে খাদ্যশস্যের মূল্যে। অপরদিকে দ্রুত হ্রাস পেয়েছে দেশের দারিদ্র্য। এক সময় দেশের তিন চতুর্থাংশ মানুষ ছিল দারিদ্র্য সীমার নিচে। এখন দারিদ্র্যকে জয় করেছে দেশের তিন চতুর্থাংশ মানুষ। ইতোমধ্যেই যে সাফল্য অর্জিত হয়েছে তা চমকপ্রদ। বিশ্বব্যাপী অভিনন্দিত। বাংলাদেশ এখন পৃথিবীর কাছে উন্নয়নের এবং দারিদ্র্য মোচনের এক বিস্ময়।

কিছুদিন আগে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট এসেছিলেন বাংলাদেশে। তিনি দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করে গেছেন। ১৭ অক্টোবর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক গণবক্তৃতায় বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেন, অতিদারিদ্র্য বিমোচনের দিক থেকে বাংলাদেশের কাছে অনেক কিছু শেখার আছে আমাদের। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, দারিদ্র্য বিমোচনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এমন নিত্যনতুন পদক্ষেপ। বলতে দ্বিধা নেই, দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের সাফল্যের কথা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত।

এছাড়া দ্রুত আয় ও উত্পাদন বৃদ্ধি এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির সম্প্রসারণকল্পে অনেক নিত্যনতুন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে গরিব ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য বাস্তবায়ন করেছে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প।

অতিসম্প্রতি ওই প্রকল্পের স্থায়ী রূপ দেওয়া হয়েছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। দেশের দারিদ্র্য নিরসনে এ ধরনের উদ্যোগ অভিনব। গত প্রায় দুই যুগ ধরে এদেশে দ্রুত দারিদ্র্য হ্রাসে এ সকল কর্মকাণ্ড খুবই ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। অতি দারিদ্র্য হ্রাসের ক্ষেত্রে তা খুবই লক্ষণীয়।

বিশ্বব্যাংকের হিসেব অনুসারে বাংলাদেশে অতিদারিদ্র্যের হার এখন ১২.৯ শতাংশ। ২০০০ সালে তা ছিল ১৮.৫ শতাংশ। ১৯৯১ সালে ছিল ৪৪.২ শতাংশ। এ হিসেব করা হয়েছে ক্রয় ক্ষমতার সমতার ভিত্তিতে মাথাপিছু দৈনিক আয় ১.৯০ ডলার ধরে নিয়ে। বাংলাদেশি টাকায় তা জনপ্রতি মাসিক দাঁড়ায় প্রায় ১৩০০ টাকা (২০১০ সালের ক্রয় মূল্যে)। এর নিচে আয় যাদের তারা হতদরিদ্র বা চরম দারিদ্র্য সীমার নিচে অবস্থানকারী গরিব মানুষ। তাছাড়া দারিদ্র্যের হার নির্ধারণের জন্য আমরা মৃদু দারিদ্র্যসীমার কথাও বলে থাকি, যার মাসিক আয় ১৬০০ টাকার নিচে। ২০৯১ সালে ওই দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থানকারী মানুষের হার ছিল ৫৭ শতাংশ। ২০০০ সালে তা ৪৯ শতাংশে এবং ২০১০ সালে তা ৩১.৫ শতাংশে হ্রাস পায়। বর্তমানে তা ২৪ শতাংশে নেমে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০১৫-১৬ সালে পরিচালিত ‘খানা আয়-ব্যয়’ জরিপের ফলাফল প্রকাশিত হলে বিষয়টি আরো পরিষ্কারভাবে জানা যাবে। তবে বিগত দুই দশকে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার যে খুবই দ্রুত হ্রাস পেয়েছে, তা সকল হিসেব থেকেই প্রমাণিত।

বাংলাদেশে দ্রুত দারিদ্র্য হ্রাসের প্রধান কারণ উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন। ২০০৬ সাল থেকে ক্রমাগতভাবে প্রায় ৬ শতাংশ হারে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা ৭.১১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে প্রবাসী আয়। ২০০২-০৬ সময়ে গড় প্রবাসী আয় ছিল বছরে প্রায় সাড়ে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১২-১৬ সময়ে তা দাঁড়িয়েছে বছরে প্রায় ১৩.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। তাছাড়া বিগত দশকে রপ্তানি আয় বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। কৃষিখাতে বেড়েছে শস্যের উত্পাদন। নতুন পশু-পাখির খামার ও মত্স্য খামার গড়ে ওঠেছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। কুটির শিল্পের সম্প্রসারণ ঘটেছে দেশের সর্বত্র। তাতে মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, আয় বেরেছে। সেই সঙ্গে গার্মেন্টস শিল্পে মহিলাদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মতত্পরতা বৃদ্ধির ফলে দেশের মহিলাদের আয় ও ক্ষমতায়ন বেড়েছে। তাছাড়া অতিদরিদ্র মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর সম্প্রসারণ দারিদ্র্য নিরসনের জন্য সহায়ক হয়েছে। এক্ষেত্রে কৃষিখাতে উত্পাদন বৃদ্ধির বিষয়টি খুবই যত্নের সঙ্গে প্রণিধানযোগ্য। এ খাতে বিগত দশকে প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ৩ থেকে ৪ শতাংশ। শস্যখাতের উত্পাদন বৃদ্ধি খাদ্যমূল্যের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হয়েছে। তাতে বেড়েছে দানাদার শস্যের ভোগ। উপকৃত হয়েছে কম আয়ের দরিদ্র মানুষ। তাছাড়া মাছ, মাংস, ডিম ও দুধের উত্পাদন বৃদ্ধির ফলে হ্রাস পেয়েছে মানুষের পুষ্টিহীনতা। গ্রামীণ এলাকায় কৃষি ব্যবসা সম্প্রসারণের ফলে বৃদ্ধি পেয়েছে কর্মসংস্থান। এ প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করেছে গ্রামীণ রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন ও বাজার সম্প্রসারণ। বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে প্রতীয়মান হয় যে কৃষির উত্পাদন ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেলে দরিদ্র ০.৫ শতাংশ হ্রাস পায়। বাংলাদেশে বিগত ২ দশকে কৃষির উত্পাদন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। তা ছিল দ্রুত দারিদ্র্য হ্রাসের প্রধান সহায়ক। আশা করা যায়, এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে আগামী দশকেও।

বর্তমান দশকে কৃষি উন্নয়ন ও গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচনে একটি উল্লেখযোগ্য ও অভিনব সংযোজন হলো ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা। ১৯৯৬-২০০১ সালের মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় আসে তখন ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের যাত্রা শুরু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পের মূল উদ্যোক্তা। গ্রামের একটি বাড়িকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা লাভ করে এ প্রকল্প। কিন্তু ২০০৬ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে প্রকল্পটি বাতিল করা হয়। পরবর্তীকালে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রকল্পটি আবার চালু করে তা বাস্তবায়ন করা হয়। মূল প্রকল্পটির অনুমোদিত মেয়াদ ছিল জুলাই ২০০৯ থেকে জুন ২০১৪ পর্যন্ত। পরে তা বর্ধিত করা হয় জুন ২০১৬ পর্যন্ত। মোট খরচ ধরা হয় ৩ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা। সংশোধিত প্রকল্পটির মেয়াদ শেষে ৮ হাজার ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয় সাপেক্ষে ২০২০ সালে নাগাদ তৃতীয় মেয়াদে প্রকল্পটি একনেকের অনুমোদন লাভ করে। প্রকল্পটি সরকারের পল্লী উন্নয়ন বিভাগের অধীনস্ত বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত। তাছাড়া বার্ড, কুমিল্লা এবং আরডিএ, বগুড়াসহ বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজে জড়িত। এ প্রকল্পের আওতাভুক্ত সদস্যরা হলো প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষক, যাদের জমির পরিমাণ ০.০৫ থেকে ১.০ একর। এরা মিলিত হয়ে দেশের সকল ইউনিয়নে-ওয়ার্ডে ১টি করে সমিতি গঠন করছে। এদের দুই তৃতীয়াংশ মহিলা। প্রতিটি সমিতির সদস্য সংখ্যা সর্বোচ্চ ৬০ জন, সর্বনিম্ন ৪০ জন। এদেরকে কয়েকটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। প্রতিটি গ্রুপ নিজেদের সুবিধা বা পছন্দ অনুযায়ী এবং যে এলাকায় যে ধরনের জীবিকা গ্রহণ করা সম্ভব সেটা করতে পারে। এক্ষেত্রে হাঁস-মুরগির খামার, মত্স্য খামার, দুগ্ধ উত্পাদন, মৌমাছি পালন, শস্য উত্পাদন, বনায়ন, উদ্যান সৃজনসহ নানা ধরনের ক্ষুদ্র শিল্প রয়েছে। সমিতির সদস্যরা যে বাধ্যতামূলক সঞ্চয় করছে, সরকারের পক্ষ থেকে ঠিক সমপরিমাণ অর্থ সমিতিগুলোকে দিয়ে তহবিল গঠন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সরকার ঘূর্ণায়মান ঋণ হিসেবে সমপরিমাণ টাকা দিচ্ছে প্রতিটি সমিতিকে। প্রকল্পের ওয়েবসাইটে পদত্ব তথ্য অনুসারে মোট সঞ্চয়ের পরিমাণ হচ্ছে ৫৮৯ কোটি টাকা এবং সরকারের মেচিং ফান্ড ৫৮৯ কোটি টাকা। তাছাড়া সরকারের অনুদান হচ্ছে ৮২২ কোটি টাকা। তাতে মোট জমাকৃত অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পটি ৪৮৫ উপজেলার ৪৫০৩টি ইউনিয়ন ও ৪০৫২৭টি

গ্রামে সম্প্রসারিত হয়েছে। এর উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ২৫ লক্ষ। বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থা মিশ্র খামারের আওতাভুক্ত। একজন কৃষক একই সঙ্গে শস্যের চাষ করে, বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি ও ফলের চাষ করে। পশু-পাখি প্রতিপালন করে এবং পুকুরে মাছের চাষ করে। ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ এই মিশ্র কৃষিকর্মের উত্কর্ষ বিধানের মাধ্যমে উত্পাদন বৃদ্ধি করছে। পরিবেশবান্ধব দুগ্ধ, হাঁস-মুরগি ও শস্য উত্পাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষকদের অর্থনৈতিক অবস্থার উত্তোরণ ঘটাচ্ছে, তাদের দারিদ্র্য নিরসন করছে। ইতোমধ্যেই প্রকল্পটি দেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

এ প্রকল্পের স্থায়ী রূপ হচ্ছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক। যে ব্যাংকের মালিক হচ্ছে যৌথভাবে গ্রামের সমিতিভুক্ত প্রান্তিক আয়ের নারী-পুরুষ ও সরকার। ২০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন নিয়ে এ ব্যাংক চালু হয়। এর মধ্যে ৯৮ কোটি টাকা প্রকল্পের আওতায় গঠিত সমিতির শেয়ার হোল্ডারদের। বাকি টাকা সরকারের। প্রাথমিকভাবে ১০০ উপজেলায় নিজস্ব ভবনে চালু করা হয় এই ব্যাংকের শাখা। গত ২২ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন। এর আগে ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের এক অনুষ্ঠানে ‘পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন তিনি। ২০১৪ সালের ৮ জুলাই জাতীয় সংসদে এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আইন পাস হয়। ২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পকে স্থায়ী রূপদান করে বিশেষায়িত ‘পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স নিয়ে বর্তমানে ১০০টি শাখায় এ ব্যাংকের কার্যক্রম চালু আছে। ভবিষ্যতে ৩৮৫টি উপজেলায় অর্থাত্ মোট ৪৮৫টি উপজেলায় এর শাখা খোলা হবে এবং কার্যক্রম চলবে।

পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের বিশেষত্ব হলো ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করা। ক্ষুদ্র ঋণের উপর নয়। দেশের এনজিওগুলো ক্ষুদ্র ঋণ দেয় চড়া সুদে। তাতে সপ্তাহিক কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ে অনেক গরিব মানুষ। এই পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র ঋণের পরিবর্তে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের উপর। তাতে মানুষের সঞ্চয় প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। খুদে চাষিরা অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ পাবে ফসলের সময়সীমার ভিত্তিতে। যা কিনা এনজিও থেকে প্রায়শই পাওয়া যায় না। তাছাড়া এ ব্যাংকটি ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য বিশেষায়িত। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছোট ও ভূমিহীন কৃষকদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে এ ব্যাংক দক্ষ সেবাকর্মী তৈরির ব্যবস্থা নেবে। প্রতিটি বাড়িতে উন্নত খামারে রূপান্তরিত করে উত্পাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত করবে এবং দক্ষ উদ্যোক্তা তৈরিতে ভূমিকা রাখবে। তাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে এবং দারিদ্র্য নিরসন হবে। আশা করা যায়, ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক গ্রামীণ দারিদ্র্য মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে টেকসই কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাবে।

সম্প্রতি ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইন সংশোধনের প্রস্তাব করে সংসদে একটি বিল পেশ করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার ৬ ডিসেম্বর বিলটি উপস্থাপিত হয় সংসদে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইনের ৩৯ ধারায় বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ৩০ জুনের পর ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প বিলুপ্ত হবে। বিলুপ্ত প্রকল্পের সব সম্পদ, ক্ষমতা, কর্তৃত্ব, অর্থ, কর্মসূচি ও দায় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের হাতে চলে যাবে। এই বরাদ্দের বৈধতা দিতে সরকার অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে আইনটি সংশোধন করে। নিঃসন্দেহে এটি একটি শুভ পদক্ষেপ। গ্রামের দরিদ্রদের স্বার্থে এ সংশোধনিটি দরকার।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকার দেশের দারিদ্র্য নিরসনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দারিদ্র্য উচ্ছেদের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি দলের নেতাকর্মীদের প্রতি গৃহহারা নিঃস্ব মানুষের তালিকা প্রণয়নের আহ্বানও জানিয়েছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো হাউজহোল্ড ডাটাবেইজ তৈরি করছে, যেখানে তথ্য থাকতে হবে সকল দরিদ্র পরিবারের। তাতে প্রকৃত দরিদ্র মানুষগুলো সামাজিক সুরক্ষাবেষ্টনীর সুবিধা পাবে। আন্তর্জাতিক টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ আমাদের দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে। দূর করতে হবে ক্ষুধা ও পুষ্টিহীনতা। এ লক্ষ্যে সবাইকে একযোগে কাজ করে যেতে হবে নিরন্তর। তাতে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটবে। ধন্য হবে দেশ। জয় হবে মানবতার।