বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হচ্ছে ১২টি বেটিং সাইট

ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলাধুলা নিয়ে জুয়া
ক্রিকেট জুয়াড়িদের ইন্টারনেটভিত্তিক ১২টি আন্তর্জাতিক বেটিং সাইট (বাজি ধরা) চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব সাইট খুব দ্রুতই বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে। সাইটগুলোর ব্যবহার বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয়া হয়েছে বিটিআরসিকে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) দুর্নীতি দমন ইউনিট ও পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশন এ চিঠি দেয়। তিন সপ্তাহ আগে চিঠি চালাচালি হয়, যা নিয়ে কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। চিঠিতে বলা হয়েছে, অনলাইনে জুয়া খেলায় তরুণ প্রজন্ম ঝুঁকে পড়েছে। বাংলাদেশে এই অবস্থা ধাবিত হচ্ছে ভীতিকর পরিস্থতির দিকে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে উঠতি তরুণরা আরো বিপথগামী হতে পারে। চিঠিতে ক্রিকেট বোর্ড ১২টি সাইটকে চিহ্নিত করে তা বাংলাদেশে বন্ধের অনুরোধ জানায়। বিসিবি ও সিটিটিসি ইউনিট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
বিসিবি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চিহ্নিত তালিকায় আছে যুক্তরাজ্যের ক্রীড়াবিষয়ক বেটিং সাইট বেট ৩৬৫ ডটকম। স্পোর্টস গেম্বলিং সাইট বা ক্রীড়াবিষয়ক বাজির (জুয়া) সাইট হিসেবে এটি জনপ্রিয়। বিশ্বের ২০০টি দেশের ১৯ মিলিয়নেরও (১৯০ কোটি) বেশি বাজিকর রয়েছে বেট ৩৬৫ সাইটের। বাজিকররা ক্রিকেট ছাড়াও বিভিন্ন খেলাধুলা নিয়ে বাজিতে অংশ নেন। আর এতে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেন করা হয়। এসব সাইটের সঙ্গে আন্তঃদেশীয় অপরাধীচক্র জড়িত। বেট ৩৬৫ ডটকম ছাড়া অন্যসাইটগুলো হলো- ৮৮ স্পোর্টস ডটকম, রেবটওয়ে ডটকম, বেটফ্রিড ডটকম, ডাফাবেট ডটকম, বেটফেয়ার ডটকম, ইউনিবেট ডটকম, বেট ভিক্টর ডটকম, নেটবেট ডটকম, টাইটানবেট ডটকম, উইনার ডটকম ও পেডি পাওয়ার ডটকম। চিহ্নিত এসব সাইট ইতিমধ্যে নজরদারিতে নিয়েছে পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি ইউনিট। সাইটগুলো বাংলাদেশের অনলাইনভিত্তিক জুয়াড়িদের কাছ থেকে বিপুল অংকের অর্থও লুটে নিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিটিটিসি ইউনিটের সাইবার সিকিউরিটি ও সোস্যাল মিডিয়া স্পেশালিস্ট অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. নাজমুল ইসলাম মানবকণ্ঠকে বলেন, চিহ্নিত সাইটগুলো কঠোর মনিটরিংয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু এসব সাইট শুধু মনিটরিং রাখলেই চলবে না, দেশে তা নিষিদ্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয়া হয়েছে বিটিআরসিতে। সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এডিসি নাজমুল ইসলাম আরো জানান, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল), ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল), টিটোয়েন্টি ক্রিকেট আসরসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় সাইটগুলো নিয়ে মাতামাতি করে বাজিকররা।
তিনি বলেন, এসব সাইটের জুয়াড়িরা আর্থিক লেনদেন করে ২৮টি বৈদেশিক মুদ্রায়। ব্যাংকিং থেকে শুরু করে পেপল, মাস্টার কার্ড, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ডে অর্থ লেনদেন হয়। ফুটবল, ক্রিকেট, টেনিস, গলফ, ঘোড়দৌড়সহ আন্তর্জাতিক সব ধরনের ক্রীড়া স্থান পায় এসব সাইটে। সেই সঙ্গে থাকে বিভিন্ন দেশের নানা ঘরোয়া খেলাধুলার খবর লাইভ সম্প্রচার ও আপগ্রেড। ব্যবহারকারীরা তাদের পছন্দমতো যেকোনো খেলায় বাজি ধরে থাকেন। শুধু আইপিএল বা বিপিএল  নয়, যেকোনো বড় ক্রীড়া আসর চলাকালীন বেড়ে যায় এসব সাইটের ব্যবহার।
সিটিটিসি ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, গত এক মাসে স্পোর্টস গেম্বলিং সাইটে ক্রীড়াবিষয়ক বাজির (জুয়া) অভিযোগে অন্তত ২৫০ জনকে আটক করা হয়। কিন্তু এ সংক্রান্ত সুস্পষ্ট আইন না থাকায় তাদের প্রত্যেকেই জামিন পেয়েছেন।  তবে ১৮৬৭ সালে প্রণীত অনুযায়ী, যে কোনো ঘর, স্থান বা তাঁবু জুয়ার আসর হিসেবে ব্যবহৃত হলে অভিযুক্তকে তিন মাসের কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ২০০ টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। ক্রীড়া জুয়ার ক্ষেত্রে এক মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ১০০ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা মানবকণ্ঠকে বলেন, এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা দরকার। যেহেতু ইন্টারনেট ব্যবহার করে সাইবার অপরাধের সঙ্গে যুক্ত অভিযুক্তরা, তাই তাদের সেই আইনের আওতায় আনা উচিত। এতে করে ক্রীড়াবিষয়ক বাজিকরদের ভেতরে ভীতির সঞ্চার হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগের নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশের কোনো গ্রাহক সর্বোচ্চ ৭ হাজার ডলার আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ডে বা ট্রাভেলার চেকের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারবেন। একজন দায়িত্বশীল গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, এ সংক্রান্ত লেনদেনের তথ্য জানতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে ইতিমধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অবগত করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সাইটগুলো বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে অর্থ লেনদেন প্রক্রিয়াও বন্ধ করার বিষয়ে জোর তৎপরতা চলছে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের এক কর্মকর্তা জানান, সাইটগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের অনেকেই জড়িত। আছে উচ্চবিত্ত শ্রেণীর লোকজনও। তিনি বলেন, যেভাবে ভাইবার ও ইমোর মতো অ্যাপসগুলো বন্ধ করা সম্ভব, তেমনি এসব সাইট নিয়ন্ত্রণের কাজ চলছে।