ডিজিটাল হচ্ছে বিমানবন্দর সড়ক

মন ভালো করে দেওয়া এক সড়ক। পাশেই পানিতে খেলা করছে বাহারি মাছ। সড়ক থেকে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে হাঁটার পথ। সেই বিস্ময় জাগানিয়া পথ পথিকের নজর কাড়ছে। রাতে মাউন্টেন ঝরনায় চলছে আলোর নাচন। বলছিলাম রাজধানীর বনানী-বিমানবন্দর সড়কের কথা। সড়কের বর্তমান চিত্র এটি।

তবে চলতি বছরের জুলাই থেকে সড়কটির আধুুুুনিকায়নের কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক কাজই সম্পন্ন হয়েছে। তবে কাজ পুরোপুরি শেষ হবে আগামী বছরের মার্চে। বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির আধুনিকায়নে কাজ করছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। এতে সরকারের কোনো ব্যয় হচ্ছে না। ‘ভিনাইল ওয়ার্ল্ড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান কাজটি করছে। ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৮০ কোটি টাকা। দাবি করা হচ্ছে কাজ শেষ হলে এটাই হবে দেশের প্রথম ডিজিটাল সড়ক।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সংস্কার কাজ শেষ হলে গাড়িতে বসে থাকলেও এই সড়কে প্রবেশ মাত্রই মোবাইল ফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘ইন্টারনেট কানেক্টেড’ হয়ে যাবে। সড়কে থাকবে ১০টি আধুনিক যাত্রী ছাউনি। এসব ছাউনিতে ওয়াইফাই সুবিধা, এটিএম বুথ, মোবাইল রিচার্জ পয়েন্ট, উন্নতমানের টয়লেট এবং কয়েন দিয়ে পণ্য কেনার অত্যাধুনিক সুবিধা পাবেন যাত্রী ও পথচারীরা।

এছাড়া সড়কের দুপাশে ১২টি মাউন্টেন ঝরনা থেকে অবিরত পানি ঝরবে। ঝরনার জলে মাছেরা খেলা করবে। রাতে সড়কটিকে আরো মনোমুগ্ধকর করে তুলতে ব্যবহূত হবে এলইডি ফোকাস লাইট। সড়কের একটি অংশে থাকবে আলাদা সাইকেল লেন। দু’পাশে থাকবে দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যাবলী। ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসের নানা ঘটনাপ্রবাহ সেখানে প্রদর্শিত হবে।

সড়ক ও জনপথ অধিদফতর ঢাকা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সবুজ উদ্দিন খান জানান, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাজটি করে দিচ্ছে। এতে সরকারের কোনো টাকা ব্যয় হবে না। প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত স্থানে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে নিজেদের বিজ্ঞাপন দেবে। ছয় কিলোমিটার এই সড়কে পথচারী ছাড়াও পরিবহনে থাকা মানুষ মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট কানেক্টেড হয়ে যাবেন। প্রায় ৫ হাজার মানুষ একসঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।

জানা গেছে, এই সড়কে পথচারীদের জন্য বিশুদ্ধ পানিসহ ফুটপাথের ওপর স্থাপিত বেঞ্চিতে বিশ্রাম নেয়ার ব্যবস্থা থাকবে। সড়কের পাশে থাকা এলইডি স্ক্রিনে দেখানো হবে সারা দেশের নানা উন্নয়ন প্রকল্প। ক্রিকেট খেলাসহ বিভিন্ন লাইভ অনুষ্ঠানও দেখানো হবে। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পরও এটি রক্ষণাবেক্ষণ করবে ‘ভিনাইল ওয়ার্ল্ড’।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিমানবন্দর সড়কের ‘সড়ক বাতি’ বদলে ফেলা হয়েছে। হোটেল রেডিসনের সামনে পাইলট প্রকল্প হিসেবে একটি ঝরনা ও ২০০ মিটার হাঁটার রাস্তা নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ঝরনা থেকে পানি পড়ছে। পানিতে খেলা করছে নানা রঙের মাছ।

জানা গেছে, বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের ফুটপাথে আধুনিক কারুকাজ সংবলিত টাইলস লাগানো হবে। পথচারীরা স্বাচ্ছন্দ্যে এই ফুটপাথ দিয়ে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা নিরাপদে চলাচল করতে পারবেন। পুরো সড়ক সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। সবসময় পাহারায় থাকবে নিরাপত্তা প্রহরী। ফুটপাতের নির্ধারিত জায়গায় লাগানো হবে মৌসুমি ফুলের গাছ। বিশ্বের আধুনিক সব ফুলগাছ দিয়ে সাজানো হবে সড়কটি। ১২ মাসই ফুল দেখতে পাবেন পথচারীরা।

আর্মি গলফ ক্লাবের সামনের সড়কে গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণ শ্রমিকরা লোহার শিকল ঝালাই করে ফুটপাথে বেষ্টনী তৈরি করছে। একাধিক শ্রমিক জানান, বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে লোহার শিকল বসানো ও ঝালাইয়ের কাজ করছেন তারা। নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ও সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রকৌশলীরা কাজের তদারকি করছেন। ফুটপাথের নির্ধারিত স্থানে ইট-পাথরের সুড়কি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে নানা আলপনা।