বাঁশ শিল্পে রুটিরুজি

কেউ কাটছেন বাঁশ। কেউ তুলছেন ফালি। পরিবারের অন্যরা দল বেঁধে তৈরি করছেন কুটিরশিল্প সামগ্রী। বাড়ির উঠানে চলছে বাঁশের কাজের কর্মযজ্ঞ। এটি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বেতাগৈর ইউনিয়নের খড়িয়া গ্রামের আবদুল হাইয়ের বাড়ির চিত্র।
এ গ্রামে সারা দিন উৎসবের আমেজে নারী-পুরুষ তাদের নিপুণ হাতে তৈরি করেন কুলা, চাটাই, হাঁস-মুরগির খাঁচা, চালুনি, ঢাকরা, টুকরি, খালই, ঘরের সিলিং, ধানের বেড়, দরজা, দাড়ি, ডালা, খাদি ইত্যাদি।
সম্প্রতি সরেজমিন খড়িয়া গ্রামে আবদুল হাইয়ের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে চলছে কুটিরশিল্প তৈরির কাজ। বসে নেই নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, এমনকি শিশুরাও। সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। সপ্তাহব্যাপী শিল্পসামগ্রী তৈরির পর ঘরে বসেই পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে সেগুলো বিক্রি করা হয়। স্থানীয় বাজারে বিক্রির পাশাপাশি অর্ডার নিয়ে ঢাকা, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নান্দাইল, হোসেনপুর, সেনবাড়ী প্রভৃতি জায়গায় বাঁশের তৈরি শিল্পসামগ্রী বাজারজাত করা হয়।
খড়িয়া গ্রামের মোঃ আবদুল হাই বাঁশ দিয়ে কুটিরশিল্প সামগ্রী তৈরি করে সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন। ৪০ বছর ধরে তিনি এ পেশায় জড়িয়ে আছেন। ধরে রেখেছেন প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বাঁশশিল্প। স্ত্রী আয়েশা খাতুন চার ছেলে, দুই মেয়ে নিয়ে আবদুল হাইয়ের সংসারে ছিল অভাব-অনটন। পঞ্চম শ্রেণী পাস করে অভাবের তাড়নায় নেমে পড়েন জীবনযুদ্ধে। সংসারের হাল ধরেন তিনি। আবদুল হাই জানান, ছোটবেলা থেকেই এ কাজের হাতেখড়ি। এটাই তাদের জীবিকা উপার্জনের অন্যতম পেশা। ছেলে-মেয়ে সবার বিয়ে হয়ে গেছে। সবার আলাদা সংসার হলেও যৌথভাবে বাঁশ শিল্পের কাজ করে তারা স্বাবলম্বী। নিজস্ব ৯০ শতাংশ জমি ক্রয়ের পাশাপাশি ২০ কাঠা (১০ শতকে এক কাঠা) লিজ নিয়েছেন। তাদের রয়েছে ১০টি গরু। সব মিলিয়ে মাসিক আয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা।
আবদুল হাই আরও জানান, প্রতিটি ১৮ থেকে ২০ হাতের সিলিং ১২ হাজার টাকা, ৫০ মণের ধানের বেড় বা গোলা ৪ হাজার টাকা, ২০ মণের বেড় ১ হাজার ৬০০ টাকা, ১৫ মণের বেড় ১ হাজার ২০০ টাকা, মানসম্পন্ন একটি দরজা ৫ হাজার টাকা, মাঝারি মানের দরজা ৫ হাজার টাকা, সাধারণ মানের দরজা ৩ হাজার টাকা, দারি ৩০০ টাকা, হাঁস-মুরগির খাঁচা ৮০ টাকা, চাটাই ১০০ টাকা, খালই ৫০ টাকা, খাদি ৫০ টাকা, ডালা ৩০ টাকায় বিক্রি করা হয়।
গৃহবধূ আয়েশা খাতুন বলেন, সংসারের অন্য কাজের পাশাপাশি বাঁশের সামগ্রী তৈরি করে সংসারের কিছু টাকা আয়ে স্বামীকে সহায়তা করি। দ্বিতীয় ছেলে নিজাম উদ্দিন বলেন, বাবার কাছ থেকে বাঁশ শিল্পের কাজ শিখেছি। নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শাহানুর আলম বলেন, ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পের প্রসারে সরকারি-বেসরকারি, এমনকি ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের আরও এগিয়ে আসতে হবে। তবে সরকার এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।