যশোরের মনিরামপুরে শিক্ষিত যুবক আবদুল করিম মাল্টা চাষ করে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। এই যুবকের সাফল্যের মূলে রয়েছে আত্মপ্রত্যয়ী ও কঠোর পরিশ্রম। তার এ ব্যতিক্রমধর্মী ফসল আবাদে সফলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেক শিক্ষিত যুবক বাণিজ্যিকভিত্তিতে মাল্টা চাষ শুরু করেছেন। জানা যায়, উপজেলার মুজগুন্নী গ্রামের শিক্ষিত যুবক আবদুল করিম কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে যায়। সেখানে ভাল চাকরির সুযোগ না পেয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন। বাড়িতে ফিরে এসে যুবক করিম একটি মুরগির খামার গড়ে তোলেন। কিন্তু বিধিবাম ২০০৮ সালে বার্ড ফ্লুর আক্রমণে খামারের সকল মুুরগি মারা যায়। এতে তার প্রায় ১৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন তিনি। আত্মপ্রত্যয়ী যুবক নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন নিয়ে (পূর্বে পরিচিত) তৎকালীন খুলনা কৃষি ইনস্টিটিউটের গবেষক মৃত্যুঞ্জয় রায়ের উৎসাহ, অনুপ্রেরণা ও পরামর্শ নিয়ে বারি মাল্টা-১ জাতের মাল্টা চাষ করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি মোতাবেক সেখান থেকে (খুলনা) ১৫০ টাকা দরে ১৩৫টি বারি-১ জাতের মাল্টার চারা এনে ৪২ শতক জমিতে রোপণ করেন। চারা রোপণের পর থেকে নিবিড় পরির্চযা করতে থাকেন চাষি করিম। সাধারণত চারা রোপণের দু’বছর পর ফল ধরার কথা থাকলেও দেড় বছরের মাথায় ফল ধরতে শুরু করেছে করিমের ক্ষেতে। ইতিমধ্যে ২৩টি গাছ থেকে ফল তোলা শুরু করেছেন তিনি। তার আবাদকৃত বারি-১ জাতের মাল্টা ফলের ধরন, আকৃতি, স্বাদ ও মান বাজারে আমদানিকৃত মাল্টা লেবুর চেয়ে অনেক বেশি। চাষি আবদুল করিম বলেন, আমার খুব ভাল লাগছে। কেউবা আসছেন ক্ষেত দেখতে, আবার কেউবা আসছেন চাষ করার লক্ষ্যে পরামর্শ ও সহযোগিতা নিতে। তিনি বলেন, নিজস্ব প্রযুক্তি দিয়ে ১৪ হাজার এ জাতের লেবুর চারা কলমের মাধ্যমে উৎপাদন করা হয়েছে, যা অন্তত ৬০ বিঘা জমিতে চাষ করা যাবে। তবে, এ চাষের বিপ্লব ঘটাতে হলে চাষিদের সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, চাষাবাদের মাধ্যমে যে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব তার বড় উদাহরণ হলো মাল্টা চাষি আবদুল করিম। তার এ চাষে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। বারি মাল্টা-১ জাতের গবেষক ও খুলনা কৃষি ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোশারফ হোসেন বলেন, এটি দেশের একটি সম্ভাবনাময় ফসল। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এ চাষে বিপ্লব ঘটবে। ইতিমধ্যে কয়েকটি জেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এ চাষ শুরু হয়েছে। পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে বারি-১ মাল্টা চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে পারলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও অবদান রাখা সম্ভব।