গুটিকয় কোম্পানির শেয়ারদরের অস্থিরতা বাদ দিলে সার্বিকভাবে ইতিবাচক ধারায় চলছে দেশের শেয়ারবাজার। ঘুরেফিরে বাড়ছে অধিকাংশ শেয়ারদর। এর ইতিবাচক প্রতিফলনও পড়ছে মূল্য সূচকে। গতকাল বুধবার প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স সাড়ে ১৩ মাসের সর্বোচ্চে ৪৭৬৫ পয়েন্টে উঠেছে। এর আগের সর্বোচ্চ অবস্থানটি ছিল গত বছরের ১৩ অক্টোবর। ওইদিন সূচকটির অবস্থান ছিল ৪৭৭৯ পয়েন্টে।
এদিকে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজেস খুলনা পাওয়ারের প্রায় পৌনে ১৩ কোটি শেয়ার ব্লক ট্রেডের (বড় অঙ্কের শেয়ার লেনদেনের পৃথক বাজার) মাধ্যমে একই গ্রুপের সহযোগী কোম্পানি শাহাজাহানউল্লাহ পাওয়ারের কাছে বিক্রি করেছে। ৬৫ টাকা দরে শেয়ারগুলোর মোট বিক্রয় মূল্য ছিল ৮২৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এ লেনদেনে ভর করে ডিএসইর গতকালের লেনদেন ১ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এটি ডিএসইর প্রায় সাড়ে পাঁচ বছরের সর্বোচ্চ লেনদেন। এর আগে ২০১১ সালের ২৮ জুলাইতে এ বাজারে ১ হাজার ৮০৪ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছিল। এ ছাড়া সর্বশেষ একদিনে হাজার কোটি টাকার বেশি মূল্যের শেয়ার লেনদেন হয়েছিল গত বছরের ১ জুন।
একই গ্রুপভুক্ত এক কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানির কাছে শেয়ার বিক্রির বিষয়ে ইউনাইটেড গ্রুপের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ওবায়েদ হোসেন ভূঁইয়া সমকালকে বলেন, সহযোগী শাহাজাহানউল্লাহ পাওয়ারকে ইউনাইটেড গ্রুপের বিদ্যুৎ খাতের সব কোম্পানির হোল্ডিং কোম্পানি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর অংশ হিসেবে খুলনা পাওয়ারের সব শেয়ার হস্তান্তর করা হয়েছে। ভবিষ্যতে শাহাজাহানউল্লাহ পাওয়ারও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, এ গ্রুপের অন্য বিদ্যুৎ কোম্পানির শেয়ারও এ কোম্পানির নামে হস্তান্তর করা হতে পারে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা জানান, বুধবারের লেনদেনকে বিশেষভাবে দেখার কোনো কারণ নেই। এর ব্যাখ্যায় তারা বলেন, ব্লকে গতকাল স্বাভাবিকের চেয়ে দেড়গুণেরও বেশি লেনদেন হয়েছে। খুলনা পাওয়ারের ব্লক লেনদেনটি ছাড়া ডিএসইতে গতকাল প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। এ কারণে লেনদেন নয়, বুধবার বাজার সূচক ৪৭৫০ পয়েন্ট অতিক্রমের ঘটনাকেই উল্লেখযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করছেন তারা।
শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউস লংকাবাংলা সিকিউরিটিজের সিইও মোহাম্মদ খায়রুল আনাম চৌধুরী বলেন, বল্গক ট্রেডের কোনো প্রভাব বাজারে নেই। ফলে ডিএসইর লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়ানোর ক্ষেত্রে তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। স্বাভাবিক হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হলে অবশ্যই তা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হবে।
তিনি আরও বলেন, আশার কথা, বাজার মূল্য সূচক বাড়ছে। এর অর্থ হলো শেয়ারদর বাড়ছে। শেয়ারবাজারের সার্বিক অবস্থার ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরছে বলেই শেয়ার চাহিদা ও বিনিয়োগ বাড়ছে।
একই রকম মন্তব্য করেন মার্চেন্ট ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, গুটিকয় শেয়ার ছাড়া অধিকাংশ খাতের শেয়ারদরের ওঠানামায় একটা ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একসঙ্গে সব শেয়ারদর বাড়ছে না। বরং একটি খাতের শেয়ারদর কিছুটা বৃদ্ধির পর তার দর সংশোধন হচ্ছে। এরই মধ্যে বাড়ছে অন্য খাতের শেয়ারদর। এটা নির্দেশ করে, বিনিয়োগকারীরা কিছুটা সতর্ক।
ডিএসইর লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত কয়েক দিন ধরে ব্যাংক, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক এবং বীমা খাতের শেয়ারদর তুলনামূলক বেশি বাড়ছে। বলতে গেলে এ খাতের শেয়ারগুলোর কাছেই বাজারের নিয়ন্ত্রণ ফিরে আসছে। খাত তিনটির শেয়ারগুলোর দর বাড়ার কারণে ক্রমে লেনদেনও বাড়ছে।
গতকাল ডিএসই এ তিন খাতের তালিকাভুক্ত ১০০ কোম্পানির মধ্যে ৭৮টিরই বাজারদর বেড়েছে। বিপরীতে দর হারায় ১৫টি এবং অপরিবর্তিত থেকেছে ৬টির দর। খাতগুলোর ৯৯ কোম্পানির গতকাল ১৭০ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে, যা খুলনা পাওয়ারের ব্লক লেনদেনটি বাদ দিলে ডিএসইর মোট লেনদেনের এক-চতুর্থাংশের কিছুটা বেশি।
গত কয়েক সপ্তাহ লেনদেনে প্রকৌশল, ওষুধ ও রসায়ন এবং জ্বালানি ও শক্তি খাতের প্রাধান্য দেখা গেছে। এখনও তা কিছুটা বজায় আছে। তবে ক্রমে ক্রমছে। সেখানে জায়গা করে নিচ্ছে ব্যাংক খাত।
গতকাল দিনের লেনদেন শেষে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ডিএসইতে ১৬১ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দরবৃদ্ধির বিপরীতে ১২০টির দর কমেছে। অপরিবর্তিত থেকেছে ৪০টির দর। এতে ডিএসইএক্স সূচক ১৫ পয়েন্ট বেড়ে ৪৭৬৫ পয়েন্টে উঠেছে। অন্য শেয়ারবাজার সিএসইতে ১৩৪ কোম্পানির শেয়ার ও ফান্ডের দর বেড়েছে। কমেছে ৯৫টির এবং অপরিবর্তিত থেকেছে ২৮টির দর। দুই বাজার মিলে এদিন ১ হাজার ৫২৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে।