পোশাক কারখানা সংস্কার তদারকিতে দেশীয় উদ্যোগ

তৈরি পোশাক শিল্পের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে নিয়োজিত অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্সকে আর দেখতে চায় না এই খাতের উদ্যোক্তার। এ জন্য তাঁরা নতুন প্ল্যাটফর্ম নিয়ে কাজ করছে বলে জানা গেছে। নতুন এই উদ্যোগে নেতৃত্ব চায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ডিআইএফ। তাঁরা আরো জানান, দেশের উদ্যোক্তারা সারা জীবন বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতেই তাদের এই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। তবে ২০১৮ সালের জুলাইয়ের পর এই মিশনে ক্রেতাজোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সকে তাদের উদ্যোগের সঙ্গে রাখতে চাইলেও অগ্রাধিকার পাচ্ছে ডিআইএফ।

জানা গেছে, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বিজিএমইএ বোর্ড সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে চূড়ান্ত এই খসড়া। বর্তমানে দেশের পোশাক কারখানা সংস্কারে তিনটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংস্কারকাজ তদারকি করাতে হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্স এবং জাতীয় কর্মপরিকল্পনা (এনএপি)। এমনকি কোনো কোনো কারখানার নিজস্ব বায়ারের কমপ্লায়েন্সও মানতে হয় তাদের। এ ছাড়া বেটার ওয়ার্ক, ডিআইএফের কমপ্লায়েন্সও আছে।

তাঁরা বলেন, বহু তদারকিতে উদ্যোক্তাদের যেমন হিমশিম খেতে হয় অন্যদিকে প্রচুর সময়ও অপচয় হয়। তাই তারা সোশ্যাল কমপ্লায়েন্স এবং সেইফটি রিলেটেড ইস্যু, টেকনিক্যাল কমপ্লায়েন্স এবং লেবার রাইটসসহ সব কিছুকে একটি জায়গায় নিয়ে যেতেই তাদের উদ্যোগ বলে জানান।

সূত্র জানায়, নতুন প্ল্যাটফর্মের জন্য সংশ্লিষ্ট খাতের উদ্যোক্তারা ইতিমধ্যে কিভাবে নতুন আঙ্গিকে কাজ করবে এই নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটির সদস্যরা হলেন তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু, বিজিএমইএ পরিচালক মিরান আলী, মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক এবং ডিসিসিআইয়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিল্ডের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম।

নতুন প্ল্যাটফর্মে যারা থাকবে এগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্র্যান্ড, লেবার ফেডারেশন, বিজিএমইএ এবং ডিআইএফ। এর বাইরে এক্সপার্ট হিসেবে থাকছে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। এ ছাড়া দেশের প্রকৌশলী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আউটসোর্সিং করতে চায় তারা।

কেন ডিআইএফের নেতৃত্ব চায় এর জবাবে তাঁরা বলেন, প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে এনএপির আওতায় অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের বাইরে প্রায় এক হাজার ৭০০ কারখানা পরিদর্শন করেছে। তাঁরা এনএপির অধীনে যে কারখানা ছিল এসব কারখানা পরিদর্শন করেছেন। এই কর্মযজ্ঞের সঙ্গে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও সম্পৃক্ত হয়েছে। এতে আর্থিক সহায়তাও দিচ্ছে বলে জানান তাঁরা। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সালের মার্চের মধ্যে এসব কারখানার সংস্কারকাজ শেষ করবে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে লোক নিয়ে কাজ শুরু করেছে। এই কর্মযজ্ঞ চালানোর জন্য অফিসও হবে আলাদা। আমরা আশা করি আগামী দেড় বছরে ডিআইপির দক্ষতা আরো বাড়বে। এ প্রসঙ্গ বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ২০১৮ সালের বিদেশি ক্রেতা জোটের সঙ্গে চুক্তি শেষ হলে, দেশের পোশাক কারখানাগুলোর সংস্কার তদারকি এগিয়ে নিতে তারা একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। সংস্কার কার্যক্রম কিভাবে এগিয়ে নেওয়া যাবে এ নিয়ে একটি খসড়া করা হয়েছে। তবে এখনই এসব চূড়ান্ত নয়।

ডিআইএফ মহাপরিদর্শক সৈয়দ আহমেদ কালের কণ্ঠকে জানান, ২০১৮ সালের পর দেশের পোশাক কারখানাগুলোর সংস্কার অগ্রগতি পরিদর্শনে সক্ষম হবে বলে তিনি মনে করেন। এ জন্য সরকার ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী জানুয়ারি থেকে রেমিডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন সেল কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হবে। এই সময়ের মধ্যে ডিআইএফ সক্ষমতা আরো বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।