সবজি চারায় লাখপতি কাদের ডাক্তার

সবজি চারায় লাখপতি কাদের ডাক্তারএমএ বশার, বাউফল: ষাটোর্ধ্ব কাদের ডাক্তার। লাউ, টমেটো, তাল বেগুন, বোম্বাই মরিচ, পেঁপে, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শালগম, শিমসহ নানা ধরনের শাকসবজির চারা বিক্রি করে ভাগ্য ফিরিয়েছেন। মাত্র পাঁচ বছরে লাখপতি হয়েছেন পটুয়াখালীর বাউফলের মমিনপুর গ্রামের প্রান্তিক এই কৃষক।
স্ত্রী, ছয় ছেলে ও দুই মেয়েসহ কাদের ডাক্তারের ১০ জনের সংসার চলছিল না। এনজিও ঋণ মাথায় নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন এই বর্গা চাষি। ২০১২ সালে একই গ্রামের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুল গনি শিকদার ও অজিত ভূইমালি নামে এক সবজি চাষির পরামর্শে কিছু টাকা ধার নিয়ে খালের পাড়ে পরিত্যক্ত জমিতে সবজির চারা উত্পাদনসহ শাকসবজির চাষ শুরু করেন। প্রথম বছর লাউ, টমেটো, তাল বেগুন, বোম্বাই মরিচ, পেঁপে, শিমসহ নানা ধরনের সবজির চারা বিক্রিতে হাসি ফোটে মুখে। ক্রমেই বদলে যেতে শুরু করে তার দিন। ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করে লিজসহ এ বছর প্রায় দুই একর জমির ওপর গড়েছেন চারা উত্পাদন নার্সারি আর শাকসবজির খামার। এখন তার চারা উত্পাদনের পলিথিনের বিশাল শেডে চোখে পড়ে নানা
ধরনের সবজির চারা আর চারা। একই সঙ্গে পাশের খামারের দুই শতাধিক মাধা থেকে মাচায় বেয়ে ওঠা লাউ, শতাধিক মাধায় থাকা মিষ্টি কুমড়াসহ লাফা, বরবটি, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, লালশাক, পুঁইশাক, পেঁপেসহ বিভিন্ন শাকসবজিতে নজর কারে স্থানীয়দের।
কাদের ডাক্তার জানান, এখন তার খামারে নিয়মিত তিন-চারজন কৃষিশ্রমিক কাজ করেন। সবজি চারা ও তার খামারের শাকসবজি বিক্রি হচ্ছে উপজেলা সদরসহ স্থানীয় বিভিন্ন হাট-বাজারে। খামারে এ বছর বিনিয়োগ করেছেন প্রায় ৫ লাখ টাকা। চলতি মৌসুমে আগাম জাতের টমেটো চারা (লালতীরের উন্নয়ন, সওসান), মেটালের (হাইব্রিড) করলা, লালতীরের (টিয়া) করলা, যমুনা জাতের বেগুন (মেটাল সিডসের), স্থানীয় ঘৃত-কুমারী জাতের বোম্বাই মরিচ, পেঁপে, শিম, লাউ চারা, মাইবার্ড ও স্নো-হোয়াইট জাতের ফুলকপিসহ স্থানীয় জাতের সবজির চারা বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা আয় হয়েছে তার। সবজির চারা বিক্রি বাবদ আরও অর্ধলক্ষাধিক টাকা আয়ের আশা করছেন তিনি। পাশের খামারে থাকা টমেটো, বেগুন, কুমড়া, চাল কুমড়া (জালি), লাউ, শিম, বরবটি থেকে আয় হবে ৫-৭ লাখ টাকা। আছে গাজর, ফুলকপি, পাতাকপি, শালগমসহ হরেক রকমের সবজি। সবজির চারা ও শাকসবজি বিক্রি বাবদ চলতি মৌসুমে খরচ বাদে ৫-৭ লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন তিনি।
কেঁচো কম্পোস্ট, ভার্মি কম্পোস্টের সঙ্গে সহনীয় মাত্রায় সার-ওষুধে উত্পন্ন সবজির চারা ও শাকসবজির মান ভালো থাকায় স্থানীয় বাজারে চাহিদাও বেশি। তার এ সাফল্যে সবজি চারা উত্পাদন নার্সারি ও সবজির খামারে স্থানীয় উত্সাহী লোকজনের ভিড় দেখা যায় সকাল-বিকাল। উত্সাহিত হয়ে সবজির আবাদ করেছেন পাশের হোসেন মাস্টার, প্রভাষক ফরিদ উদ্দিনসহ অনেকে। কাদের ডাক্তারের কাছ থেকে অভিজ্ঞতার পরামর্শ নিচ্ছেন অনেকে। ক্ষেত্র প্রসারণের কথাও জানান কাদের ডাক্তার।
কাদের ডাক্তার আরও জানান, নিজের সংগ্রহ করা স্থানীয় জাতের বীজ ও বাজার থেকে বীজ কিনে তা থেকে চারা উত্পাদন করেন তিনি। সবজির আবাদে কেঁচো কম্পোস্ট, ভার্মি কম্পোস্ট সার ও লতাপাতায় নিজের তৈরি কীটনাশক ব্যবহার করেন। তবে বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিতে সহনীয় মাত্রায় সার-ওষুধের ব্যবহার ও হাইব্রিড জাতের শাকসবজিও উত্পন্ন করতে হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সারোয়ার জামান বলেন, ক্রমাগত আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে রোগবালাই ও বিপর্যয় কাটিয়ে স্বল্পমেয়াদি শাকসবজি চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। সবজি চাষে অল্প পুঁজিতে অধিক লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।