সঞ্চয়ে কমবে পথভ্রষ্ট হওয়ার প্রবণতা : ব্যাংকিং সেবায় দেশের সাড়ে ৩ হাজার পথশিশু

সঞ্চয়ের মনোভাব নিয়ে বড়দের সঙ্গে, স্কুলের ছোট ছেলেমেয়েরাও ব্যাংকিং সেবার আওতায় আসছে। তাই সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘স্কুল ব্যাংকিং’ কার্যক্রম। ২০১০ সালে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে ‘স্কুল ব্যাংকিং’ কার্যক্রম শুরু হলেও স্কুলের শিক্ষার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পায় ২০১১ সালে। ওই বছরে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা দেশের ব্যাংকগুলোতে ৩০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা আমানত রাখে।

সর্বশেষ চলতি বছরের জুন শেষে ৩ হাজার ৪৬৭ কর্মজীবী শিশু ও পথশিশু মাত্র ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খুলেছে। তাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে সম্মিলিতভাবে ব্যাংকে জমা হয়েছে ২২ লাখ ৮ হাজার ৮৪৮ টাকা। দেশের ১৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে তাদের এ টাকা জমা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন বিভাগের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ২৭৮ জন কর্মজীবী ও পথশিশু নতুন করে ব্যাংক হিসাব খুলেছে। এই তিন মাসে কর্মজীবী ও পথশিশুরা ব্যাংকে জমা করেছে ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৮২ টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বস্তি, রাস্তাঘাট, রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট ও ফুটপাতে বসবাসরত পথশিশু এবং কর্মজীবী শিশু-কিশোরদের ব্যাংকিং সেবায় আনার মাধ্যমে তাদের মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতা তৈরি, কষ্টোপার্জিত অর্থের সুরক্ষা, পথভ্রষ্ট হওয়ার প্রবণতা হ্রাস করাসহ তাদের বৃহত্তর কল্যাণে ব্যাংক হিসাব খোলার মহতী উদ্যোগ নেন সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের ৯ মার্চ এক নির্দেশনার মাধ্যমে মাত্র ১০ টাকা দিয়ে পথশিশুদের ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নির্দেশনার পর ব্যাংকগুলো বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় কর্মজীবী ও পথশিশুদের হিসাব খোলার উদ্যোগ নেয়। আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাংক হিসাব খোলার কার্যক্রম শুরু হয় ওই বছরের ৩১ মে।

সূত্রটি জানায়, প্রাথমিকভাবে ১০টি ব্যাংক কর্মজীবী ও পথশিশুদের ব্যাংক হিসাব খোলার দায়িত্ব নেয়। পরে আরো ৭টি ব্যাংক এ মহতী উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়। ব্যাংকগুলো হলো- সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, উদ্দীপন নামক এনজিও প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় সোনালী ব্যাংকে ৫ জন কর্মজীবী ও পথশিশুর ব্যাংক হিসাব রয়েছে। এ ব্যাংক হিসাবগুলোতে জমা আছে ৬ হাজার টাকা। জনতা ব্যাংকে আছে ১৫০ জন কর্মজীবী ও পথশিশুর ব্যাংক হিসাব। ইবিসিআর প্রকল্পের সহায়তায় এ হিসাবগুলোর সবকটি খোলা হয়েছে চলতি বছরের এপ্রিল-জুন সময়ে। হিসাবগুলোতে জমা আছে মোট ৭৫ হাজার টাকা। পথশিশুদের জন্য সবচেয়ে বেশি হিসাব খুলেছে রূপালী ব্যাংক। মাসাস ও সাফ নামক দুইটি এনজিও প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় সরকারি মালিকানাধীন এ ব্যাংকটি ১ হাজার ৫৬ জন কর্মজীবী ও পথশিশুর ব্যাংক হিসাব খুলেছে। এর মধ্যে এপ্রিল-জুন সময়ে নতুন খোলা হয়েছে ৭১টি হিসাব। রূপালী ব্যাংকে কর্মজীবী ও পথশিশুদের জমা আছে ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অগ্রণী ব্যাংকে আছে ৩৫৩ জন কর্মজীবী ও পথশিশুর ব্যাংক হিসাব। উদ্দীপন এনজিওর সহায়তায় খোলা এ হিসাবগুলোতে জমা আছে ৩১ হাজার টাকা। একই এনজিওর সহায়তায় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে হিসাব খুলেছে ১৬৩ জন কর্মজীবী ও পথশিশু। এ ব্যাংকটিতে তাদের জমা আছে ২৭ হাজার টাকা।

অপরাজেয় বাংলাদেশ, ব্র্যাক ও উদ্দীপনের সহায়তায় ব্যাংক এশিয়ায় খোলা হয়েছে ১৯১টি হিসাব। এর মধ্যে চলতি বছরের এপ্রিল-জুন সময়ে নতুন খোলা হয়েছে ২৯টি হিসাব। ব্যাংকটিতে কর্মজীবী ও পথশিশুরা জমা করেছে ২ লাখ ২৩ হাজার ৫৬২ টাকা। অপরাজেয় বাংলাদেশ ও এইড বাংলাদেশের সহায়তায় মার্কেন্টাইল ব্যাংকে খেলা হয়েছে ২০১টি হিসাব। এর মধ্যে শেষ প্রান্তিকে নতুন খোলা হয়েছে ৫টি হিসাব। হিসাবগুলোতে জমা আছে ১ লাখ ২ হাজার ৬৭০ টাকা। এএসডির সহায়তায় মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে খোলা ৩৪টি হিসাবে জমা আছে ১ হাজার টাকা। সিপিডির সহায়তায় ন্যাশনাল ব্যাংকে ১৯টি হিসাবে জমা আছে ১৩ হাজার টাকা। এ ছাড়া এনসিসি ব্যাংকে ১৫টি হিসাবে ১ হাজার ২৫০ টাকা, ওয়ান ব্যাংকে ২৩২টি হিসাবে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৩৪৯ টাকা, পূবালী ব্যাংকে ৫৪৬টি হিসাবে ৪ লাখ টাকা, সিটি ব্যাংকে ১৫০টি হিসাবে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, ট্রাস্ট ব্যাংকে ২৮০টি হিসাবে ৭২ হাজার টাকা, উত্তরা ব্যাংকে ৩২টি হিসাবে ১ হাজার ১০০ টাকা, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে ৩৮টি হিসাবে ৮ হাজার ২০০ টাকা এবং ইউনিয়ন ব্যাংকে ২টি হিসাবে ৬ হাজার ১০ টাকা জমা রয়েছে।