নবসাজে সাজবে ওয়ান্ডারল্যান্ড

দায়িত্ব পাচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, অত্যাধুনিক রাইডার, থাকবে সবার জন্য উন্মুক্ত

অবশেষে নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে গুলশান ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক। নবরূপে সাজানো হবে ওয়ান্ডারল্যান্ডের পরিত্যক্ত জায়গাটি। সেখানে অত্যাধুনিক ও বিশ্বমানের পার্ক স্থাপন করবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। শিগগিরই গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এটি ডিএনসিসিকে হস্তান্তর করবে রাজউক। গত ৩০ অক্টোবর রাজউকের বোর্ড সভায় এই সিদ্বান্ত নেওয়া হয়। ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কসহ মোট ৪টি পার্ক ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হবে। হস্তান্তরের পরপরই পার্কে বিভিন্ন ধরনের রাইড স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করবে ডিএনসিসি।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, পার্কের জায়গায় পার্ক হবে, এখানে অন্য কিছু করা হবে না। পার্কটি সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। বাণিজ্যিকভাবে এই পার্ক ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। গুলশানে রাজউকের ওয়ান্ডারল্যান্ড ও ফার্মগেটের পার্ক বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, এগুলো নিতে অনেকেই প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু আমরা উত্তর ডিসিসিকে এ জায়গা হস্তান্তর করবো। যাতে নিশ্চিত হতে পারি যে, পার্ক হবে পার্কের মতোই। যেখানে নগরবাসী অবাধে আনাগোনা করতে পারবে। আগের সিটি করপোরেশন উদ্যোগ নেয়নি বলে সুন্দর হয়নি। এবার আশা করি হবে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, গুলশান ওয়ান্ডানল্যান্ডকে বিশ্বমানের পার্ক হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এই মর্মে কাজ শুরু হয়েছে। ঢাকা শহরে অনেক সুন্দর পার্ক প্রয়োজন। ওয়ান্ডারল্যান্ডকে মিসইউজ করা হয়েছে। রাজউকের চেয়ারম্যান বজলুল করিম চৌধুরী ইত্তেফাককে বলেন, ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শিঘ্রই পার্কটি আনুষ্ঠানিকভাবে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হস্তান্তর করা হবে।

যা থাকবে ওয়ান্ডারল্যান্ডে : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক বুঝে পেলে সেখানে শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য আলাদা কর্ণার রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। সেই সঙ্গে সবার জন্য হাঁটার প্রশস্ত লনও থাকবে। সবমিলিয়ে একটি পরিকল্পিত অত্যাধুনিক ও বিশ্বমানের পার্ক করা হবে। পার্কের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। জনগণের জন্য এ পার্ক উন্মুক্ত থাকবে। পার্কটি কীভাবে সাজানো যায় ইতোমধ্যেই তার নকশা প্রণয়নের কাজ চলছে ডিএনসিসিতে। তবে প্রস্তাবিত নকশা যাই থাক শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য আলাদা কর্ণার আর হাঁটার জন্য বাঁধানো ওয়াকওয়ে নির্মাণের বিষয়টি এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে গেছে। ব্যায়ামের জন্যও এখানে থাকবে আলাদা জায়গা। সবুজায়ন বৃদ্ধির জন্য ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কের গাছগুলো টিকিয়ে রাখারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যেই উঠেছে উন্মুক্ত পার্কের সাইন বোর্ড। প্রস্তুতি সারা হলে সবার জন্য খুলে দেওয়া হবে গুলশান ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কটি। বিনা পয়সায় এখানকার খোলা হাওয়ায় বিচরণ করতে পারবে নগরবাসী।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, বিশাল পার্কটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। স্থানে স্থানে জমা হয়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের পক্ষে কয়েকটি প্লাস্টিকের ডাস্টবিন মাঠে বসালেও তাতে কেউ ময়লা ফেলছে না। কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই পার্কের ভেতরের উত্তর পার্শ্বে কয়েকটি কলা, রুটি, চা, পান ও সিগারেটের দোকান বসানো হয়েছে। ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে যত্রতত্র। গুলশানের বাসিন্দা আক্তার হোসেন বলেন, পার্কটি সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। সকাল- সন্ধ্যায় যে হাঁটাহাঁটি করবো তার কোনো উপায় নেই।

গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান উপদেষ্টা রাফিজ আলম চৌধুরী ইত্তেফাককে বলেন, মাঝে পার্কটির খুবই বেহাল অবস্থা ছিল। গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের উদ্যোগে মাঠটি পরিষ্কার করা হয়েছে। মাঠের নিরাপত্তায় প্রতিদিন ২ জন করে নিরাপত্তা রক্ষী নিয়োজিত আছে। নির্ধারিত স্থানে ময়লা ফেলার ডাস্টবিন স্থাপন করা হয়েছে। তিনি খেলাধুলা ও হাঁটা চলাচলের জন্য মাঠটিকে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার দাবি জানান।

গুলশান সোসাটির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর সাদাত ইত্তেফাককে বলেন, গুলশান এলাকায় কোনো মাঠ নেই। খেলাধুলা কিংবা হাঁটাহাঁটির কোনো জায়গা এখানে নেই। তাই গুলশান ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কটি যাতে উন্মুক্ত পার্কের মর্যাদায় রাখা হয় এবং এটি সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকে এই দাবি জানান তিনি।

জানা যায়, গুলশান সেন্ট্রাল পার্ক রাজউকের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে ১৯৯০ সালে ওয়ান্ডারল্যান্ড চিলড্রেন পার্ক নির্মাণের কাজ শুরু করে মেসার্স ভায়া মিডিয়া নামের একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে পার্ক নির্মাণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এম এ রেজা নামে গুলশানের এক বাসিন্দা ১৯৯৫ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। পরে এটি দীর্ঘদিন ঝুলে থাকে। এ অবস্থায় ওয়ান্ডারল্যান্ড স্থাপনের কাজ শেষ করে এটিকে নানাভাবে ব্যবহার করা হয়। পরে ২০১১ সালের শেষের দিকে এক শুনানি শেষে রাজউকের মহা পরিকল্পনায় বাণিজ্যিক পার্কের বিষয়টি না থাকায় ওই ইজারা অবৈধ ঘোষণা করে ওয়ান্ডারল্যান্ডের বরাদ্দ বাতিল করে দেয় হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ছয় মাসের মধ্যে পার্কের যাবতীয় স্থাপনা সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর ২০১২ সালের ৮ মে ম্যাজিস্ট্রেট রোকন-উদ-দৌলার নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে তা দখলমুক্ত করে রাজউক। প্রায় ৪ বছর জায়গাটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল।

এ বিষয়ে ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কের সাবেক ইজারাদার ও মেসার্স ভায়া মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। দেশে সর্বপ্রথম আমরা আন্তর্জাতিকমানের সব রাইডার দিয়ে ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কটি সাজিয়েছিলাম। এই পার্কে প্রতিদিন বিনোদনের জন্য শিশুসহ শত শত মানুষ আসতো। পার্ক স্থানান্তরের জন্য তাদের বিকল্প কোনো জায়গাও দেয়নি কর্তৃপক্ষ। কোনো ধরনের নোটিস ছাড়াই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। ফলে তাদের বিরাট অঙ্কের অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধিত হয়েছে।