বাণিজ্য সংস্কারের মাধ্যমে বাণিজ্য ব্যবস্থার উন্নতি ও ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতির মাধ্যমে বাংলাদেশ পূর্ব এশীয় দেশগুলোর মতো রফতানি শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারবে বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক গ্রুপ। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংক গ্রুপের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক গ্রুপ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) যৌথভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
‘সাউথ এশিয়া’স টার্ন: পলিসিজ টু বুস্ট কমপিটিটিভনেস অ্যান্ড ক্রিয়েট দ্য নেক্সট এক্সপোর্ট পাওয়ার হাউজ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৩০ সাল নাগাদ দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের কর্মক্ষম এক-চতুর্থাংশেরও বেশির আবাসস্থলে পরিণত হবে। দক্ষিণ এশিয়ার এ অনুকূল কার্যক্রম জনশক্তি, শিক্ষার বাড়ন্ত হার ও নগরগুলোর বর্ধিষ্ণুতা কাজে লাগানো উচিত।
অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ট্রেড কমপিটিটিভনেস গ্লোবাল প্র্যাকটিস বিভাগের লিড ইকোনমিস্ট ও প্রতিবেদনের লেখক ভিনসেন্ট পলমেড বলেন, প্রতিবেদনে চারটি নীতিগত ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে। ক্ষেত্রগুলো হলো— ব্যবসার পরিবেশ উন্নতি, গ্লোবাল ভ্যালু চেইনের সঙ্গে সংযুক্তকরণ, একই জায়গায় অবস্থান থেকে উৎপাদন সুবিধার সর্বোচ্চকরণ ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো। এগুলো বাংলাদেশের ব্যবসা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে সক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
তিনি বলেন, পূর্ব এশীয় দেশগুলোয় ক্রমবর্ধমান শ্রম ব্যয়ের কারণে বিনিয়োগকারী ও ক্রেতারা বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর দিকে ঝুঁকছে। প্রতি বছর বাংলাদেশে ২০ লাখের বেশি তরুণ কর্মবাজারে প্রবেশ করেন। এ সুযোগ লুফে নিতে এবং অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাংলাদেশের এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।
সামগ্রিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর উৎপাদিত পণ্যের পরিমাণ ও মানের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি মন্তব্য করে এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দক্ষিণ এশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদনশীলতা কম। গত এক দশকে বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৩ শতাংশ হারে রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে মোট রফতানির ৮০ শতাংশই পোশাক খাতে কেন্দ্রীভূত, যার বেশির ভাগই স্বল্পমূল্যের পণ্যনির্ভর। বাংলাদেশের পোশাকপণ্যের গুণ, মান ও বৈচিত্র্য বাড়াতে হবে, পাশাপাশি নতুন শ্রমশক্তিনির্ভর শিল্প ও দক্ষতানির্ভর শিল্প যেমন— পাদুকা, হালকা প্রকৌশল ও ইলেকট্রনিকসের বহুমুখীকরণ করার মাধ্যমে এ ক্রমবর্ধমান রফতানি প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে হবে।
বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান বলেন, বাংলাদেশের বিপুল প্রতিযোগিতা সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে বাণিজ্য ব্যবস্থার ও ব্যবসায় পরিবেশ উন্নয়ন এবং শিল্পকারখানার জন্য জমিস্বল্পতা সমস্যার সমাধান করতে হবে। তিনি আরো বলেন, সঠিক নীতিমালা এবং উপযুক্ত পরিবেশ থাকলে বাংলাদেশ এশিয়ার ভবিষ্যত্ রফতানি শক্তি না হওয়ার কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আরো অধিক সংখ্যক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা প্রয়োজন, যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো উন্নত সেবার আওতাভুক্ত ভূমি ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো পায়। বর্তমানে ভালো অবস্থানে থাকা অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় নতুন কোনো প্রতিষ্ঠান স্থাপনের সুযোগ নেই। ফলে বড় বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারছে না।
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানে ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) কান্ট্রি ম্যানেজার ওয়েল্ডি জো ওয়ারনার বলেন, উন্নত মানের ও অধিক কর্মসংস্থান তৈরিতে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে, যা বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানো। এর জন্য দরকার বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক বাজারের সঙ্গে সংযুক্তি বাড়াতে নীতিগত সহায়তা।
অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটির প্রশংসা করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, প্রতিবেদনটি প্রকাশ হওয়ায় আমি খুশি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রফতানিতে সম্ভাবনা রয়েছে, যা কয়েক দশকে ক্রমাগত বাড়ছে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান মনসুরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মাদিয়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবিনা হক, এসিআই লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ দোলা, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট অথরিটির নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।