বগুড়ায় চন্দনার অভয়ারণ্য

বিরল প্রজাতির চন্দনা টিয়ার ‘অভয়ারণ্য’ বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার ডেমাজানীতে। সেখানে প্রজনন বাড়ানোর লক্ষ্যে শতবর্ষী মেহগনি গাছে কাঠের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি কৃত্রিম বাসা ঝুলিয়ে দিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠন ওয়াইল্ড লাইফ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট সেভ টিম (ওয়েস্ট) বাংলাদেশ। গত শুক্রবার শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরকার বাদল অতিথি হিসেবে এই কর্মসূচি উদ্বোধন করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ওয়েস্টের নির্বাহী পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক এসএম ইকবাল, ডেমাজানী শাখার সভাপতি

মোফাজ্জল হোসেন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুল মান্নান, বিমান, ইয়াছিন আলী, মিজানুর রহমান, আজিজার রহমান, বগুড়া বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব, ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার আদনান আজাদ আসিফ, আহসান হাবিব, অনিক প্রমুখ।

ওয়েস্টের নির্বাহী পরিচালক বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এসএম ইকবাল জানান, ২০১০ সালে ডেমাজানী বন্দরে শতবর্ষী মেহগনি গাছে বিরল প্রজাতির ১ জোড়া চন্দনা টিয়া দেখতে পান তিনি। এরপর থেকেই তিনি এই পাখি রক্ষা ও এর বংশ বৃদ্ধিতে কাজ শুরু করেন। পাখির খাবারের জন্য মেহগনি গাছের পাশে সূর্যমুখী চাষ করেন। এ ছাড়া পাখির বসবাস ও প্রজননের সুবিধার জন্য মাটির কলস এবং কাঠের বাক্স দিয়ে বাসা তৈরি করে গাছে ঝুলিয়ে দেন। এতে ওই ১ জোড়া থেকে এখন ৬ জোড়া টিয়ে হয়েছে।

শতবর্ষী মেহগনি গাছের গোড়া থেকে সামান্য ওপরে সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে একটি সাইনবোর্ড। পাশেই রয়েছে ফুলবাগান। সেখানে আছে কদমগাছ। সেটিতেও আছে অনুরূপ সাইনবোর্ড। এ ছাড়া সেই মেহগনি ঘিরে রয়েছে বট, কাঁঠালসহ বিভিন্ন গাছ। ডালপালার সবুজ পাতার আড়ালে লুকোচুরিতে ব্যস্ত থাকে বিপন্নপ্রায় চন্দনা টিয়া। জেলার শাজাহানপুর উপজেলা সদর থেকে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক ধরে ৪ কিলোমিটার দক্ষিণে গেলে আড়িয়া বাজার। সেখান থেকে পাকা সড়ক হয়ে পূর্বে সামান্য পথ পাড়ি দিলে ডেমাজানী।

শতবর্ষী মেহগনি গাছটি ব্রিটিশ শাসনামলের বলিহার রাজার পুরনো পরিত্যক্ত কাচারিবাড়ি এলাকায়। বিলুপ্তপ্রায় পাখি নিয়ে গবেষণা করেন এসএম ইকবাল। তিনি সমকালকে বলেন, বিরল প্রজাতির চন্দনা টিয়া সংরক্ষণ ও বংশ বৃদ্ধিতে সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছেন। প্রজনন বাড়াতে কাঠের গুঁড়ির তৈরি ৩০টি কৃত্রিম প্রজনন আবাসস্থল গাছে ঝুঁলিয়ে দিয়েছেন। তার সংগঠনের সঙ্গে স্থানীয়দের সম্পৃক্ত করেছেন। তারা পাখিগুলো দেখভাল করছেন।

এলাকার বাসিন্দা বৃদ্ধ আবদুর রাজ্জাক বলেন, এই পাখি সম্পর্কে আমরা আগে কিছুই জানতাম না। পরিবেশবাদী সংগঠনের মাধ্যমে জানতে পারি, আমাদের এলাকায় বিরল প্রজাতির চন্দনা টিয়ার আবাসস্থল আছে। এখন গ্রামের লোকজন পাখিগুলো দেখাশোনা করে।

লম্বা লেজওয়ালা এই পাখির বেশিরভাগ অংশই সবুজ কাঁধে রয়েছে মেরুন পট্টি। পুরুষ পাখি স্ত্রী পাখির চেয়ে আকারে বড়। গলার পেছনে ও ঘাড়ের পাশে লাল-গোলাপি বলয় রয়েছে। ডানার পালক ও ঢাকনির মধ্যে পরিষ্কার লাল পট্টি চোখে পড়বে। ধান, গম, ভুট্টা, পাকা মরিচ, খেজুর, বুনো ফল, কামরাঙা, ফুলের মিষ্টি রস, জামরুল, ফুলের কচি অংশ খায় চন্দনা টিয়া।

ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল এদের প্রজনন মৌসুম। স্ত্রী পাখি ৩ থেকে ৪টি করে ডিম দেয়। প্রায় ২০ দিন পর সেই ডিম থেকে ছানা বেরিয়ে আসে।