দারিদ্র্য উচ্ছেদের প্রত্যয়

কিছুদিন আগে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট এসেছিলেন বাংলাদেশে। তিনি দারিদ্র্যবিমোচনে বাংলাদেশের সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করে গেছেন। ১৭ অক্টোবর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক গণবক্তৃতায় বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেন, ‘অতি দারিদ্র্যবিমোচনের দিক থেকে বাংলাদেশের কাছে অনেক কিছু শেখার আছে আমাদের। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- দারিদ্র্যবিমোচনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এমন নিত্যনতুন পদক্ষেপ। বলতে দ্বিধা নেই, দারিদ্র্যবিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণের সাফল্যের কথা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। এ কৌশলটি উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ। এ কারণে নোবেল পুরস্কারের সম্মান অর্জন করেছে গ্রামীণ ব্যাংক এবং এর প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এছাড়া দ্রুত আয় ও উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সম্প্রসারণকল্পে অনেক নিত্যনতুন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে গরিব ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য বাস্তবায়ন করেছে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প। অতি সম্প্রতি ওই প্রকল্পের স্থায়ী রূপ দেয়া হয়েছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। দেশের দারিদ্র্য নিরসনে এ ধরনের উদ্যোগ অভিনব। প্রায় দুই যুগ ধরে এ দেশে দ্রুত দারিদ্র্য হ্রাসে এসব কর্মকা- খুবই ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। অতি দারিদ্র্য হ্রাসের ক্ষেত্রে তা খুবই লক্ষণীয়।
দারিদ্র্য নিরসনে বাংলাদেশের সাফল্যের বিষয়টি উল্লেখপূর্বক বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘দেশটির অনেক মানুষ এখনও খুবই অল্প আয়ে জীবনধারণ করছে। তবে নাটকীয়ভাবে অতি দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনায় বাংলাদেশের সাফল্য আমাদের আশা দেয়, এ অগ্রযাত্রা সামনের দিনগুলোয়ও অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে বিশ্বের অন্য দেশগুলোও দারিদ্র্যবিমোচনে একই রকম সফলতা দেখাবে। বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের উপরোক্ত উক্তি বাংলাদেশিদের জন্য খুবই গর্বের বিষয়। সারা বিশ্বের জন্য বাংলাদেশ এখন দারিদ্র্য মোচনের এক শিক্ষণীয়, অনুকরণীয় ক্ষেত্র। সে কারণেই গত ১৭ অক্টোবর বিশ্ব দারিদ্র্য মোচন দিবস পালন উপলক্ষে ‘শোকেস কান্ট্রি’ হিসেবে বেছে নেয়া হয় বাংলদেশকে। বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট এদেশে উপস্থিত থেকে গণবক্তৃতা দেন।
বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে বাংলাদেশে অতি দারিদ্র্যের হার এখন ১২.৯ শতাংশ। ২০০০ সালে তা ছিল ১৮.৫ শতাংশ। ১৯৯১ সালে ছিল ৪৪.২ শতাংশ। এ হিসাব করা হয়েছে ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে মাথাপিছু দৈনিক আয় ১.৯০ ডলার ধরে নিয়ে। বাংলাদেশি টাকায় তা জনপ্রতি মাসিক দাঁড়ায় প্রায় ১৩০০ টাকা (২০১০ সালের ক্রয় মূল্যে)। এর নিচে আয় যাদের তারা হতদরিদ্র বা চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থানকারী গরিব মানুষ। তাছাড়া দারিদ্র্যের হার নির্ধারণের জন্য আমরা মৃদু দারিদ্র্যসীমার কথাও বলে থাকি, যার মাসিক আয় ১৬০০ টাকার নিচে। ২০১১ সালে ওই দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থানকারী মানুষের হার ছিল ৫৭ শতাংশ। ২০০০ সালে তা ৪৯ শতাংশে এবং ২০১০ সালে তা ৩১.৫ শতাংশে হ্রাস পায়। বর্তমানে তা ২৪ শতাংশে নেমে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০১৫-১৬ সালে পরিচালিত ‘খানা আয়-ব্যয়’ জরিপের ফলাফল প্রকাশিত হলে বিষয়টি আরও পরিষ্কারভাবে জানা যাবে। তবে বিগত দুই দশকে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার যে খুবই দ্রুত হ্রাস পেয়েছে তা সব হিসাব থেকেই প্রমাণিত।
বাংলাদেশে দ্রুত দারিদ্র্য হ্রাসের প্রধান কারণ উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন। ২০০৬ সাল থেকে ক্রমাগতভাবে প্রায় ৬ শতাংশ হারে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা ৭.১১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে প্রবাসী আয়। ২০০২-০৬ সময়ে গড় প্রবাসী আয় ছিল বছরে প্রায় সাড়ে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১২-১৬ সময়ে তা দাঁড়িয়েছে বছরে প্রায় ১৩.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। তাছাড়া বিগত দশকে রপ্তানি আয় বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। কৃষি খাতে বেড়েছে শস্যের উৎপাদন। নতুন পশু-পাখির খামার ও মৎস্য খামার গড়ে উঠেছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। কুটির শিল্পের সম্প্রসারণ ঘটেছে দেশের সর্বত্র। তাতে মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, আয় বেড়েছে। সেই সঙ্গে গার্মেন্ট শিল্পে মহিলাদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মতৎপরতা বৃদ্ধির ফলে দেশের মহিলাদের আয় ও ক্ষমতায়ন বেড়েছে। তাছাড়া অতিদরিদ্র মানুষের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সম্প্রসারণ দারিদ্র্য নিরসনের জন্য সহায়ক হয়েছে। এক্ষেত্রে কৃষি খাতে উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়টি খুবই যত্নের সঙ্গে প্রণিধানযোগ্য। এ খাতে বিগত দশকে প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ৩ থেকে ৪ শতাংশ। শস্য খাতের উৎপাদন বৃদ্ধি খাদ্যমূল্যের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হয়েছে। তাতে বেড়েছে দানাদার শস্যের ভোগ। উপকৃত হয়েছে কম আয়ের দারিদ্র্য মানুষ। তাছাড়া মাছ, মাংস, ডিম ও দুধের উপাদান বৃদ্ধির ফলে হ্রাস পেয়েছে মানষের পুষ্টিহীনতা গ্রামীণ এলাকায় কৃষি ব্যবসা সম্প্রসারণের ফলে বৃদ্ধি পেয়েছে কর্মসংস্থান। এ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করেছে গ্রামীণ রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন ও বাজার সম্প্রসারণ। বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে প্রতীয়মান হয় যে কৃষির উৎপাদন ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেলে দারিদ্র্য ০.৫ শাতংশ হ্রাস পায়। বাংলাদেশে বিগত ২ দশকে কৃষির উৎপাদন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। তা ছিল দ্রুত দারিদ্র্য হ্রাসের প্রধান সহায়ক। আশা করা যায়, এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে আগামী দশকেও।
বর্তমান দশকে কৃষি উন্নয়ন ও গ্রামীণ দারিদ্র্যবিমোচনে একটি উল্লেখযোগ্য ও অভিনব সংযোজন হলো ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা। ১৯৯৬-২০০১ সাল মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় আসে তখন ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের যাত্রা শুরু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রকল্পের মূল উদ্যোক্তা। গ্রামের প্রতিটি বাড়িকে অর্থনৈতিক কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা লাভ করে এ প্রকল্প। কিন্তু ২০০৬ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলো প্রকল্পটি বাতিল করা হয়। পরবর্তীকালে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রকল্পটি আবার চালু করে তা বাস্তবায়ন করা হয়। মূল প্রকল্পটির অনুমোদিত মেয়াদ ছিল জুলাই ২০০৯ থেকে জুন ২০১৪ পর্যন্ত। পরে তা বর্ধিত করা হয় জুন ২০১৬ পর্যন্ত। মোট খরচ ধরা হয় ৩ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা। সংশোধিত প্রকল্পটির শেয়াদ শেষে ৮ হাজার ১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়সাপেক্ষে ২০২০ সাল নাগাদ তৃতীয় মেয়াদে প্রকল্পটি একনেকের অনুমোদন লাভ করে। প্রকল্পটি সরকারের পল্লী উন্নয়ন বিভাগের অধীনস্ত বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত। তাছাড়া বার্ড, কুমিল্লা এবং আরডিএ, বগুড়াসহ বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজে জড়িত। এ প্রকল্পের আওতাভুক্ত সদস্যরা হলো প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষক, যাদের জমির পরিমাণ ০.০৫ থেকে ১.০ একর। এরা মিলিত হয়ে দেশের সব ইউনিয়নে ওয়ার্ডে ১টি করে সমিতি গঠন করেছে। এদের দুই-তৃতীয়াংশ মহিলা। প্রতিটি সমিতির সদস্য সংখ্যা সর্বোচ্চ ৬০ জন, সর্বনিম্ন ৪০ জন। এদের কয়েকটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। প্রতিটি গ্রুপ নিজেদের সুবিধা বা পছন্দ অনুযায়ী এবং যে এলাকায় যে ধরনের জীবিকা গ্রহণ করা সম্ভব সেটা করতে পারে। এক্ষেত্রে হাঁস-মুরগির খামার, মৎস্য খামার, দুগ্ধ উৎপাদন, মৌমাছি পালন, শস্য উৎপাদন, বনায়ন, উদ্যান সৃজনসহ নানা ধরনের ক্ষুদ্র শিল্প রয়েছে। সমিতির সদস্যরা যে বাধ্যতামূলক সঞ্চয় করছে, সরকারের পক্ষ থেকে ঠিক সমপরিমাণ অর্থ সমিতিগুলোকে দিয়ে তহবিল গঠন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সরকার ঘূর্ণয়মান ঋণ হিসাবে সমপরিমাণ টাকা দিচ্ছে প্রতিটি সমিতিকে। প্রকল্পের ওয়েবসাইটে প্রদত্ত তথ্য অনুসারে মোট সঞ্চয়ের পরিমাণ হচ্ছে ৫৮৯ কোটি টাকা এবং সরকারের মেচিং ফান্ড ৫৮৯ কোটি টাকা। তাছাড়া সরকারের অনুদান হচ্ছে ৮২২ কোটি টাকা। তাতে মোট জমাকৃত অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পটি ৪৮৫ উপজেলার ৪৫০৩টি ইউনিয়ন ও ৪০৫২৭টি গ্রামে সম্প্রসারিত হয়েছে। এর উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ। বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থা মিশ্র খামারের আওতাভুক্ত। একশ কৃষক একই সঙ্গে শস্যের চাষ করে, বাড়ির আঙিনায় সবজি ও ফলের চাষ করে। পশু-পাখি প্রতিপালন করে এবং পুকুরে মাছের চাষ করে। ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ এই মিশ্র কৃষিকর্মের উৎকর্ষ বিধানের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করছে। পরিবেশবান্ধব দুগ্ধ, হাঁস-মুরগি ও শস্য উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষকদের অর্থনৈতিক অব্যবস্থার উত্তরণ ঘটাচ্ছে, তাদের দারিদ্র্য নিরসন করছে। ইতিমধ্যেই প্রকল্পটি দেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
এ প্রকল্পের স্থায়ী রূপ হচ্ছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক। যে ব্যাংকের মালিক হচ্ছে যৌথভাবে গ্রামের সমিতিভুক্ত প্রান্তিক আয়ের নারী-পুরুষ ও সরকার। ২০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন নিয়ে এ ব্যাংক চালু হয়। এর মধ্যে ৯৮ কোটি টাকা প্রকল্পের আওতায় গঠিত সমিতির শেয়ারহোল্ডারদের। বাকি টাকা সরকারের। প্রাথমিকভাবে ১০০ উপজেলায় নিজস্ব ভবনে চালু করা হয় এই ব্যাংকের শাখা। গত ২২ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন। এর আগে ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবরে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের এক অনুষ্ঠানে ‘পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন তিনি। ২০১৪ সালের ৮ জুলাই জাতীয় সংসদে এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আইন পাস হয়। ২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পকে স্থায়ী রূপদান করে বিশেষায়িত ‘পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স নিয়ে বর্তমানে ১০০টি শাখায় এ ব্যাংকের কার্যক্রম চালু আছে। ভবিষ্যতে ৩৮৫টি উপজেলায় অর্থাৎ মোট ৪৮৫টি উপজেলায় এর শাখা খোলা হবে এবং কার্যক্রম চলবে।
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের বিশেষত্ব হলো ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করা, ক্ষুদ্র ঋণের ওপর নয়। দেশের এনজিওগুলো ক্ষুদ্র ঋণ দেয় চড়া সুদে। তাতে সাপ্তাহিক কিস্তি পরিশোধ করতে না পেরে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ে অনেক গরিব মানুষ। এই পরিস্থিতি ক্ষুদ্র ঋণের পরিবর্তে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের ওপর। তাতে মানুষের সঞ্চয় প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে। ক্ষুদে চাষিরা অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ পাবে ফসলের সময়সীমার ভিত্তিতে, যা কিনা এনজিও থেকে প্রায়শই পাওয়া যায় না। তাছাড়া এ ব্যাংকটি ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য বিশেষায়িত। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ছোট ও ভূমিহীন কৃষকদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে এ ব্যাংক দক্ষ সেবাকর্মী তৈরির ব্যবস্থা নেবে। প্রতিটি বাড়িকে উন্নত খামারে রূপান্তর করে উৎপাদন বৃদ্ধি করবে এবং দক্ষ উদ্যোগক্তা তৈরিতে ভূমিকা রাখবে। তাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে এবং দারিদ্র্য নিরসন হবে। তবে এক্ষেত্রে শঙ্কা ও উৎকণ্ঠার কারণ যে নেই, তেমনটি নয়। অতীতে এদেশে সমবায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, কিন্তু এর কার্যক্রম নিয়ে এবং সফলতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল অনেক। সরকারি উদ্যোগে গ্রামভিত্তিক আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক সমবায়ও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তাও সাফল্যের ঠিকানায় পেঁৗছেনি। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে তা নিমিষেই মিলিয়েও গেছে। গ্রাম সরকার, বহুমুখী গ্রাম সমবায়ের অভিজ্ঞতা এদেশে তেমন সুখকর নয়। নতুন প্রকল্প ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ার ক্ষেত্রে এ ধরনের অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের শিক্ষণীয় আছে।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকার দেশের দারিদ্র্য নিরসনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দারিদ্র্য উচ্ছেদের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি দলের নেতাকর্মীদের প্রতি গৃহহারা নিঃস্ব মানুষের তালিকা প্রণয়নের আহবানও জানিয়েছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো হাউজহোল্ড ডাটাবেইজ তৈরি করছে, যেখানে তথ্য থাকতে হবে সকল দরিদ্র পরিবারের। তাতে প্রকৃত দরিদ্র মানুষগুলো সামাজিক সুরক্ষাবেষ্টনীর সুবিধা পাবে। আন্তর্জাতিক টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ আমাদের দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে। দূর করতে হবে পুষ্টিহীনতা। এ লক্ষ্যে সবাইকে একযুগে কাজ করে যেতে হবে নিরন্তর। তাতে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটবে।
[লেখক : কৃষি অর্থনীতিকবিদ]