নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার ৮ ইউনিয়নে ছেয়ে গেছে মাঠ ভরা সোনালী ধান। সব মাঠেই ধান পেঁকে সোনালী রূপ ধারণ করেছে। আবার কিছু কিছু কৃষক ধান কাটতে শুরু করেছে। শীঘ্রই উপজেলার সব মাঠেই ধান কাটা-মড়াই এর ধুম পড়ে যাবে। এবার রোপা আমনের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষক-কৃষান দের মুখে হাসি ফুটেছে ।
চলতি মৌসুমে আশানুরূপ বৃষ্টিপাত হওয়ায় কয়েক বছরের ব্যবধানে এবার রোপা আমন ধান ভালো হয়েছে। এলাকা ঘুরে দেখা যায় উঁচু নিচু সব জায়গাতেই প্রায় ধান চাষ করা হয়েছে। উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউনিয়ন মাঠে প্রতি বছরই প্রায় ৩/৪ হাজার বিঘা জমির রোপা আমন ধান বিনষ্ট হতো। ঐ ইউনিয়নে ব্রী-জাত ৫২ ধান রোপণ করায় এই ক্ষতির পরিমাণ অনেকটা কমে এসেছে বলে ঐ এলাকার কৃষকরা জানিয়েছে। আর এ বছর চলতি মৌসুমে বিলাশবাড়ী ইউনিয়ন মাঠের ৩ ভাগের বেশি এলাকায় আমন ধান চাষ করা হয়েছে। এ মৌসুমে ও প্রায় ১ হাজার বিঘা জমি পতিত রয়েছে। বর্ষায় ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায় এসব জমিতে ধান চাষ না করে কৃষকেরা এবার হতাশ হয়ে পড়েছে। ঐ সব পতিত জমিগুলোতে এখন গরু ছাগল চরানোর মাঠ হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে। তথ্য সংগ্রহকালে বারফালা গ্রামের ইউপি সদস্য ইয়াদ আলীসহ কয়েকজন কৃষক জানান যেহেতু মাঠের নিচু এলাকায় প্রতি বছরই রোপা আমন ধান বিনষ্ট হয়। আর এই আশংকায় তার ঐ স্থানে এবার রোপা আমন ধান রোপন করেননি। তবে তারা জানান রোপা আমন ধানের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পতিত জমির অধিকাংশ অংশ জুড়ে কৃষকেরা আগাম আলুসহ রবি শষ্য ফসল চাষের প্রস্তুতি নিয়েছে। হলুদ বিহার গ্রামের আশরাফুল ইসলাম, রবিউল ইসলাম, ফজলুল হকসহ অর্ধ শতাধীক কৃষক জানান, চলতি বছরে আশানুরূপ বৃষ্টিপাত হয়েছে। মাঠে জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়নি এ জন্যই সব ধরনের ধান সারা মাঠ সাফল্যের সংগে চাষ করা হয়েছে। তবে জলাবদ্ধতা ২০/২৫ দিন পর্যন্ত থাকলেও ব্রী ৫২ জাতের ধান চাষ করলে কোন ক্ষতি হয় না। এ জন্যই নিচু এলাকাতে এই ব্রি- ৫২ জাতের ধান কৃষকরা চাষ করেছে। এবছর আবহাওয়া অনুকূল থাকায় উপজেলার ৮ ইউনিয়নে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানাযায়, চলতি মৌসুমে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১২ হাজার ৭৬০ হেক্টর। আর অর্জিত হয়েছে ১৩ হাজার ৫২০ হেক্টর জমিতে। যা এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৭৬০ হেক্টর জমিতে বেশি রোপা আমন ধান চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হলেও ধান কাটা মাড়ার শুরুর মুখেই ধানের বাজার মূল্য কমে যাওয়ায় এলাকার কৃষকেরা অনেকটা হতাশাবোধ করছে। প্রায় শতাধীক মধ্যবিত্ত কৃষকেরা জানায় রোপা আমন ধানের উপর নির্ভর করে আলু ও পটল রোপণসহ বিভিন্ন রবিশষ্য চাষাবাদ করার লক্ষ্য রয়েছে। ধানের বাজার মূল্য পড়ে গেলে মধ্যবিত্ত কৃষকদের এ লক্ষ্য পূরণ হবে না। কৃষকেরা সরকারের কাছে ধানের নায্য মূল্য দাবি করেন। উপজেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি অফিসার মো. হাসান আলী জানান এবার আবহাওয়া অনুকূল থাকার কারনে রোপা আমন ধান চাষাবাদে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ধানের বাম্পার ফলনও হয়েছে। উপজেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর উপজেলার কৃষকদের ধান চাষাবাদে সব সময় পরামর্শ দিয়ে এসেছে।