ব্যতিক্রমী উদ্যোগ পাখির নিরাপদ বাসস্থান

টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজ থেকে ডিসি লেক এলাকার বিভিন্ন গাছের ডালে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় পাখির বাস-উপযোগী মাটির তৈরি হাঁড়ি

পাখির জন্য বাসস্থান! শুনলে অনেকটা অবাকই লাগে। কিন্তু এমনটাই করে দেখালেন টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মাহবুব হোসেন। তিনি পাখির জন্য তৈরি করেছেন নিরাপদ বাসস্থান।

পাখির বাস-উপযোগী মাটির তৈরি হাঁড়ি ঝুলিয়ে দিয়েছেন গাছের ডালে ডালে, যেখানে নিশ্চিন্তে আবাস গড়ে তুলেছে বিভিন্ন জাতের পাখি। আর এতে পাখির বংশবিস্তারও বৃদ্ধি পাবে। টাঙ্গাইল শহরের সার্কিট হাউজ থেকে শুরু করে হর্টিকালচার ও সদ্য-নির্মিত ডিসি লেক এলাকার গাছগুলোতে হাঁড়ি দিয়ে পাখির বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, ছোট কিংবা বড় গাছ হোক ওই এলাকায় প্রায় প্রতিটি গাছেই হাঁড়ি লাগানো হয়েছে।

পাখিভেদে হাঁড়ির আকার ও আকৃতিও ভিন্ন। গাছের ডালে ডালে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে এসব মাটির হাঁড়ি। ছোট গাছগুলোতে ২-৩টি ও বড় গাছগুলোতে ৪-৫টি বা তারও অধিক হাঁড়ি লাগানো হয়েছে। অনেক হাঁড়িতে পাখির আসা-যাওয়া দেখা গেছে। স্থানীয় ও সেখানে ঘুরতে আসা মানুষ ‘পাখির বাসস্থান’ দেখে মুগ্ধ। তাদের মতে, এটি একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এ উদ্যোগকে তারা স্বাগত জানিয়েছেন। তারা পাখির জন্য বাসস্থানÑ এবারই প্রথম দেখছেন। টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মাহবুব হোসেন বলেন, সবারই বাসস্থান দরকার। পাখি নিজেরাই নিজেদের বাসস্থান তৈরি করে। তারপরও পাখি যাতে নিরাপদে থাকতে পারে এ জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রায় ২ মাস আগে পরীক্ষামূলকভাবে আমরা এখানে কয়েকশ’ গাছে ১ হাজার হাঁড়ি লাগিয়েছি।

লেকের আশপাশ, সার্কিট হাউজ ও তার আশপাশের এলাকায় হাঁড়ি লাগানো হয়েছে। যদি এখানে সফলতা পাই তাহলে জেলার প্রতিটি উপজেলায় পাখির জন্য বাসস্থান করা হবে। তিনি বলেন, যদি কোনো পাখির বাসস্থান না থাকে বা নিরুপায় হয় তাহলে তারা এখানে আশ্রয় নিতে পারবে। ঝড়-বৃষ্টিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে পাখির বাসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে পাখির ডিম ও বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে বংশবিস্তার কমে যায়। পাখির বংশবিস্তার বাড়ানোর লক্ষেই এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাখিকে সবাই ভালোবাসে। এখানে প্রচুর পাখি এলে সবারই ভালো লাগবে।

এতে পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক থাকবে। গাছে প্রচুর পরিমাণে ফল-ফুল হবে। পাখি থাকলে মনও ভালো থাকবে পরিবেশও ভালো থাকবে। মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শিমুল শেখ বলেন, মানুষের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নতি, আধুনিক যন্ত্রনির্ভর সভ্যতা, উচ্চাভিলাস ও সেইসঙ্গে অবিবেচনাপ্রসূত প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ, নিবন্ধিকরণ, জলাশয় ভরাট, রাসায়নিকের উচ্চমাত্রায় ব্যবহার, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এসব মিলিয়ে প্রকৃতি যখন হুমকির সম্মুখীন ঠিক এমনই এক সন্ধিক্ষণে বিশ্ব মানবতা অস্তিত্বের টান অনুভব করছে টিকে থাকার।

সীমিত সম্পদের যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও সর্বোচ্চ ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে টেকসই প্রযুক্তি ও টেকসই উন্নয়ন ভাবনা আজ গোটা পৃথিবীর মানুষের প্রাণের দাবি। প্রকৃতি যখন বিপন্নপ্রায় জীব বৈচিত্রতা নিয়ে নানা সংকট ও দুর্যোগের মুখোমুখি তখন টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসকের ‘পাখির জন্য বাসস্থান’ তৈরি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তিনি আরো বলেন, অধিক জনসংখ্যার এদেশে আইন করেও যে জিনিস বাস্তবায়ন করা কঠিন জনসচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন অনেকটা সহজ এবং যা গণবান্ধব। পাখিদের অভয়, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ আবাস হতে পারে Indigenous Plant গুলো। সেদিকে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন।

শুধু পাখির বাসাই পাখিকে নিরাপত্তা দিবে বিষয়টি এমনও নয়। পাখির খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষিতে ব্যবহৃত রাসয়নিক ও কমিয়ে জৈবপ্রযুক্তির ব্যহার বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে জলাশয়নির্ভর পাখিদের জন্য জলাশয় সংরক্ষণও জরুরি বিষয়। পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণেও আমাদের সচেষ্ট হতে হবে। তিনি আরও বলেন, এর সুফল ও মানুষ পেতে শুরু করেছে যেমন ২০১৬ সালে বাজারে ইলিশ মাছের পর্যাপ্ততা। জনসচেতনতা বাড়িয়ে জনগণের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণের কাজ জনগণকে দিয়ে করিয়ে জনগণকে উপহার দেয়া সম্ভব সোনারবাংলা, বাংলার মানুষ পারে, বাংলার মানুষ পারবে থাকতে হবে সামনে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যতা বান্ধবযোগ্য নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনা।

পাখির বাসা দেখতে আসা মাসুদ রানা বলেন, এখানে পাখির জন্য বাসস্থান করা হয়েছে। এতে এ এলাকায় পাখির সংখ্যা বাড়বে। আমি জেলা প্রশাসকের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। সত্যিই এটি একটি ভালো উদ্যোগ। ফয়সাল আহমেদ বলেন, পাখির জন্য বাসস্থান এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এর ফলে এখানে পাখির আসা-যাওয়া বাড়বে। আমি আশা করছি জেলা প্রশাসক এ কাজে সফলতা পাবে। বিভিন্ন কারণে পাখির বাসস্থান কমে যাচ্ছে। পাখিসহ প্রকৃতির সকল প্রাণিই আমাদের জন্য অপরিহার্য।