চরফ্যাশনের দক্ষিণাঞ্চলে অনেকেই কাঁকড়া চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। কাঁকড়া দেশের বিভিন্ন স্থানের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে।
চর কচ্ছপিয়া, চর মন্তাজ, চর পাতিলা, চর দাঁতভাঙ্গা, কালকিনি, চর মানিকা, চর নিজাম, চর কুকরি-মুকরি, ঢালচরসহ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর ম্যানগ্রোভ বাগান রয়েছে। এসব এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে কয়েক শত ছোট-বড় খাল সৃষ্টি হয়েছে। এসব খালে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করায় প্রচুর পরিমাণে কাঁকড়া পাওয়া যায়। এসব খালে প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণ কাঁকড়া ধরা পড়ছে। এছাড়াও বড় আকারের কাঁকড়া খাল থেকে ধরে বিক্রি হলেও এখনকার চাষিরা ছোট কাঁকড়া পুকুর বা হ্যাচারিতে চাষ করছেন।
চরফ্যাশন উপজেলায় প্রায় ৬০ কাঁকড়া চাষিকে হাতেকলমে কাঁকড়া চাষে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া এসব চাষি ১৭টি প্রদর্শনী খামার তৈরি করেছেন। এসব খামারে গত অর্থবছরে প্রায় ১৫ মেট্রিকটন কাঁকড়া উৎপাদন হয়েছে। এখানকার চাষিরা খাল ও পুকুরে নেটজাল দিয়ে হ্যাচারি তৈরি করে অনায়াসে কাঁকড়া চাষ করেছেন। লবণাক্ত পানির কারণে কাঁকড়া চাষে অনেক সুবিধা রয়েছে। তাছাড়া রোগবালাইও কম হয়। কাঁকড়ার খাদ্য হিসেবে কুচিয়া, চেওয়া মাছ, চিংড়িগুড়া, শুঁটকি ও অলুপা মাছ ব্যবহার করা হয়। কম খরচ ও কম পরিশ্রমে অধিক লাভ হওয়ায় চাষিরাও সারাদিন পুকুর ও হ্যাচারিতে কাঁকড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।
চর কুকরিমুকরি কাঁকড়া চাষি লতিফ খাঁ ও সবুজ জানান, তিনি উপজেলা মৎস্য অফিসের সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ নিয়ে পুকুরে নেটজাল দিয়ে কাঁকড়া চাষ শুরু করেন। মাত্র কয়েক মাস পর তিনি কাঁকড়া বিক্রি করে কয়েকগুণ টাকা আয় করেন। তখন থেকে তিনি কাঁকড়া চাষকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। এসব অঞ্চলের ৬০ চাষি কাঁকড়া চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাদের দেখাদেখি অনেকে এখন এ পেশায় ঝুঁকে পড়ছেন। তাছাড়া খামারে চাষ করা ও শিকার করা কাঁকড়া স্থানীয় আড়তে বিক্রি করা হয়। ১০০ গ্রাম ওজনের নিচে প্রতি পিস কাঁকড়া ২৫ থেকে ৩০ টাকা হারে প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা বিক্রি করা হয়। ২০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা, ৩০০ গ্রাম ওজনের ৭৫০ টাকা, ৫০০ গ্রাম ওজনের প্রতি কেজি এক হাজার টাকা করে বিক্রি করা হয়।
চর কচ্ছপিয়া ঘাটের কাঁকড়া ব্যবসায়ী সিরাজ জানান, তার অধীনে শতাধিক কাঁকড়া শিকারি রয়েছেন। তার আড়তে চাষি ও শিকারিরা কাঁকড়া বিক্রি করেন। প্রতিদিন তিনি ঢাকা মোকামের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাঁকড়া কেনেন। এসব কাঁকড়া লঞ্চযোগে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্বের অন্তত ১৮টি দেশে কাঁকড়া রপ্তানি হচ্ছে। চাষিদের উন্নত কারিগরি প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহযোগিতা করা হলে কাঁকড়া চাষে অনেকে আরও আগ্রহী হবেন। এতে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনসহ দেশের উন্নয়ন হবে।
চরফ্যাশন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পলাশ হালদার জনান, উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে কাঁকড়া চাষ করে অনেক চাষি সফল হয়েছেন। কাঁকড়া চাষের ওপর সরকারিভাবে প্রকল্প করা হচ্ছে। এ প্রকল্পে চাষিদের উন্নত প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।