কক্সবাজার, কুয়াকাটা, সুন্দরবন, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, সিলেটসহ দেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতেই গঠিত হয়েছিল ট্যুরিস্ট পুলিশ। তিন বছর ধরে তারা সীমিত আকারে সেই দায়িত্ব পালন করে আসছে। তবে এখন থেকে পর্যটকদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেবে তারা। সেই লক্ষ্যে পুলিশের বিশেষ ইউনিটটি আরো বিস্তৃত ও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
পর্যটক যেখানে ট্যুরিস্ট পুলিশও সেখানে—এমন উদ্যোগের অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশের এই ইউনিটের জন্য ৬৮৯ পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি অতিরিক্ত ডিআইজি পদসহ ১৩টি ক্যাডার পদ স্থায়ী করা হয়েছে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় ব্যবহারের জন্য ৬৫টি যানবাহনেরও অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে সাগরে নিরাপত্তার জন্য বিচ রেসকিউ মোটরবাইক, রেসকিউ বোটসহ জাহাজও রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ট্যুরিস্ট পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের নানামুখী বিড়ম্বনা দূর করে দেশের পর্যটনশিল্পে গতি আনার লক্ষ্যে ২০১৩ সালের নভেম্বরে গঠন করা হয় ‘ট্যুরিস্ট পুলিশ’। পুলিশের একটি বিশেষ ইউনিট হিসেবে এদের কর্মতৎপরতা পুরোটাই পর্যটকদের ঘিরে। দর্শনীয় স্থানে পর্যটকদের নিরাপত্তা দেওয়া থেকে শুরু করে পর্যটন এলাকায় থাকার জায়গায়ও নিরাপত্তা দেবেন এই ইউনিটের সদস্যরা। বিদেশিরা যাতে নির্ভয়ে দর্শনীয় স্থানে চলাচল করতে পারে সে জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের থাকছে পৃথক কঠোর নজরদারি। হোটেল-মোটেলে পোশাকধারী পুলিশের বাইরেও সাদা পোশাকের ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যরা পর্যটকদের খোঁজখবর রাখবেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের দেশে দর্শনীয় অনেক স্থান রয়েছে। এসব স্থানে বিদেশিরা নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারলে আমাদেরই সুনাম হবে। বাড়বে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যাও।’
ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান ডিআইজি সোহরাব হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ৬৮৯টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এই জনবল পাওয়ার পর আমরা আরো কয়েকটি স্থানে পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে পারব।’
সূত্র জানায়, বর্তমানে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত, সিলেটের শ্রীমঙ্গল, টেকনাফ, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, কুয়াকাটা, পতেঙ্গাসহ কয়েকটি এলাকায় ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে। তবে লোকবলের অভাবে সুন্দরবন, বাগেরহাট, মোংলা, বগুড়ার দর্শনীয় স্থানে তারা দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। নতুন জনবল পেলেই এসব স্থানে ট্যুরিস্ট পুলিশ পুরোদমে কাজ শুরু করবে।
ইউনিটটির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে ট্যুরিস্ট পুলিশ স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। এই ইউনিটের কর্মতৎপরতা বাড়াতে একটি বিধিমালার খসড়া করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বিধি পাস হলে তারা দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় সংঘটিত অপরাধের তদন্তও করতে পারবে। বর্তমানে কোনো অপরাধ ঘটলে অপরাধীকে ধরে স্থানীয় থানায় সোপর্দ করার এখতিয়ার রয়েছে তাদের।
গত ৯ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ অধিশাখা-৩ থেকে ট্যুরিস্ট পুলিশের পদ সৃষ্টিসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তাতে ট্যুরিস্ট পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে ৬৮৯টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এতে অতিরিক্ত ডিআইজি পদবির দুজন কর্মকর্তা ছাড়াও পুলিশ সুপার সাত, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চার, ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) ৬৫, সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) ১৭৫, সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) ১৬০, কনস্টেবল ২৫০, প্রোগ্রামার এক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এক, প্রধান সহকারী দুই, উচ্চমান সহকারী দুই, কম্পিউটার অপারেটর এক, ওজনকারক এক, বাবুর্চি ১০ ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর আটটি পদ রয়েছে। ইউনিটটির জন্য নতুন করে ১০টি জিপ, পাঁচটি পিকআপ, একটি মাইক্রোবাস, একটি ট্রাক, একটি প্রিজনার্স ভ্যান, একটি বোম্ব ডিসপোজাল ভেহিকল, দুটি ওয়াটার ট্রেইলার, দুটি পোর্টেবল ফোল্ডিং বোট, একটি জাহাজ, তিনটি স্পিডবোট, দুটি রেসকিউ বোট, তিনটি বিচ রেসকিউ মোটরবাইক, দুটি স্যান্ড সাপোর্ট ভেহিকল, একটি ড্রাইভিং সিমুলেটর ও ৩০টি মোটরসাইকেলের অনুমোদন দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, সৃজিত পদগুলো প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত অনুমোদিত ৫০ হাজার পদের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যসংখ্যা এক লাখ ৭৭ হাজার ৩১৭। এর সঙ্গে যোগ হবে ৬৮৯টি নতুন পদ। সব মিলিয়ে পুলিশের সদস্যসংখ্যা হবে এক লাখ ৭৮ হাজার ছয়।