শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আসছে পুরো সিলেট। ২০১৮ সালের মধ্যে এই জেলার ১৩ উপজেলাকে বিদ্যুতের আওতায় আনার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার চারখাইয়ে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে গ্রিড স্টেশন। আগামী বছর প্রকল্পটির কাজ শেষ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সিলেট জেলায় এখন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ও সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর আওতায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। সিলেট নগরী এবং সংলগ্ন কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পিডিবি। জেলার আট উপজেলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ ও পাঁচটিতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে।
দুই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-সংশ্লিষ্টরা জানান, ভিশন-২০২১-এর আওতায় তারা সিলেট জেলায় বিদ্যুৎ সুবিধা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছেন। সে অনুযায়ী তারা পরিকল্পনাও করেছেন। এর মাধ্যমে নতুন আরও ৮০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসবেন।
সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ সূত্রে জানা গেছে, এ সমিতির আওতায় ২০১৮ সালের মধ্যে আট উপজেলায় বিদ্যুৎ পেঁৗছে দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর আওতায় চলতি বছর ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা, ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে দক্ষিণ সুরমা, বিয়ানীবাজার ও বিশ্বনাথ উপজেলা, ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে গোলাপগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা এবং ডিসেম্বরের মধ্যে জকিগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলাকে পুরো বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা হবে। ওই আট উপজেলায় বর্তমান বিদ্যুৎ গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৫৫ হাজার। এসব উপজেলাকে শতভাগ কভারেজের আওতায় আনা গেলে নতুন আরও ৩৫-৪০ হাজার গ্রাহক সৃষ্টি হবে। সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ সূত্রে জানা গেছে, এ সমিতির আওতাভুক্ত সিলেট সদর উপজেলা আগামী নভেম্বরের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুৎ কভারেজের আওতায় আসছে। ২০১৭ সালে জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ এবং ২০১৮ সালে কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাট উপজেলা শতভাগ বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় আসবে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিদ্যুৎ লাইন মেরামতসহ আনুষঙ্গিক সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অফ বাংলাদেশ (পিজিসিবি) চারখাইয়ে গ্রিড স্টেশন বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের আওতায় গ্রিড স্টেশন নির্মাণের পাশাপাশি টাওয়ার ও ট্রান্সমিশন লাইনও নির্মাণ করা হবে। গ্রিডটি ৮০ এমবিএ ক্ষমতাসম্পন্ন। গত বছর এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, বর্তমানে কুমারগাঁও গ্রিড এবং ফেঞ্চুগঞ্জ গ্রিডের মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলে বিদ্যুৎ সঞ্চালন হয়। কুমারগাঁও গ্রিডের মাধ্যমে এ আট উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়। গ্রিডটি ওভারলোডেড হয়ে গেছে। তারা অনেক সময় ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লোড দিতে পারে না। বর্তমানে শাহজাহান উল্লাহ পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির তিনটি ইউনিট থেকে ওই আট উপজেলায় ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়। কোন কারণে এ তিন ইউনিটের একটি বিকল হলে সরবরাহ বিঘি্নত হয়। এ কারণেই নতুন গ্রিড নির্মাণ করা হচ্ছে।
আট উপজেলায় বর্তমানে ১৪টি উপকেন্দ্র চালু আছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, শতভাগ বিদ্যুতায়নের জন্য এখানে ১১টি নতুন উপকেন্দ্র ও দুটি সুইচিং কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. মাহবুবুল আলম বলেন, সমিতির আওতাভুক্ত গ্রাহকদের আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে চাই। এ কারণে সরকারিভাবে বেশ কয়েকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পগুলোর কাজ চলমান আছে।
তিনি আরও বলেন, কুমারগাঁও গ্রিড ওভারলোডেড হয়ে যাওয়ায় অনেক সময় বিদ্যুৎ সঞ্চালনে সমস্যা দেখা দেয়। চারখাই গ্রিড স্টেশন নির্মাণ করা হলে এ সমস্যা থাকবে না। সুরমা নদীর ওপর নির্মিত বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ওভারলোডেড হয়ে যাওয়ায় প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৩ কেভির একটি থার্ড সার্কিট নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যে সমিতির আওতাভুক্ত সব উপজেলায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিকল্পনা নিয়েছি আমরা।
সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর জেনারেল ম্যানেজার দিলীপ চন্দ্র সরকার বলেন, ২০১৮ সালের মধ্যে সমিতির আওতাভুক্ত সিলেট জেলার পাঁচ উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা হবে। ১৭ নভেম্বর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আনুষ্ঠানিক সিলেট সদর উপজেলা শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধায় আসার ঘোষণা দেবেন। এছাড়া অন্য উপজেলাগুলোও কভারেজের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। তিনি আরও জানান, বর্তমানে তার সমিতির আওতাভুক্ত গ্রাহক সংখ্যা ১ লাখ ২ হাজার। পুরো এলাকা বিদ্যুতায়নের আওতায় এলে আরও প্রায় ৪০ হাজার গ্রাহক যোগ হবে।