ফিরে এল পুটিয়াল ধনেশ

বাংলাদেশে তোলা পুটিয়াল ধনেশের প্রথম ছবি। পঞ্চগড় শহর থেকে গত ৫ অক্টোবর ছবিটি তুলেছেন নাজমুল হোসেনতাজমহলের পূর্ব তোরণ পেরিয়ে রাজকীয় তোরণের দিকে যেই না পা বাড়িয়েছি, অমনি পাশ দিয়ে অদ্ভুত এক জোড়া পাখিকে সামনের বটগাছটার ঘন পাতার আড়ালে হারিয়ে যেতে দেখলাম। ওড়ার ঢং দেখে চিনতে অসুবিধা হলো না। গত ১৬ সেপ্টেম্বরের ঘটনা এটি।
৬ অক্টোবর রাতে ফেসবুকে পাখিপ্রেমী নাজমুল হোসেনের (নিশাদ) একটি পোস্টে চোখ আটকে গেল—আরে, এ তো তাজমহলে দেখা সেই পাখি! একসময় ওরা এ দেশের বাসিন্দা ছিল, কিন্তু বহুদিন কোনো খোঁজ না পাওয়ায় সম্প্রতি আইইউসিএন, বাংলাদেশের পক্ষিতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। নাজমুল হোসেন জানাল, ৫ অক্টোবর ভোরে পক্ষী আলোকচিত্রী তারেক মাহমুদ ও সে পঞ্চগড় শহরে একটি পাকুড়গাছে এ পাখিটির দেখা পায়। এরপর ফিল্ডগাইড থেকে পাখিটির পরিচয় জেনে হারিয়ে যাওয়া পাখি পুনরাবিষ্কারের আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে। নাজমুল হোসেনই প্রথম এ দেশে এই পাখির ছবি তুলতে পারল।
ধূসর এই পাখি এ দেশের সাবেক আবাসিক পাখি পুটিয়াল ধনেশ (Common Grey Hornbill or Indian Grey Hornbill)। Bucerotidae গোত্রের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Ocyceros birostris।
পুটিয়াল ধনেশ লম্বায় প্রায় ৬১ সেন্টিমিটার। পুরুষের ওজন প্রায় ৩৭৫ গ্রাম। একনজরে পুরো দেহ রুপালি-ধূসর। চোখের ওপরের পালক ফ্যাকাশে ও কান-ডাকনি কালচে। পেট হালকা ধূসর। লেজের আগা সাদা এবং তাতে কালো বন্ধনী। চোখের মণি বাদামি-লাল ও চোখের পাতায় লোম থাকে। পায়ের পাতা ও নখ কালো। পুরুষের ওপরের ঠোঁট গাঢ় ও নিচের ঠোঁট হলদে। স্ত্রীর হলুদ ঠোঁটের গোড়া কালো। ওপরের ঠোঁটের বর্ধিত অংশ বা বর্ম কালো, যা অন্যান্য ধনেশ প্রজাতির তুলনায় ছোট ও চোখা। পুরুষের বর্ম স্ত্রীর তুলনায় বড়। বাচ্চাদের বর্ম নেই।
রাজশাহী বিভাগের একসময়ের আবাসিক পাখি পুটিয়াল ধনেশ বর্তমানে এ দেশে আবাসিক না অনিয়মিত, তা জানতে গবেষণার প্রয়োজন। তবে আশার কথা, ওরা হারিয়ে যায়নি এ দেশ থেকে। এরা মূলত ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের আবাসিক পাখি। শুষ্ক বন, ফলের বাগান ও কুঞ্জবনে এরা বাস করে। শহরাঞ্চলের খোঁড়লযুক্ত পুরোনো গাছসমৃদ্ধ রাজপথেও এদের দেখা যায়। হিমালয়ের পাদদেশ থেকে ১ হাজার ৪০০ মিটার উচ্চতায়ও থাকতে পারে। এরা মূলত বৃক্ষচারী। পাকা ফল ও বাসার জন্য মাটি সংগ্রহ ছাড়া সহজে মাটিতে নামে না। মূলত ফলখেকো হলেও ফুলের পাপড়ি, কীটপতঙ্গ, গিরগিটি, ইঁদুর ইত্যাদিও খায়। চেঁচামেচি আর মারামারিতে ওস্তাদ।
এপ্রিল-জুন প্রজননকাল। ডিমের রং সাদা ও সংখ্যায় এক থেকে পাঁচটি। জন্মের ১৩ দিন পর বাচ্চারা উড়তে শেখে।