সালদা নদীতে রেণু উৎপাদন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বায়েক ইউনিয়নের নয়নপুর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সালদা নদী। ভারতের ত্রিপুরা থেকে ধেয়ে আসা এই সালদায় বিলীন হয়েছে ওই এলাকার শত শত বাড়িঘর, পুকুর ও ফসলি জমি। সবার কাছে সালদা এতদিন রাক্ষুসে নদী হিসেবেই পরিচিত ছিল। এবার সেই খরস্রোতা সালদাই হয়েছে আশীর্বাদ। নয়নপুরে ঢুকে সালদা নদীতে চোখ পড়লেই দেখা যাবে নানা রঙের সারি সারি কাপড়ের তৈরি খাঁচা। এগুলোকে ঠিক কাপড়ের তৈরি বলা যাবে না। এগুলো খুব সূ জালে বোনা একেকটি ঘের। এর স্থানীয় নাম হ্যাফা। সেই হ্যাফায় মাছের ডিম থেকে রেণু উৎপন্ন করে সফলতা এসেছে এলাকার মৎস্যজীবীদের। অমর চান বর্মণ সফল হওয়া ওই মৎস্যজীবীদের একজন। তিনিই রেণু চাষে অন্যদের পথ দেখিয়েছেন। তার দেখনো পথে হেঁটেই গ্রামের প্রায় ৫০ ভাগ লোক মৎস্যজীবী হয়েছেন। অনেকে হয়েছেন স্বাবলম্বী। অমরচান রেণু মাছের চাষ করে ছেলেকে ঢাকায় একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে লেখাপড়া করাচ্ছেন। সফল মৎস্যজীবীদের কয়েক জন পেয়েছেন সরকারি সম্মাননা ও পুরস্কার। সফলতা অমরচানের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। আর্থিক অবস্থাও ভাল ছিল না। এলাকার পুকুর বর্গাচাষে ও কয়েকটি পুকুর লিজ নিয়ে মাছ চাষ করতেন। ১৯৯৫ সালে কুমিল্লা রোটারি ক্লাবের সহযোগিতায় সালদা নদীর সেই স্রোতে হ্যাফায় মাছ চাষ করে তার ভাগ্যের পরিবর্তন শুরু হয়। তার উপার্জন দিয়ে করেছেন একটি হ্যাচারি। অমরচান বর্মণের তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় ছেলে মন্টু বর্মণ বাবার সঙ্গে মাছ চাষ করেন। মেজো ছেলে সন্টু বর্মণ ঢাকার একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করছেন। ছোট ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী। দুই মেয়েকেও বিয়ে দিয়েছেন।
যেভাবে শুরু: এতদিন পুকুরে হ্যাচারি করে রেণু পোনা উৎপাদনই ছিল প্রচলিত পন্থা। ১৯৯৫ সালে অমরচান, ছিদ্দিক মিয়া নোয়াখালীর রায়পুরায় ডিম থেকে রেণু উৎপাদনের জন্য সরকারিভাবে ১৭ দিনের প্রশিক্ষণ নেন। সেখান থেকে এসে পুকুরে মাছ চাষ শুরু করেন। কিন্তু পুকুরে রেণু উৎপাদনে খরচ বেশি হওয়ায় সফলতা পাননি। অমরচানের মনে প্রশ্ন জাগে পুকুরে কৃত্রিমভাবে শ্রোত তৈরি করে রেণু উৎপাদন করা গেলে নদীর স্রোতেও সম্ভব। তাছাড়া নদীতে সব সময় স্রোত পাওয়া যায়। সেই ভাবনা থেকেই নদীতে মশারি উল্টিয়ে খোলা বাক্সের মতো করে চারটি খুঁটিতে বেঁধে দেন। আসে সাফল্য। পেয়ে যান রেণু পোনা উৎপাদনে সহজ পথ। সেই থেকে যাত্রা শুরু।
মৎস্য চাষে সফল যারা: এই পদ্ধতিতে নদীতে পোনা উৎপাদনে সফল হয়েছেন। বায়েক ইউনিয়নের নয়নপুর গ্রামের সুভাষ চন্দ্র দেবনাথ, অমর চন্দ্র বর্মণ, সিদ্দিক মিয়া, শাহ আলম গাজী, তাজুল ইসলাম, নকুল চন্দ্র বর্মণ, কমল বর্মণ, তিলক বর্মণসহ আরও অনেকে। তাদের প্রত্যেকের হ্যাচারি রয়েছে। এসব হ্যাচারি ও নদীর স্রোতে রেণু উৎপাদনসহ বিভিন্ন এলাকার কয়েকশ’ মৎস্যজীবী উপার্জনক্ষম হয়েছে।