কুটির শিল্পে আত্মনির্ভরশীল শীলমান্দির নারীরা

নরসিংদীর সদর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার গ্রাম শীলমান্দি। এ গ্রামের পুরষরা অনেকটাই কৃষির ওপর নির্ভরশীল। গ্রামের কিছু নারী গার্মেন্ট বা আশপাশের কারখানায় কাজ করলেও বেশিরভাগ বাড়িতে বসে অলস সময় কাটাতেন। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে শীলমান্দির নারীরা আত্মনির্ভরশীল হতে শুরু করেছেন। তারা আর এখন কেউ বসে নেই। কুটির শিল্পের জিনিসপত্র তৈরি করে তারা এখন বাড়তি উপার্জন করছেন; হচ্ছেন আত্মনির্ভরশীল। উপার্জিত অর্থ দিয়ে তারা ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ, নিজেদের চাহিদামতো আসবাবপত্র ক্রয় ও সংসারে সহযোগিতা করছেন।
জানা যায়, ১১ বছর আগে উপজেলার উত্তর শীলমান্দি গ্রামের সাইফুল ইসলামের মেয়ে আছমা বেগম কুটির শিল্প বিষয়ে ঢাকা থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ নিয়ে আছমা নিজ বাড়িতেই গড়ে তোলেন সোসাইটি নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হয় গ্রামের নারীদের কুটির শিল্প বিষয়ে প্রশিক্ষণ। এভাবে এখন পর্যন্ত আছমা দেড় শতাধিক নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন।
সাইফুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন মহিলা হাতে কুশিকাঁটা ও সুতা দিয়ে তৈরি করছেন শীতকালীন টুপি। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এগুলো ২৫ ডিসেম্বরের বড়দিনের অনুষ্ঠানের এক ধরনের টুপি। টুপি ছাড়াও তারা সুতা দিয়ে তৈরি করছেন আপেল, আইসক্রিম, টুপি, ডিম, মাফলার, জুব্বা, ফুলকপি, কলসি, গাজর, জুতাসহ হরেক রকমের পণ্য। ঢাকার মোর্শেদ আলম ও তার স্ত্রী সামান্তা এ কাজের জন্য সহযোগিতা করে আসছেন। গ্রামের নারীদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তারা এ সহযোগিতা করছেন। মোর্শেদ ও সামান্তাই এসব পণ্য তৈরির সব ধরনের কাঁচামাল সরবরাহ করে থাকেন। তৈরি শেষে প্রাপ্য মজুরি দিয়ে তারাই এসব পণ্য নিয়ে যান। আর এ পণ্যগুলো পিপলস চাইল্ড নামের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রফতানি করা হয়ে থাকে বলে তারা জানান।
কাজের সঙ্গে জড়িত নাজমিন, জুয়েনা, হাসিনা ও শাফিয়া জানান, তারা আগে রান্নাবান্না ছাড়া কোনো কাজ করতেন না; বাড়িতে বসে অলস সময় কাটাতেন। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তারা এখন আত্মনির্ভরশীল হয়েছেন। উপার্জিত অর্থ দিয়ে তারা ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, স্কুল-কলেজে যাতায়াত খরচ, মাঝে মধ্যে বাজার খরচেও সহযোগিতা করছেন। প্রতি সপ্তাহে একেকজন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার কাজ করতে পারেন। আগে তাদের প্রতি সপ্তাহে মজুরির টাকা পরিশোধ করা হতো, কিন্তু বর্তমানে ২ থেকে ৩ মাস পর পর এ টাকা দেয়া হয়। এতে কাজের আনন্দটা কিছু কমে যায়। কমপক্ষে ১৫ দিন পর পর তারা মজুরি দেয়ার দাবি জানান। উত্তর শীলমান্দির মতো দক্ষিণ শীলমান্দি গ্রামেও ৮ থেকে ১০ জন নারী নিয়ে কুটির শিল্পের পণ্য তৈরি করছেন নাসরিন বেগম। তারা জানালেন, এ কাজের মাধ্যমে তারা ভাগ্যটাকে পরিবর্তন করতে পেরেছেন। কাজের সঙ্গে লেগে থাকলে ভবিষ্যতে আরও উন্নতি করতে পারবেন বলে তারা জানান।